আমি বলি, তোমার কী যেনো নাম?
লোকটি বলে, আমার নাম দীন মুহাম্মদ, স্যার।
আমি বলি, তোমাকে গ্লাশ আনতে কে বলেছে?
লোকটি ভয় পায়, তার ভয় পাওয়া দেখে আমার খারাপ লাগে।
আমি বলি, আমার বিশেষ সেবা করা আমি পছন্দ করি না। আমি যা করতে বলি না আমার জন্যে তা করবে না।
লোকটি গ্লাশ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আমি খাবার দিতে বলি। আমি খেতে বসি, দীন মুহাম্মদ দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।
আমি ডাকি, দীন মুহাম্মদ।
লোকটি কাছে এসে বলে, জি, স্যার।
আমি বলি, এই ভাত মাছ মাংস ডাল শজি কে বেঁধেছে?
লোকটি বলে, আমিই রানছি, স্যার।
আমি বলি, রান্নার সময় তুমি এগুলোতে থুতু ছিটিয়ে দাও নি তো?
লোকটি ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে; বলে, নাউজুবিল্লা, কী যে কন স্যার, আমি গরিব মানুষ, আমি ইবলিশ না।
আমি বলি, আমাকে মেরে ফেলতে তোমার ইচ্ছে করে না?
লোকটি আবার নাউজুবিল্লা বলে চিৎকার করে ওঠে।
আমি খেতে থাকি, খেতে আমার ভালো লাগে;–এ-বয়সে কি আমার খেতে ভালো লাগা উচিত? দীন মুহাম্মদ যদি খাবারে থুতুও ছিটিয়ে থাকে, তাহলেও বলতে হবে তার থুতু সুস্বাদু। লোকটি কি আমার খাবারে থুতু ছিটিয়ে দিতে পারে না? থুতু ছিটোনোর সাহস হবে লোকটির? লোকটি কি আমাকে ঘেন্না করতে পারে না? আমাকে ঘেন্না করার সাহস হবে লোকটির? দুপুরে ঘুমিয়ে থাকার সময় লোকটি আমাকে দু-ভাগ করে ফেলতে পারে না? ঘুমোনোর সময় সাবধান হতে হবে, দরোজা বন্ধ করে ঘুমোতে হবে। খেতে আমার ভালো লাগছে। আবার প্রশ্নটি আমার মনে জাগছে;–এ-বয়সে কি খেতে আমার ভালো লাগা উচিত? সব কিছু মেনে খাওয়া উচিত নয়? খাসির মাংসের টুকরোটায় চর্বিটুকু জ্বলজ্বল করছে। আমার কি চর্বিটুকু খাওয়া উচিত? আমি চর্বির টুকরোটিকে মুখে তুলে দিই, ঝনাৎ করে তীব্র একটা স্বাদ আমার রক্তে ছড়িয়ে পড়ে।
আমি আরেকটি চর্বির টুকরো খুঁজতে থাকি, চামচ দিয়ে নাড়তেই একটি টুকরো জ্বলজ্বল করে ওঠে। চামচ দিয়ে টুকরোটি আমি নাড়তে থাকি, অনেকক্ষণ ধরে নাড়ি, নাড়তে আমার ভালো লাগে; আমার আর টুকরোটি খেতে ইচ্ছে করে না।
আমি বলি, দীন মুহাম্মদ, তোমার আগের ঘরের মেয়ের অবস্থা কী?
দীন মুহাম্মদ চমকে ওঠে, আমার মাইয়ার কতা আপনের মনে আছে, স্যার?
আমি বলি, হ্যাঁ, মনে আছে।
দীন মুহাম্মদ বলে, আমার মাইয়াডার ডাইন চোখে একটা পর্দা পড়ছে, স্যার।
আমি বলি, তুমি তো গরিব মানুষ?
দীন মুহাম্মদ বলে, জি, স্যার, অইত্যান্ত গরিব।
আমি বলি, গরিব মানুষের মেয়ের একটি চোখে চলে না?
দীন মুহাম্মদ বলে, স্যার, আমার মাইয়াটা বড় ভাল, ফাস্ট হইছে, স্যার।
আমি বলি, এখন কী করবে?
দীন মুহাম্মদ বলে, হাসপাতালে খবর নিছি, স্যার, দশ হাজার টাকা লাগবো; আমার অতো ট্যাকা নাই।
আমি বলি, আজ কী বার?
দীন মুহাম্মদ বলে, শুক্রবার, স্যার।
আমি বলি, আজই যাও, সোমবার সরাসরি মেয়েটিকে নিয়ে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করে দেবে। আমার কথা বললেই চলবে।
আমি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান, অথচ আজো কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করাই নি।
হালিমা বেগম টেলিফোন করেছেন
হালিমা বেগম টেলিফোন করেছেন, আনিছ ভাই, আপনে অ্যাকবারো আমারে দেকতে আইলেন না।
আমি বলি, মনে মনে আমি আপনাকে প্রতিদিনই দেখছি।
হালিমা বেগম বলেন, কিন্তু সামনে আইসা কি অ্যাকবারো আমারে দেকতে ইচ্ছা হয় না আপনের? আমি কি এমুনই পেত্নী?
আমি বলি, আপনাকে তো আমার পরীই মনে হয়।
হালিমা বেগম বলেন, আপনের পায়ে ধইর্যা আমার চুমা খাইতে ইচ্ছা হয়, আপনের লগে না আইলে আমিঅতো কাজির লগে চইল্যা যাইতাম।
আমি বলি, তখন হয়তো অন্য রকম হতো।
হালিমা বেগম বলেন, অত বড় কামেল পীরে কাজিরে বাঁচাইতে পারল না, আমারে কে বাঁচাইত?
আমি বলি, রাব্বুল আল আমিন।
হালিমা বেগম বলেন, কার কতা কইলেন বুজতে পারলাম না। এমুন কঠিন কতা কইয়েন না, আনিছ ভাই, আমি ত আসলে আছিলাম রহিম ড্রাইবরের বউ।
আমি বলি, আপনি আমার কাছে মিসেস কাজি আহমদ সালেকিন।
হালিমা বেগম বলেন, আনিছ ভাই, আপনেরে এখনই একটু আসতে হইব, একটা গোপন কথা আছে আপনের লগে। আর কারে কইতে পারতেছি না।
বিকেলে আমি মিসেস কাজির সাথে দেখা করতে যাই; দেখে আমার ভালো লাগে; আমি আবার একটু উত্তেজনা বোধ করি, এবং উত্তেজনাটুকু গোপন করে আমি পরিপূর্ণ নিষ্পাপ বোধ করি।
হালিমা বেগম বলেন, আনিছ ভাই, আপনে নিচ্চই বুজতে পারছেন কাজির মরনে আমি কষ্ট পাই নাই।
আমি বলি, তবে একথা অন্য কাউকে বলবেন না।
হালিমা বেগম বলেন, আনিছ ভাই, আছিলাম রহিম ড্রাইবরের বউ হইলাম সেকরেটারির বউ, কতাটা যে সকলকে বলন ঠিক না তা আমি বুজি; তয় সকলকে মিছা কতা কইতে কইতে আমার ঘিন্না ধইর্যা গ্যাছে, আপনেরে সইত্য কতাটা কইলাম। এখন আমার ইকটু শান্তি লাগতেছে।
আমি বলি, কী একটা গোপন কথা বলবেন বলছিলেন?
হালিমা বেগম বলেন, আপনের কাছে আর শরম কইর্যা কী হইব, আনিছ ভাই; কতাটা কইয়াই ফালাই। কাজির মাইজ্যা পোলা আমারে বিয়া করতে চায়।
আমি একবার চমকে উঠি।
হালিমা বেগম বলেন, কিন্তু কতাটা হইল সরকার আমারে একটা বাড়ি দিবো ঘোষণা করছে, কিন্তু বিয়া বইলে কি বাড়িটা আমি পামু?
আমি বলি, বোধ হয় পাবেন না।
হালিমা বেগম বলেন, আরেকটা কতা হইল আমার দুই মাসের প্যাট চলতাছে।