আমি বলি, তাতো ভাবি নি।
ডলি বলে, একলা আমার ঘুম হবে না।
আমি বলি, আমরা কি একসাথে ঘুমোবো?
ডলি হাসতে থাকে।
আমি বলি, তোমার হাসি আমার ভালো লাগছে, কিন্তু তুমি হাসছো কেনো?
ডলি বলে, আমরা তো বিয়ে করেছি।
আমি বলি, হ্যাঁ।
ডলি বলে, তোমার কি বিশ্বেস হচ্ছে আমরা বিয়ে করেছি?
আমি বলি, হ্যাঁ।
ডলি বলে, প্রথম রাতেই দু-বাসায় ঘুমোনোর জন্যে কেউ বিয়ে করে না।
আমি বলি, ঘুমোনোর কথা আমার মনে পড়ে নি।
ডলি বলে, তাহলে বিয়ে করলে কেনো?
আমি বুঝে উঠতে পারি না কেনো বিয়ে করেছি। ডলির সাথে ঘুমোনোর জন্যেও আমি কোনো ব্যগ্রতা বোধ করছি না, আমার সব কিছুই আমার কাছে খুব শীতল ও সুন্দর মনে হচ্ছে, একটি নারীকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর কোনো তীব্রতা আমার নেই; বরং আমার মনে হচ্ছিলো ডলিকে ওদের বাসায় পৌঁছে দিয়ে তাড়াতাড়ি আমি ফিরবো,–প্যান্টটি আমার এখনো ভিজে আছে, সেটি খুলে ফেলে টয়লেটে গিয়ে অনেকক্ষণ প্রস্রাব করবো,–তারপর খেয়ে কিছু একটা পড়বো, এবং এক সময় ঘুমিয়ে পড়বো। ডলি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে বিয়ে করলে একসাথে ঘুমোতে হয়, দু-বাসায় ঘুমানোর জন্যে কেউ বিয়ে করে না। গতকালও আমি ডলির সাথে ঘুমোতে পারতাম না; আমার যদি ইচ্ছে হতো, এবং আমি যদি ঘুমোতে চাইতাম, ডলি নিজেই চিৎকার করে উঠতো; তার সাথে চারপাশের বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, রাষ্ট্র চিৎকার করে উঠতো; কিন্তু আজ তার সাথে না ঘুমোলে সে কাঁদবে। শুধু কাঁদবে না, সে আমাকে ছেড়ে কোথাও থাকবেই না।
আমি বলি, তোমার কি একসাথে ঘুমোনোর ইচ্ছে হচ্ছে?
ডলি কোনো কথা বলে না।
আমি বলি, তুমি কিন্তু কথা বলছে না।
ডলি বলে, সব কথা বলতে হয় না।
আমরা দোকানগুলোর সামনের পথ দিয়ে হাঁটতে থাকি; শাড়ির প্যাকেটগুলো ডলি বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে আছে, ডলিকে খুব উষ্ণ মনে হচ্ছে। একটি সোনার দোকানের পাশ দিয়ে যেতেই আমি একবার দাঁড়াই।
ডলি বলে, থামলে কেনো?
আমি বলি, দোকানটিতে একবার ঢুকলে কেমন হয়?
ডলি বলে, না, না, এখন না।
আমি সামনের দিকে একবার পা বাড়াতেই ডলির মুখটিকে ম্লান মনে হয়; আমি আবার পিছিয়ে দোকানটিতে ঢুকি।
আমি বলি, একটি আংটি।
ডলি বলে, তাহলে দুটো আংটি।
আমরা বেরিয়ে আবার হাঁটতে থাকি; একটা অষুধের দোকান দেখে আমি থামি; ভেতরে পা দিই।
ডলি বলে, অষুধ কিনবে?
আমি দোকানিকে বলি, কয়েক প্যাকেট কনডম দিন।
ডলি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
আমি ডলিকে বলি, ডলি, পিল কিনবো?
ডলি বলে, না।
আমি হাসতে থাকি। ডলি বলে, হাসছো কেনো?
আমি বলি, পিল হচ্ছে আধুনিক নারীদের প্রধান খাদ্য, তুমি তা খেতে চাও না।
ডলি বলে, তুমি খাওয়ালে তো খাবোই।
আমি হাসতে থাকি, আর বলি, না, না দরকার নেই; আধুনিক পুরুষদের প্রধান পোশাকটিই আমি পরবো।
রিকশা নিয়ে আমরা একটি চীনে রেস্তোরাঁয় ঢুকি। ডলির মুখ দেখে আমার ভালো লাগে, ঢোকার সাথে সাথে ডলি ঝলমল করে উঠেছে। আমরা মুখোমুখি বসি; কিন্তু টেবিলটি এতো ছুটো যে মনে হয় আমরা জড়িয়ে ধরে বসে আছি।
লোকটি চলে গেলে আমি ডলিকে বলি, তোমার পা দুটি আমার দিকে বাড়িয়ে দাও তো।
ডলি প্রায় চিৎকার করে উঠে বলে, কেনো?
আমি বলি, চুমো খাবো। ডলি চমকে আরো সুন্দর হয়ে ওঠে।
ডলি বলে, রিকশায় ভেবেছিলাম তুমি জড়িয়ে ধরবে।
আমি বলি, আমার মনে পড়ে নি, চলো রিকশায় ঘুরে আসি।
ডলি হেসে ওঠে, তোমার সঙ্গে জীবনটা অন্য রকম হবে।
ডলি তার পা বাড়িয়ে দেয়, আমি পা দুটো আমার কোলে রেখে চুমো খাই।
আমরা যখন বাসায় পৌঁছি তখন বেশ রাত হয়েছে; মা, বাবা, বেলা–ছোটো বোনটি, উৎকণ্ঠিত হয়ে আছে। আজকাল দেরিতে ফিরলেই তারা সবাই খুব উদ্বিগ্ন থাকে; আমাকে কিছু বলে না, একটু বেশি রাত করে টেলিভিশন দেখে, আমি বুঝতে পারি তারা উদ্বিগ্ন। তিনজনেই একসাথে দরোজা খুলে দেয়। বাবা আর মা ডলিকে চিনতে পারে না; তারা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে ছিলো বলে বেশি অবাক হতে পারে না; বেলা ডলিকে ঠিকই চিনতে পারে, এবং এমনভাবে তাকায় যেনো কিছু খুঁজছে।
বেলা বলে, আম্মা, চিনতে পারছো? উনি দেলোয়ার ভাইর বউ।
আমি বলি, না, আমার বউ।
তারা তিনজনই একসাথে চমকে ওঠে, কিন্তু বেশি চমকাতে পারে না, বেশি রাত হয়ে গেছে বলেই হয়তো। ডলি এর মাঝেই সালামের কাজটি সম্পন্ন করেছে; মা তখনো ডলির মাথায় তার হাত ছুঁয়ে রেখেছে।
আমি বলি, আজ আমি ডলিকে বিয়ে করেছি।
তারা তিনজন একসাথে একটু বেশি নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে; তাদের কিছু বলতে বা করতে হবে তাও বুঝে উঠতে পারে না। আমি ডলিকে নিয়ে আমার ঘরের দিকে হাঁটতে থাকি; তারা আমাদের পিছে পিছে আসতে থাকে। আমার ঘরে এসে আমি বিছানায় বসি, ডলি দাঁড়িয়ে থাকে; বাবা, মা, আর বেলাও দাঁড়িয়ে থাকে।
আমি বলি, তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বসো।
বাবা বলেন, তোমাদের যেহেতু আগেই পরিচয় ছিলো, তোমরা আগেই বিয়ে করতে পারতে।
আমি বলি, আগে আমাদের পরিচয় ছিলো না।
মা কোনো কথা বলে না, বেলাও কোনো কথা বলে না।
আমি ডলিকে বলি, তুমি কি বাসায় টেলিফোন করবে?
ডলি বলে, না।
মা বলে, চলো, তোমাদের খেতে দিই।
আমি বলি, আমরা খেয়ে এসেছি।
বেলা ডলিকে জড়িয়ে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মা বলে, আমাদের আগে বলতে পারতে।
আমি বলি, আমি আগে জানতাম না।