ছার, নাবিডা বড় সোন্দর, একনম্বর মাল, লোকটি হাসে আর বলে, শোঅনের ঘরে টাঙ্গাইয়েন। আমি একটা টাঙ্গাইছি।
আমি লোকটির মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি।
ঘরে বউ থাকলে অসুবিদা অইব, লোকটি আবার হাসে।
আমি বলি, নেই।
তাইলে ত কতা নাই, লোকটি বলে, দিইনরাইত চাইয়া থাকতে পারবেন।
আমি আবার হাসি।
লোকটি বলে, নাবির নিচের দিকটা দ্যাহেন, চাইলেই পাগল অইয়া যাইতে ইচ্ছা অয়।
আমি নাভিটি নিয়ে হাঁটতে শুরু করি; নাভিটি ভয়ঙ্করভাবে নড়ে উঠছে, আমার হাত থেকে লাফিয়ে পড়ে যাচ্ছে; আমি নাভিটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে হাঁটতে থাকি, এবং তার প্রচণ্ড আন্দোলন অনুভব করি। আমি কি নাভির নিচের দিকে চেয়েছি, আমি কি পাগল হয়ে গেছি? বোধ হয় নাভিটিকে আমি ধরে রাখতে পারবো না; নাভিটি আমার বাহু ভেঙে রাস্তায় উপচে পড়তে চাচ্ছে; আমি জোরে নাভিটিকে ধরে রাখি, কিন্তু নাভিটি আমার বাহুর ভেতরে ঢেউয়ের মতো আন্দোলিত হতে থাকে। নারায়ণগঞ্জের মেয়েটি তো এমনভাবে দোলে নি; সে তো আমার বাহু ভেঙে বেরিয়ে পড়তে চায় নি;–সে বারবার চেষ্টা করছিলো যাতে আমি বোতাম খুলতে না পারি। সে আরো দশ টাকা চাচ্ছিলো; আমি তাকে আরেকটি দশ টাকা দিয়েছিলাম, তারপরও সে বোতাম খোলে নি; আমাকে খুলতে দেয় নি। এই মেয়েটির নাভির নিচে কী আছে? ভাবতে ভাবতে আমাকে পাগল হয়ে যেতে হবে? আমি একটি রিক্সা নিই, ডলিদের বাড়ির দিকে যেতে থাকি। এই নাভি নিয়ে কি আমি ডলির সামনে দাঁড়াতে পারি? ডলি আমার হাতে এটা দেখে হয়তো মনে করবে আমি তার জন্যে কোনো উপহার এনেছি; যখন বুঝবে এটা উপহার নয়, তখন হয়তো জানতে চাইবে এটা কী? আমি কি বলতে পারবো আমার হাতে একটা নাভি রয়েছে? আমি বলতে পারবো না। কিন্তু কেনো বলতে পারবো না? ডলির কাছে কি আমি একটি মহাপুরুষ হতে চাই? বাঙালি, বিশেষ করে মেয়েরা, মহত্ত্বে খুব বিশ্বাস করে; তাই পুরুষগুলো মারাত্মক মহাপুরুষ হতে চায়; প্রতিটি বাঙালি পুরুষই একেকটি অবতার। আমি পুরুষ, ডলি নারী; ডলির কাছে মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা আমার জাতিগত কর্তব্য। আমি কি ডলির কাছে অবতার হতে চাই? আমি কি চাই ডলি আমার চরিত্রের প্রশংসা করুক; আমার নির্মল চরিত্রে ডলি মুগ্ধ হোক? না, আমি তা চাই না; চরিত্রের থেকে নাভিটি আমাকে বেশি আকর্ষণ করছে। নাভিটিকে আমি রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি না।
ডলি বলে, আপনার আসতে এতো দেরি হলো।
ডলি খুব ক্লান্ত; দেলোয়ার যেদিন গাড়ি নিয়ে নদীতে পড়ে যায় সেদিনও ডলির স্বর এতো ক্লান্ত শোনায় নি।
আমি বলি, একটু বইয়ের দোকানে যেতে চেয়েছিলাম।
ডলি বলে, দেলোয়ারের জন্যেও কখনো আমি এতো অপেক্ষা করি নি।
শুনে আমার ভালো লাগে। আমি বলি, একটি ছবি কিনলাম।
ডলি বলে, আমার কথা না ভেবে আপনি ছবি কিনতে গেলেন?
আমি বলি, আপনার কথা আমি সারাক্ষণ ভেবেছি।
ডলি বলে, একেই বলে সারাক্ষণ ভাবা?
আমি বলি, আমি এভাবেই ভাবি।
ডলি আমার মুখের দিকে বরফের মতো তাকিয়ে থাকে; এতোক্ষণ ধরে কেউ আমার মুখের দিকে আগে কখনো তাকায় নি। আমার মুখের দাগগুলো নিশ্চয়ই চোখে পড়ছে ডলির; তবে মুখের দাগ সম্পর্কে আমার অস্বস্তিগুলো অনেক আগেই কেটে গেছে ব’লে আমি অস্বস্তি বোধ করি না।
আমি বলি, আপনি কি আমার মুখের দাগগুলো ভালোভাবে দেখছেন?
ডলি চমকে উঠে বলে, কী বললেন?
আমি বলি, আপনি বোধ হয় আমার মুখের দাগগুলো দেখছিলেন।
ডলি বলে, না তো; আপনার মুখে দাগ আছে না কি?
আমি বলি, অনেকগুলো ছিলো।
ডলি বলে, ওসব থাক; আপনি কী ছবি কিনলেন দেখি।
আমি সামনের নিচু টেবিলের ওপর নাভিটিকে মেলে ধরি, ডলি চিৎকার করে। উঠতে গিয়ে থেমে যায়; বসা থেকে দাঁড়াতে গিয়ে বসে পড়ে; চোখ বন্ধ করতে গিয়ে চোখ বন্ধ করতে পারে না; আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বিব্রত বোধ করি না; আমি ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকি।
ডলি বলে, আমি ভেবেছিলাম আপনি কোনো ভালো ছবি কিনেছেন।
আমি বলি, ছবিটি ভালো।
ডলি বলে, এটা আপনার কাছে ভালো ছবি?
আমি বলি, হ্যাঁ, এটা ভালো ছবি; ছবির নাভিটি।
ডলি বলে, আপনি এমন মানুষ?
আমি বলি, আপনাদের দেয়ালের ওই ছবিটির থেকে অনেক ভালো ছবি।
ডলি বলে, রবীন্দ্রনাথের ছবির থেকে এটা ভালো?
আমি বলি, হ্যাঁ।
ডলি বলে, কেনো?
আমি বলি, ওই ছবিটির দিকে তাকানো আর না তাকানো সমান।
ডলি বলে, আপনি একথা বলছেন?
আমি বলি, আর এ-ছবিটি ভরে আছে সৌন্দর্য;–অসম্ভব আগুন, ঠাণ্ডা, কোমল, রঙিন; দেখার পর কেউ আর আগের মতো থাকে না।
আমি ডলিকে অনুরোধ করি, আপনি ছবিটির দিকে আরেকবার তাকান।
ডলি আমার কথা রাখে, ছবিটির দিকে চোখ খুলে তাকায়।
আমি বলি, নাভিটি।
ডলি কোনো কথা বলে না; আমার দিকে তাকিয়ে থাকে; এমনভাবে তাকায় আমার মনে হয় আরো অনেকক্ষণ ডলি তাকিয়ে থাকুক; আমার মুখের দাগগুলো তাহলে মুছে যাবে।
আমি আবার বলি, নাভিটি।
ডলি বলে, সুন্দর, সুন্দর; তবে অশ্লীল।
আমি বলি, আপনিও তাহলে সুন্দর, সুন্দর; তবে অশ্লীল।
ডলি বলে, আমরা দুজন অপরাধ করেছি, এমন আলোচনা আমাদের সাজে না।
আমি বলি, অপরাধীরা যে-কোনো আলোচনা করতে পারে।
ডলি বলে, আপনি কি সত্যিই মনে করেন আমি অশ্লীল?
আমি বলি, জানেন, কয়েক দিন আগে আমি ফেরিঘাটে গিয়েছিলাম।