মোবাইলে একটি গভীর আর্তনাদ শুনতে পাই, যেনো একটি কবুতর হাহাকার করছে, ‘আমার হুজুর, হুজুর, হুজুর, এইটা আপনে কী করলেন? আমি বিষ খামু নি, হুজুর, আমি বিষ খামু?’
আমি বলি, ‘না, তুমি সন্ধ্যায়। তাঁতের শাড়ি প’রে আসবে।’
কণকলতা বলে, ‘হুজুর, এইটা আপনে পারলেন? অহন আমি সকালে দুইফরে বিয়ালে কি দেহুম?’
আমি বলি, ‘আল আকসা দেখবে, সেটা হবে। আরো সুন্দর।’
কণকলতা বলে, ‘এর থিকা হুজুর আমারে বলি দিতেন।’
আমি বলি, দরকার হলে তাও দেয়া যাবে।’
কণকলতা বলে, ‘তইতেও আমি এত কষ্ট পামু না অহন যেই কষ্ট পাইলাম, হুজুর, আমি ত বলি হইয়াই গেছি, আর কি বলি দিবেন আমারে?’
আমি বলি, ‘তাঁতের শাড়ির কথা মনে আছে?’
কণকলতা বলে, ‘আছে, হুজুর, সাত রকমের সাতটা কিনছি, হুজুর।’
আমি বলি, ‘এতোগুলো কেনো?’
কণকলতা বলে, ‘হুজুরের বিবি একেক দিন একেকটা পরব।’
আমি বলি, ‘তুমি অপূর্ব, কণকলতা৷’
কণকলতা বলে, ‘আমি বিবি কণকলতা।’
আমি বলি, ‘তুমি এখন কী দেখতে পাচ্ছো?’
কণকলতা বলে, ‘কিছুই দ্যাকতে পাইতেছি না, হুজুর, আমার চোক অন্দ অইয়া গ্যাছে, কিছু দেহি না।‘
আমি বলি, ‘আমি দেখছি পাখিদের রঙ, তাদের কান্না, আর মহাশূন্যতার একটি মঠ, যা আমাকে ভেদ ক’রে উঠেছে।’
জিহাদিরা আশমান জমিন কাঁপিয়ে আওয়াজ তুলছে ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’, ‘শ্যামসিদ্ধির মঠ ধ্বংস হলো, ধ্বংস হলো’, ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ’, ‘মালাউন ও দালালদের কতল করো’, ‘জালেহিদের কতল করো’, ‘মুরতাদদের কতল করো’; আমি দেখতে পাই শুনতে পাই ‘শূন্যতা, শূন্যতা’। আমি কেনো ‘শূন্যতা, শূন্যতা’ শুনছি, আমি কি সুস্থ নই?
আমাকে এখন কিছু বলতে হবে, কিন্তু বলতে আমার ইচ্ছে করছে না, আমার বলার কিছু নেই।
মোঃ আবু লাদেন এসে বলে, ‘হুজুর, আপনের বক্তৃতা সগলে হুনতে চায়।’
আমি বলি, ‘তুমি বরং বলো।’
সে বলে, ‘নাউজুবিল্লা, আমি কি বক্তৃতা দিতে পারি? আমার কতা কেও হুনব? সাগলে আপনের কতা হোনতে চায়।’
আশমান জমিন কাঁপিয়ে আওয়াজ উঠতে থাকে ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’, ‘শ্যামসিদ্ধির মঠ ধ্বংস হলো, ধ্বংস হলো’, ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ’, ‘মালাউন ও দালালদের কতল করো’, ‘জালেহিদের কতল করো’, ‘মুরতাদদের কতল করো’।
মোঃ আবু লাদেন বলে, ‘হুজুর, কিছু কন।’
আমি বলি, ‘তুমি বলো।’
মোঃ আবু লাদের বলে, ‘নাউজুবিল্লা; হুজুর আপনের পায়ে পড়ি, আপনে কিছুকন। আপনের কতা সগলে হোনতে চায়।’
আমার কিছু বলতে ইচ্ছে করে না; কিন্তু আমাকে বলতে হবে।
আমি বলি, ‘বিছমিল্লাহির রহমানের রাহিম। আলহামদুলিল্লা, জামাঈ জিহাদের ভাইয়েরা, তোমরা ইছলামের গৌরব, তোমরা জাতির পথপ্রদর্শক, তোমরা উম্মার অগ্রপথিক, আল্লার বরকত তোমাদের ওপর বর্ষিত হচ্ছে।‘
‘তোমরা ভৈরবকে ওমরপুর, শ্যামসিদ্ধিকে আলিগঞ্জে পরিণত করছে। তোমরা দেশকে পাক করেছো। আমরা স্তান চাই, সার জমিন সাদ বাদ চাই; সেদিকে তোমরা দেশকে এগিয়ে দিয়েছো, আলহামদুলিল্লা।‘
‘তোমরা মুহম্মদ বিন কাশিম, তোমরা তারিক, তোমরা ইখতিয়ারউদ্দিন বিন বকতিয়ার খিলজি। তোমাদের নাম জামাঈ জিহাদের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, আলহামদুলিল্লা। তোমরা নবযুগ নিয়ে এসেছো, আইয়ামে জাহেলিয়া এখনো দুনিয়া থেকে দূর হয় নি, জাহেলিয়ার অন্ধকারে তোমরা নতুন শাম্স্।’
আওয়াজ উঠতে থাকে, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’, ‘শ্যামসিদ্ধির মঠ ধ্বংস হলো, ধ্বংস হলো’, ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ’, ‘মালাউন ও দালালদের কতল করো’, ‘জালেহিদের কতল করো’, ‘মুরতাদদের কতল করো’।
আমি বলি, ‘কাফেরদের এই মঠ তোমরা যেভাবে ছাইয়ে পরিণত করছে, তা হবে বিশ্ব মুছলমানের আদর্শ, আলহামদুলিল্লা। এখানে উঠবে আল আকসা; দুনিয়ায় ইছলাম ছাড়া আর কোনো ধর্ম থাকবে না। ’
আওয়াজ উঠতে থাকে, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’, ‘শ্যামসিদ্ধির মঠ ধ্বংস হলো, ধ্বংস হলো’, ‘জামাঈ জিহাদে ইছলাম জিন্দাবাদ’, ‘মালাউন ও দালালদের কতল করো’, ‘জালেহিদের কতল করো’, ‘মুরতাদদের কতল করো’, ‘আল আকসা স্থাপন করো’, ‘আল্লাহু আকবর’, ‘আলি আলি জুলফিক্কার’, ‘নারায়ে তকবির’, ‘শ্যামসিদ্ধি হলো আলিগঞ্জ’।
আমি বলি, ‘এই গ্রাম আজ থেকে আলিগঞ্জ, আজ থেকে এই গ্রাম তোমাদের সকলের, আলহামদুলিল্লা, এখানে কোনো মালাউন ও দালাল থাকবে না, মুরতাদ থাকবে না; যেমন উতরিব থেকে দূর করা হয়েছিলো নাছারাদের, নতুন নাম হয়েছিলো মদিনাতুন্নবি, আজ থেকে শ্যামসিদ্ধির নাম আলিগঞ্জ।’
আমি বলি, ‘এই গ্রামের প্রতিকণা মাটি, প্ৰতিবিন্দু পানি তোমাদের, তোমরা দখল করে; প্রতিটি পাতা, প্রতিটি গাছ তোমাদের, তোমরা দখল করে; এর প্রতিটি ফল, প্রতিটি শস্যকণা তোমাদের দখল করে; এর প্রতিটি মাছ, প্রতিটি মাছের পোনা তোমাদের, তোমরা দখল করে; এই গ্রামের প্রতিটি গাভী ও বাছুর তোমাদের, দখল করে; প্রতিটি গৃহ তোমাদের, দখল করো, আলহামদুলিল্লা।’
আমি বলি, ‘দখল করা নিয়ে তোমরা নিজেদের মধ্যে কলহ করবে না, সবাই সব কিছু সমান ভাগে ভাগ করে নেবে; এই গ্রামের মাটি তোমাদের, আশমান তোমাদের, গৃহ তোমাদের, তোমরা ভোগ করো, আলহামদুলিল্লা।’