সন্ত রহমান আলি মাহমুদ হো হো ক’রে হাসে আর বলে, হাসান সাহেব মফস্বল থেকে এসেছে, সব বুঝতে তার সময় লাগবে, মফস্বলে থাকলে মানুষ চাষা হয়।
কাদের আবদুল বলে, বলুন আপনি মাহমুদ ভাই, আপনার কথা ধ্রুবতারার শিখার মতো এসে পড়ুক আমাদের এই আবর্জনার ওপর।
সন্ত রহমান আলি মাহমুদ বলে, লিটল ম্যাগাজিনের সাক্সেস নির্ভর করে দুটি ব্যাপারের ওপর; ম্যাগাজিনটি কটি কবি ক্রিয়েট করলো আর কটি তরুন কবিকে আত্মহত্যায় ইন্সপায়ার করলো, তার ওপর। আত্মহত্যার ওপরই বেশি নির্ভর করে লিটল ম্যাগাজিনের সাফল্য; আত্মহত্যা মানে সুইসাইড।
হা হা ক’রে হাসে সন্ত রহমান আলি মাহমুদ।
সন্ত রহমান আলি মাহমুদ বলে, যদি আমার ‘চর্যাপদ’ একটি কবি সৃষ্টি করতে পারে, বেশি নয় দশটি নয় বারোটি নয়, মাত্র একটি কবি, আর অন্তত একটি তরুণ কবিকে পবিত্র উজ্জ্বল অবিনশ্বর বিশুদ্ধ আত্মহত্যায় ইন্সপায়ার করতে পারে তাহলেই মনে করবো আমার ম্যাগাজিন সাক্সেসফুল। বাঙলা কবিতার ইতিহাস থেকে এর নাম কেউ বাদ দিতে পারবে না; হা হা হা হা।
সন্ত রহমান আলি মাহমুদ চারদিকে তাকায়; হাসান দেখে কয়েকটি তরুণ নির্বই নির্গ্রন্থ ছাত্র কবি খুবই অনুপ্রাণিত উদ্বেলিত হচ্ছে তার কথায়; চোখ বুজে টেনে চলছে গাঁজাভরা সিগারেটপরম্পরা, আর বলছে, কবিতা, কবিতা, আত্মহত্যা, আত্মহত্যা, অমরতা, অমরতা।
সন্ত রহমত আলি মাহমুদ বলে আমাদের বুঝতে হবে, বিংশ শতাব্দীর টুয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরির এই অভিনব কবিতার দশকে যে কবিতা লিখবে, তাকে বুঝতে হবে কবিতা। আজ আর ডিভাইন গডেজ না, কয়েক হাজার বছরের কন্টিনিউয়াস চোষাচুষিতে টানাটানিতে দেবীদের স্তন ঝুলে গেছে পচা কাঁঠালের মতো, নাভির কাছে নেমে এসেছে, বোঁটা খ’সে গেছে, থকথক করছে, ঠোঁট ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, তাতে ভনভন ক’রে মাছি বসছে, তলপেট ঢিলে গোস্তে ভ’রে গেছে, আরো নিম্নে প্ৰবাহিত হচ্ছে শুধু পৌর আবর্জনা, দেবী সিফিলিসে গনোরিয়ায় ভুগছে, কবিতা আজ বাদামতলি টানবাজারের গ্রাম থেকে আসা পনেরো বছরের টাটকা বেশ্যা, ওইটা যাকে ঘরে বসায় সে-ই কবি হয়, তরুণ কবির কাজ হচ্ছে টাটকা ভার্জিন বেশ্যাকে বলাৎকার করা।
কাদের আবদুল খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে বলে, দেবীর থেকে বেশ্যাই পরমােত্তম, তার স্তব করতে হয় না, তার দেহ আছে, স্তন আছে, ত্রিভুজ আছে, লোমে সুগন্ধ আছে, থুতুতে মাদকতা আছে, ট্রাউজার খুলে সায়া তুলে তাকে বলাৎকার করলেই চলে। আমি তাকে বলাৎকার করি, তাই আমি কবি।
একটি প্রচণ্ড উত্তেজনার ঝড় বয়ে যায় টেবিলের ওপর দিয়ে।
কাদের আবদুল তখন খুব বাহবা পাচ্ছে, এক বুড়ো তার সম্পর্কে দশ পাতার একটা প্ৰবন্ধ লিখেছেন, সেই প্ৰবন্ধটি বগলে বইয়ে বেড়াচ্ছে কাদের আবদুল; বলছে, আমি কবিতার যুবরাজ।
কাদের আবদুল এখন আধুনিকতার পরাকাষ্ঠা, সে কুকুরীর বুকে তিন চারটি স্তন দেখে বেড়াচ্ছে; কিন্তু হাসান দেখেছে তার ভেতর লুকিয়ে আছে ইসলাম; বুড়ো হ’লে এটা হাম্দ্ নাত লিখবে।
বেশ কবির মতো চেহারা, চুল, আর পোশাকও হয়েছে কাদের আবদুলের। হাসানের থেকে সে কয়েক বছরের বড়ো।
চারদিকে গাঁজাভরা সিগারেটের উৎকট কাব্যিক ধুঁয়ো, ময়লা চায়ের কাপে সিগারেটের বিষণ্ণ ক্ৰিয়মাণ ছাই।
বিভূতিভূষণ মণ্ডল এতোক্ষণ গাঁজা ভরা সিগারেট টানছিলো চােখ বন্ধ ক’রে বিলি কাটছিলো নিজের লম্বা জটিল চুলে, জটা ছাড়াচ্ছিলো টেনে টেনে, একগুচ্ছ চুলত সান এতোটা আটকে গেছে যে সহজে ছাড়াতে পারছিলো না, কিন্তু সাধনা ক’রে চলছিলো, আর মাথা নািড়ছিলো ডানে বাঁয়ে, মাঝে মাঝে থুতু ফেলছিলো।
বিভূতিভূষণ মণ্ডল এবার চিৎকার ক’রে ওঠে, মাহমুদ ভাই, কাদের ভাই, আপনেরা খুব বেশ্যা, বেশ্যা করতেছেন, বেশ্যার চিনেন কি আপনেরা, কয়টা বেশ্যার লগে শুইছেন, আমি দেড় বছর ধরে বেশ্যাবাড়িতে আছি, আমি বেশ্যারটা খাই,বেশ্যার বিছানায় শুই, আমি জানি ওইগুলিতে কোনো কবিতা নাই।
বিভূতিভূষণ মণ্ডল আবার সিগারেট পাকাতে থাকে, সবাই ভয় পেয়ে তার দিকে, বিনীতভাবে তাকায়। সে ভীতিকর, আধুনিকতাকে সে ছিঁড়ে ফেড়ে ফেলতে পারে।
বিভূতিভূষণ মণ্ডল বলে, কবিতা বেশ্যা না, বেশ্যা কবিতা না, কবিতা হইছে সমাজতন্ত্র। আধুনিকতার মুখে আমি মুতি, কবিতা হইল সমাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ছাড়া কবিতা নাই। মার্ক্স লেনিন স্ট্যালিন হইছেন পৃথিবীর শ্ৰেষ্ঠ কবি, চিরকালের শ্ৰেষ্ঠ মহাকাব্যের নাম হচ্ছে সোভিয়েট ইউনিয়ন।
বিভূতিভূষণ মণ্ডল সিগারেটে টান দিয়ে টেবিলের নিচে একদলা থুতু ফেলে। অনেকক্ষণ থুতুর দলার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সন্ত রহমত আলি মাহমুদ একটু বিব্রত হয়, নিজের কাব্যতত্ত্বকে বিস্তৃত করার তার সাহস হয় না। বিভূতিভূষণের দুটি কাব্য বেরিয়েছে, এবং সে খুবই জনপ্রিয়, ছেলেপেলেরা তার বই কিনছে, আবৃত্তি করছে; তরুণ কবিদের মধ্যে সে একনম্বরে আছে, আর সমাজতন্ত্রের ওপর কোনো কথা নেই, কোনো কাব্যতত্ত্ব নেই।
সালেহ ফরিদউদ্দিন পরিবেশটািকে একটু রূপান্তরিত করার চেষ্টা করে। সালেহ ফরিদউদ্দিন বলে, মাহমুদ ভাই, চর্যাপদ-এর আগামী সংখ্যায় আমাগো কবিতা সম্পর্কে একটা বড়ো লেখা থাকা দরকার, আমাদের প্রতিভার ক্যারেক্টারটা তাতে ধরিয়ে দেয়া দরকার, যাতে লোকজন বুঝতে পারে আমরা কি লিখতেছি, কেনো লিখতেছি, আমাদের কবিতা কিভাবে নতুন, কিভাবে অসাধারণ, কিভাবে মর্ডান (সালেহ ফরিদউদ্দিন’মডার্ন’কে ‘মর্ডান’ই বলে)।