মেঘা নেই, আমি সুখ পাচ্ছি।
মেঘা নেই, আমি বেঁচে উঠছি।
মেঘা নেই, আমি দণ্ডিত, আমি অপুরুষ, আমি কবি।
কিন্তু আমার থাকার কি অর্থ আছে?
আছে, আমি দণ্ডিত, আমি অপুরুষ, আমি কবি।
ফোন বেজে ওঠে, হাসান বলে, হ্যালো।
তার সহকারীটি বলে, স্যার, আজ কি আপনি অফিসে আসবেন?
হাসান বলে, না।
সহকারীটি বলে, স্যার, গতকালও ফোন করেছিলাম, ধরেন কি বলে মনে করেছিলাম আপনি ঢাকায় নেই।
হাসান বলে, হ্যাঁ, সম্ভবত ছিলাম না।
সহকারীটি বিস্মিত হয়, স্যার, সম্ভবত কেনো?
হাসান বলে, হ্যাঁ, সম্ভবত।
সহকারী বলে, আগামীকাল আসবেন?
হাসান বলে, আমি একটু বাইরে যাবো, কয়েক দিন আসবো না।
হাসান টেলিফোন বিচ্ছিন্ন ক’রে রাখে।
মেঝেতে ব’সে হাসান দুই উরু ফাঁক করে তার ছিন্ন শিশ্নমূলের দিকে তাকায়। শূন্যতা, তুমি মহাজাগতিক শূন্যতা; আমার দুই উরুর মাঝখানে শূন্য মহাজগত। শূন্য মহাশূন্যতাকে আমি ধ’রে আছি। দুই উরুর মধ্যস্থলে, হাসি পায় হাসানের, আমার কি এরপরও জাগবে কাম? জাগবে? এখন কী করবো আমি? আর কাম নয়, আর প্রেম নয়; আর শরীর নয়। তাহলে কী? আধ্যাত্মিকতা? প্ৰভু, প্ৰভু? আমার মাথা নত ক’রে দাও? হো হো হেসে ওঠে হাসান। আমার অপুরুষতা কি ঢেকে রাখতে হবে আলখাল্লায়? হো হো হো হো। আচ্ছা, ওই লোকটি এতো বড়ো একটি আলখাল্লায় কেনো ঢেকেছিলেন নিজেকে? অপুরুষতা লুকিয়ে রাখার জন্যে? তাঁকেও ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছিলো দানবেরা? হো হো হো হো। এর পর কী? কী এর পর? এই মহাধ্বংসের পর কী? শূন্যতা? শূন্যতা? শূন্যতা? শূন্যতা? শূন্যতা? এরপর শুধুই কবিতা। কবি আমি, দণ্ডিত, আমি অপুরুষ; কবির কোনো লিঙ্গ নেই, কবিতার লিঙ্গ নেই; কবিতা অপুরুষ, লিঙ্গহীন, অনারী, অক্লাব। হাসান ছিন্ন শিশ্নমূলের দিকে তাকিয়ে থাকে–শূন্যতা। একবার মনে হয় কে যেনো জেগে উঠছে শূন্যতার ভেতর থেকে, রাজাধিরাজ, প্রতিভাবান কবি, তার শীর্ষে জ্বলজ্বল করছে মুকুট, সিংহাসনে বসছে সে, অলিখিত অপূর্ব গ্রন্থে লিখছে কবিতা; পরমুহূর্তেই শূন্যতা। আমাকে নিয়ে এখন আমি কী করবো? কিছুই করার নেই; আমার জন্যে আর সাফল্য নেই, ব্যর্থতা নেই; আমার জন্যে কামনা নেই, নিষ্কামনা নেই। আমি কবি, অপুরুষ, আমি আছি সত্য শুধু এটুকু।
কয়েক দিন পর যখন হাসান পৃথিবীতে বেরোয় আলোর আক্রমণে সে ধর্ষিতা বালিকার মতো লজ্জা বোধ করে; তার মনে হয়। পথের প্রতিটি মানুষ, ওই পেঁপেঅলা, কুষ্ঠরোগীটা, মুদিগুলো, রিকশাটঅলাগুলো, হোমিওপ্যাথ ডাক্তারটা, এবং সবাই জানে তার শিশ্ন নেই; তাদের সবার আছে, এমনকি কুষ্ঠরোগীটোরও একটি শিশ্ন আছে, ওর বউ ঠেলছ ওর কাঠের গাড়িটা, ওর শিশ্ন আছে ব’লেই ঠেলছে, কিন্তু তার নেই। তারা যদি সবাই খলখল ক’রে হেসে ওঠে? যদি মসজিদের মাইক্রোফোনে জানিয়ে দেয়া হয় যে আমাদের পাড়ার কবি হাসান রশিদের শিশ্ন নেই, শিশ্ন ছাড়া কাউকে আমরা আমাদের পাড়ায় থাকতে দেবো না? একটি মেয়ে কলেজে যাচ্ছে হয়তো, হাসানকে দেখে একটু হাসে; হাসানের মনে হয় মেয়েটি জানে তার শিশ্ন নেই, কুষ্ঠরোগীটার শিশ্ন আছে, তাই কুষ্ঠরোগীটার গাড়িও সে একদিন ঠেলতে পারে, কিন্তু হাসানের সাথে চাও খেতে সে রাজি নয়। হাসান দুই উরুর মাঝখানে একটা প্ৰচণ্ড যন্ত্রণা বোধ করে, শিশ্নমূল চেপে তার বসে পড়তে ইচ্ছে হয়; তার মনে হয় রক্তের প্রবল স্রোত বেরিয়ে আসছে তার শিশ্নমূল দিয়ে; কিন্তু সে ব’সে পড়ে না; সে একটি ইস্কুটার ডাকে।
অফিসে গিয়ে শূন্যতার মধ্যে পড়ে হাসান, তার মনে হয় অফিস হচ্ছে শূন্যতা; এই সমস্ত অ্যাড, রঙিন আবেদন, চমকপ্ৰদ বাক্য, উদ্দীপ্ত প্রতিযোগিতা, সবই শূন্যতা। কেউ কেউ দেখা করতে পরামর্শ করতে আসে, তার মনে হয় একেকটি শূন্যতা দেখা করছে তার সাথে, শূন্যতার সাথে দেখা করছে শূন্যতা।
না, ওরা কেউ শূন্যতা নয়; আমিই শূন্যতা; ওদের শিশ্ন আছে, কারো কারোটি হয়তো উত্তেজিত।
আমি শূন্যতা; গভীর নিরর্থকতা; অপার অশেষ তাৎপর্যহীনতা।
কারো কথা শুনতে ইচ্ছে করে না হাসানের; ভাষা যে এতো নিরর্থক ধ্বনির সমষ্টি, আগে তার মনে হয় নি, এখন মনে হচ্ছে ভাষা তারই মতো শূন্যতা।
আর এই শূন্যতাকে নিয়ে খেলা ক’রে যেতে হবে আরেক শূন্যতাকে।
শূন্যতাই সঙ্গ দেবে যতো দিন বেঁচে আছো,
শূন্যতাই পূর্ণ ক’রে রাখবে তোমাকে;
অরণ্যে সবুজ হয়ে বেড়ে উঠবে শূন্যতা, শূন্যতার
অরণ্যে তুমি ঘুরবে একাকী : প্রত্যেক নিশ্বাস
ফুসফুস ভরে দেবে শূন্যতায়; শূন্যতাই পড়বে তুমি
গ্রন্থে গ্রন্থে, যা কিছু লিখবে তার প্রতিটি অক্ষরে
লেখা হবে শূন্যতা।
এর থেকে উৎকৃষ্ট নয় কি আত্মহত্যা?
আলাউদ্দিন রেহমান ফোন করে, দোস্ত, তোমারে খুব খুঁজতে আছিলাম, শোনলাম তুমি বাইরে গেছো।
হাসান বলে, হ্যাঁ।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, তুমি আছো মজায়, ডবকা প্রেমিকারে লইয়া জঙ্গলে জঙ্গলে ব্যারাইতে আছো, আমি আছি দোজখে।
হাসান জিজ্ঞেস করে, দোজখে কেনো?
আলাউদ্দিন বলে, গার্মেন্টসের একটা মাইয়ারে লইয়া শুইতাম, তুমি দ্যাখছো, মাল ভাল, এখন গোলমালে পইর্যা গেছি।
হাসান জিজ্ঞেস করে, গোলমাল কেনো?
আলাউদ্দিন বলে, প্যাট হইয়া গ্যাছে, এখন কইতাছে বিয়া করতে হইবো।
হাসান বলে, করো।