শক্তিশালী চাচা বলে, তা তুমি সময় আসলে টের পাইবা। সেই জন্যেই বলতেছি। কাজি ডেকে আইজই বিয়াটা পরাই যাই।
হাসান বলে, না।
আব্বা বলেন, মেঘা, তুই আজ আমার সঙ্গে ল, কয়দিন পর চইল্যা আসিস।
মেঘা বলে, আজ না, আব্বা, দু-এক দিন পর যাবো; আমার বইপত্রগুলো আনতে হবে।
আব্বা বলেন, তরে বাসায় না দেখলে আমার ভাল লাগে না।
মেঘা বলে, আমি যাবো, আব্বা।
শক্তিশালী চাচা বলে, আইজই তরে যাইতে হইবো, আমি আর জিনা সহ্য করুম না।
মেঘা বলে, চাচা, আপনি গুণ্ডামি করবেন না।
শক্তিশালী চাচা বলে, ভাই মনে হইতেছে মুসলমান না, ভাই জিনা মানলেও আমি মানুম না; দুইটারেই সাজা পাইতে হইবো।
মেঘা বলে, চাচা, আপনি দুটি বউ তালাক দিয়েছেন, এখনো আপনার তিনটি বউ আছে।
শক্তিশালী চালা বলে, আমি শরিয়ত মোতাবেক তালাক দিছি, আমি বিয়া করছি, জিনা করি নাই।
মেঘার আব্বা বলেন, আমার সঙ্গে, ল, মেঘা ৷
মেঘা বলে, আমি আগামীকাল আসবো, আব্বা।
পরদিন বিকেলে মেঘা তাদের বাসায় যায়; হাসান তাকে বাসার সামনের পথ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে নিজের ঘরে এসে অপেক্ষা করতে থাকে মেঘার ফোনের, কিন্তু মেঘা ফোন করে না; হাসান নিজেই ফোনের পর ফোন করতে থাকে, কিন্তু ওই দিকে ফোন নিস্তব্ধ, হয়তো নষ্ট। হাসান আর ফোন না ক’রে উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ফোনের ও মেঘার। একবার বাথরুমে গেলে হঠাৎ ফোন বেজে ওঠার শব্দ পায় সে, দৌড়ে বেরিয়ে এসে সে বুঝতে পারে ওটা ফোনের শব্দ ছিলো না, নিজের ভেতরেই বেজে উঠেছিলো। ওই শব্দ; কয়েকবার তার মনে হয় কলিংবেল বেজে উঠলো, গিয়ে দেখে কেউ নেই। সে কি বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে মেঘার জন্যে? না কি গিয়ে উঠবে মেঘাদের বাড়ি? একবার নিচে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে; তখন তার মনে হয় হয়তো ফোন করেছে মেঘা, সে ঘরে ফিরে আসে, এসেই পড়ে অসীম নিস্তব্ধ শূন্যতার মধ্যে। কটা বাজে? সাড়ে দশটা বেজে গেছে। তাহলে কি মেঘা আসবে না? আসবে না, মানে হচ্ছে তাকে আটকে রাখা হয়েছে, সে না এসেই পারে না, আটকে রাখা হয়েছে মেঘাকে; সে কি মেঘাকে আনতে চ’লে যাবে মেঘাদের বাসায়? যাবে, তবে আরো কিছুক্ষণ দেখা যাক, হয়তো এখন মেঘা পথে; সে যাবে, সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত দেখবে, তারপরই বেরিয়ে পড়বে। হাসান বোধ করে সে কাঁপছে।
একটু পরেই কলিংবেল বেজে ওঠে; দৌড়ে গিয়ে দরোজা খোলে হাসান।
মেঘা নয়, চারটি মুখোশপরা, লোক তাকে নিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে, দরোজা বন্ধ ক’রে দেয়।
হাসান জিজ্ঞেস করে, আপনারা কারা?
তারা কোনো কথা বলে না। একজন ঘুষি দিয়ে ফেলে দেয় তাকে, এবং মুখ চেপে ধ’রে টেনে হাসানকে তার ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়।
হাসান চিৎকার করার চেষ্টা করে, পারে না; নাড়ার চেষ্টা করে, পারে না।
টেনে তারা হাসানের জিন্স খুলে ফেলে, হাসান বাধা দিতে পারে না।
তিনজন হাসানকে জোরে মেঝেতে চেপে রাখে, এবং একজন একটি ধারালো ছুরিকা দিয়ে গোড়া থেকে কেটে ফেলে হাসানের শিশ্নটি।
হাসান প্রথম বুঝতে পারে না, একবার চিৎকার ক’রে ওঠে; তারা হাসানকে মেঝেতে ফেলে রেখে শিশ্নটি নিয়ে চ’লে যায়।
হাসানের একটি হাত গিয়ে পড়ে তার শিশ্নের গোড়ায়, সে তীব্র যন্ত্রণা বোধ করে; তাকিয়ে দেখে তার শিশ্নটি নেই–সে কোনো যন্ত্রণা বোধ করে না।
এটা নেই? হাসি পায় হাসানের। এটা নেই?
আমি আছি?
মেঘা, মেঘা আছে?
রক্ত করছে; হাসান উঠে টলতে টলতে ডেটলের শিশিটা নেয়, বড়ো এক মুঠো তুলো নেয়; পুরো শিশিটা ঢেলে দেয় তুলোয়, এবং শিশ্নের গোড়ায় চেপে ধ’রে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যায়।
কিন্তু তার হাত যেনো চেপে ধ’রে থাকে শিশ্নমূল।
মেঘাদের বাসায় মেঘার ঘরে তখন মেঘাকে ঘিরে আছে মেঘার শক্তিশালী চাচা ও মেঘার আব্বা; বেরোনোর চেষ্টা ক’রে ক’রে ক্লান্ত হয়ে সে বিছানার ওপর বসে আছে ছিন্নভিন্ন, ভবিষ্যৎহীন, মহাজগতে একলা, অন্ধ। অন্ধ, তবু সে দেখতে পায় একটি লোক ঘরে ঢুকলো, মেঘার শক্তিশালী চাচার হাতে কাপড়ে মোড়ানো একটি বস্তু দিলো, বেরিয়ে গেলো।
শক্তিশালী চাচা বলে, কাম ঠিক মতো হইছে?
লোকটি বলে, হইছে।
শক্তিশালী চাচা মেঘার আব্বাকে বলে, ভাইজান, আপনে বাইরে যান; আমি অর লগে কয়টা কথা কই।
মেঘার আব্বা বেরিয়ে গেলে শক্তিশালী চাচা বলে, ওই শয়তানটারে সাজা দেওয়া হইয়া গেছে, বাকি আছে তর সাজা।
মেঘা কোনো কথা বলে না।
শক্তিশালী চাচা বলে, আগামীকাইল তর গর্ভপাত করতে হইবো।
মেঘা চিৎকার করে, না, না, না।
শক্তিশালী চাচা বলে, তরেও খুন করা শরিয়তের নিয়ম, তয় তরে খুন করুম না। গর্ভপাতই হইবো তর সাজা।
মেঘা চিৎকার করে, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি হাসানের কাছে যাবো।
শক্তিশালী চাচা বলে, সেইটা আর নাই।
মেঘা ভয়ে কেঁপে তাকায় শক্তিশালী চাচার দিকে। শক্তিশালী চাচা হাসানের শিশ্নটা মেঘার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে, দ্যাখ, যেইটা দিয়া শয়তানটা জিনা করছে, সেইটা কাইট্যা লইয়া আসছি। শয়তানটা আর নাই।
মেঘা চিৎকার ক’রে বলে, না।
সে অজ্ঞান হয়ে মেঝের ওপর গড়িয়ে পড়ে।
শক্তিশালী চাচা ঘর থেকে বেরোয়, বেরিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়।
সকালে মেঘার ঘর খুলে প্রথম ঢোকেন মেঘার আম্মা; ঢুকেই চিৎকার ক’রে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সবাই দৌড়ে এসে দেখে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ঘরের একপাশে ম’রে প’ড়ে আছে মেঘা ৷
কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ – ১৬
হাসান যখন আধো আধো চোখ খুলে পৃথিবীটাকে ঘোলাটে দেখতে পায়, তখন বিকেল হয়েছে, কিন্তু সময় কী, সে কী দেখছে, কিছু দেখছে কি না সে বুঝতে পারে না; সে কি আছে, সে কি নেই, সে কি ছিলো এমন ভাবনারাশি এলোমেলো তার মাথায় ঢুকে তাকে অসহ্য সুখে বিবশ ক’রে দেয়, সে আবার রেশমি অন্ধকারে হারিয়ে যায়। অন্ধকারে হারাতে তার ভালো লাগে, মনে হয় কোমল মসৃণ গভীর অতল ছায়ার ভেতরে ডুবে যাচ্ছে সে, তার শরীর ভ’রে ছড়িয়ে পড়ছে ছায়া, দিগন্ত থেকে দিগন্তে বিকেল আর সন্ধ্যা নামছে, রাত্রি নামছে। অন্ধকারে আরো একটি রাত কেটে যায়; ভোর হয়, ভোরের আলো ঢোকে তার ঘরে, তার ভেতরেও। আমি কী দেখছি, জিজ্ঞেস করে সে নিজেকে; আমি কি দেখছি, না কি শুনতে পাচ্ছি। আমি? কোথায় আছি আমি? আমি কি আছি? কেনো আমি ছিলাম না অজস্র বর্ষ, অনন্তকাল; এখন আমি কেনো আছি? তার মনে হয়। সে জন্ম নিচ্ছে, অপার অন্ধকার তাকে প্রসব করছে ক্ষীণ আলোর মধ্যে; সে ভেঙেচুরে যাচ্ছে আলোর আক্রমণে। অন্ধকারেই তো ভালো ছিলাম; আবার কেনো, আবার কেনো? আমি কে? আমার একটি নাম ছিলো; নামটি কি এখন নেই? নামটি আমি মনে করতে পারছি না কেনো? হাসান, হাসান, হাসান; তারপর যেনো কী? রশিদ, রশিদ, রশিদ–আমি মনে করতে পারছি। নাম, তুমি মনে পড়ছে কেনো? আমি পড়ে আছি কেনো? আমি শূন্যতা বোধ করছি কেনো? কী যেনো নেই, কী যেনো নেই, কী যেনো নেই? আমার কী যেনো নেই? আমার আমিই নেই।