মেঘা বলে, আমরা ভালোবাসি, বিয়ে ছাড়াই তো আমরা ছিলাম, বিয়ে ছাড়াই থাকতে পারবো।
শক্তিশালী পুরুষটি বলে, বিয়া ছারা পুরুষমাইয়ালোক এক লগে শুইতে পারে না, জিনা আয়, তোমরা জিনা করছে।
মেঘা চিৎকার ক’রে বলে, চাচা।
হাসান বলে, আপনি উত্তেজিত হবেন না।
শক্তিশালী পুরুষটি বলে, তোমাগো দুইটারে পাথর মাইরা খুন কইর্যা ফ্যালন দরকার। তোমরা জিনা করছো।
মেঘার আব্বা বলেন, আপনারে আমরা পছন্দ করি, মেঘা যারে চায় তারে পছন্দ না ক’রে পারি না। আপনারে ভাল মানুষই মনে হচ্ছে, মেঘা আপনের সঙ্গে সুখেই থাকবো, এখনই কাজি ডেকে আনি, বিয়াটা পড়াই দেই।
হাসান বলে, বিয়েতে আমার বিশ্বাস নেই, কাজিরও দরকার নেই।
মেঘা বলে, আব্বু, বিয়ে লাগবে না, আমরা ভালোবাসি; আমাদের সন্তান হবে ভালোবাসার, আমি এখানেই থাকবো।
শক্তিশালী পুরুষটি বলে, বিয়া ছাড়া তুই থাকতে পারবি না, জিনা করতে আমি দিমু না; দুনিয়ায় ইসলাম শ্যাশ হইয়া যায় নাই; আমি দুইটারেই খুন কইর্যা ফেলুম।
মেঘা বলে, আব্বা, তোমরা যাও, আমি এখানেই থাকবো, সুখে থাকবো; আমার জন্যে চিন্তা কোরো না।
শক্তিশালী পুরুষটি বলে, তোমাগো সুখে থাকন আমি বাইর কইর্যা দিমু, জিনা করতে আমি দিমু না।
হাসান বলে, আপনি বেশি ক্ষেপে গেছেন।
চাচা বলে, আগেই ভাইরে কইছিলাম মাইয়াগুলিরে ল্যাখাপরা শিখানের কাম নাই, নাচগান শিখানের কাম নাই, মডেল বানানের কাম নাই। তাই ত মাইয়া আইজ জিনা কইর্যা বেরায়, প্যাট বানায়।
মেঘা বলে, চাচা, আপনি চুপ করুন।
শক্তিশালী পুরুষটি বলে, আমি চুপ করুম না, জিনা করতে আমি দিমু না।
হাসান বলে, আপনি আমাদের নিয়ে ভাববেন না, আমাদের জীবন আমাদের।
শক্তিশালী পুরুষটি বলে, ভাবতে আমারে হইবোই, ইসলাম আছে।
তারা বেরিয়ে যায়, মেঘা থেকে যায় হাসানের সাথে; তার বাসায়, তাদের বাসায়। যাওয়ার সময় মেঘার চাচা, শক্তিশালী পুরুষটি, হাসানের ও মেঘাম দিকে এমনভাবে তাকায় যেনো সে একটি পবিত্র জরুরি কাজ অসম্পন্ন রেখে যাচ্ছে, ওই কাজটি তাকে সম্পন্ন করতে হবে অচিরে।
হাসান বলে, মেঘা, আমাদের জীবনে বিপর্যয় শুরু হলো।
মেঘা বলে, তোমাকে আমি ভালোবাসি, আমাকে তুমি ভালোবাসো, এর পাশে কোনো বিপর্যয়ই বড়ো নয়।
হাসান বলে, তোমার চাচাকে বেশ ভয়ঙ্কর মানুষ মনে হলো।
মেঘা বলে, হ্যাঁ, দরকার হ’লে সে খুন করতে পারে।
হাসান বলে, আমি হয়তো খুন হয়ে যাবো।
মেঘা বলে, তাহলে আগে আমি খুন হবো।
ছুরিকার ছায়ার নিচে একটি দীর্ঘ নগ্ন পরস্পরভেদী আলিঙ্গনে তাদের রাত কেটে যায়।
পরদিন সন্ধ্যায় মেঘার আম্মা আসেন মেঘার দুটি বোনকে নিয়ে। একটি বোন আগের দিনও এসেছিলো, সে মুগ্ধ; নতুন বোনটিও যে এসেই মুগ্ধ হয়ে গেছে, তা বোঝা যায়। তার চোখ দেখলেই এমনকি মেঘার আম্মার চোখেও মুগ্ধতা।
মেঘা বলে, আম্মা, সব দেখে বুঝতে পারছে না আমি ভালো আছি?
আম্মা বলেন, তুই ভালো আছস তা ত দেখতেই পাইতেছি, কিন্তু নিয়ম মতো বিয়াটা হওনা দরকার।
মেঘা বলে, তার কোনো দরকার নেই।
আম্মা বলেন, জামাইরেও আমার পছন্দ হইছে, তারা খালি কাজি ডাইক্যা বিয়াটা কইর্যা নে।
মেঘা বলে, তোমার পছন্দ হয়েছে। এতেই আমি সুখী; কাজি ডাকার দরকার নেই, আম্মা।
আম্মা বলেন, দরকার আছে। দ্যাশে সমাজ আছে, ধর্ম আছে, নিয়ম আছে; তা ছাড়া আমার আরো তিনটা মাইয়া আছে, তাগো বিয়া দিতে লাগবো।
মেঘা হাসানের দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি কী বলো, বিয়ে কি করতেই হবে; কাজিকে কি ডেকেই ফেলবো?
হাসান বলে, কোনো দরকার নেই।
মেঘার আম্মা বলেন, বিয়া যদি না করো, কাবিন যদি না করো, তারপর তুমি যদি আমার মেয়েটারে ছাইরা দেও, তখন কে দেখবো?
হাসান বলে, ছেড়ে দেয়ার কথা ওঠে না; আর ছেড়ে দিলে ওই কাবিন আমাদের ধরে রাখতে পারবে না।
মেঘা বলে, আম্মা, কাবিনের দরকার নেই আমার।
আম্মা বলেন, বিয়া ছাড়া পোলাপান হইলে লোকে জাউর্যা বলবো, সমাজে তার জায়গা হইবো না।
হাসান বলে, সমাজ বদলে যাচ্ছে, আপনি ভাববেন না।
আম্মা বলেন, মেঘা, তুই আমার সঙ্গে ল, হাসান তরে বিয়া কইর্যা উঠাই লইয়া আসবো।
মেঘা বলে, না, আম্মা, আমি আজ যাবো না, পরে যাবো।
কয়েকটি দিন তারা বৈষ্ণব পদাবলির মতো। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো যাপন করে, যেখানে আছে শুধু হৃদয় যেখানে শুধু শরীর, সমাজসংসার মুছে গেছে যেখান থেকে, যেখানে শুধু থারথার ক’রে কাঁপতে থাকে অজস্র অমরাবতী। মেঘা মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলে বোনদের সাথে, বোনরা বিকেলে অল্প সময়ের জন্যে এসে বেড়িয়ে যায়; হাসানের মনে হয় পৃথিবীতে অবসান ঘটেছে সব বিপর্যয়ের।
কিন্তু এক সন্ধ্যায় আসেন মেঘার আব্বা ও শক্তিশালী চাচা।
আব্বা বলেন, আমরা আবার আসলাম, কাজি ডেকে আইজ বিয়েটা পড়াই যাইতে চাই।
হাসান বলে, তার তো কোনো দরকার নেই।
মেঘা বলে, আব্বা, আমরা এভাবেই ভালো আছি।
শক্তিশালী চাচা বলে, বিয়া ছারা তরে এইখানে থাকতে দিমু না; তাইলে দুইটারেই সাজা পাইতে হইবো।
মেঘা বলে, চাচা, আপনি গুণ্ডামি করতে আসবেন না।
শক্তিশালী চাচা বলে, ভাইজান, আপনের এই ব্যাশ্যা মাইয়াটার কথা শোনেন, আমার মাইয়া হইলে এখনই খুন কইর্যা ফেলতাম। দুইটারে এক লগে খুন কইর্যা ফেলতাম।
হাসান বলে, আপনি খুব হিংস্র মানুষ।