আলোড়ন, সমগ্র সমুদ্রের উদ্বেলন, সূর্যের ভেঙে ভেঙে পড়া।
এ-তরুণী কি আলোড়িত করছে আমাকে? হাসান নিজেকে জিজ্ঞেস করে।
না, আলোড়িত হচ্ছি না, আলোড়িত হওয়ার মতো শক্তি নেই। আমার, তরুণী আমার রক্তের ভেতর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে যেন মেঘ আকাশে; যেমন আঠারো তলায় হঠাৎ ঢুকে পড়ে প্রজাপতি।
তরুণী ধীর বাতাস, বয়ে যাচ্ছে আমার ত্বকের ভেতর দিয়ে।
তরুণী ঝরনাধারার মতো ঝরে পড়ছে আমার নগ্ন দেহের ওপর।
তরুণী অনেকটা আমার জলবায়ু, নিশ্বাস নিতে পারছি সহজে।
প্রেম? আবার প্রেম? আবার সেই গরলা? না, না, না।
অমৃত? আবার অমৃত? আবার সেই বিষকরবী? না, না, না।
আমি এক চল্লিশ। আমি বয়স্ক। আমার থেকে একুশ বছর ছোটো।
ওই তরুণী? বিশ। আবার অমৃত? আবার গরল?
একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হতে এসে তরুণীটি একদিন ঢুকে পড়ে তার কক্ষে, ভুলে নয়, খুব সচেতনভাবে, যেনো তার ভেতরে ঢোকার জন্যে। বহু দিন পর বাতাস বয়, পাথরে গজিয়ে ওঠে ঘাস; সে আর চোখ বন্ধ ক’রে অন্ধ হয়ে কোনো আদিম বৃক্ষের মূলে বসে থাকতে পারে না।
তরুণীটিকে বসতে বলতে না বলতেই ফোন বেজে ওঠে আলাউদিনের; সে বলে, দোস্ত, খবর শোনছি না, জবর খবর?
হাসান বলে, না, কোনো জবর খবর তো শুনি নি।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, রাকিব সুলতাইনাটা বউরে ডিভোর্স করছে, আবার বিয়া করছে।
হাসান বলে, রহিমা বানু না হালিমা বানু নামের মেয়েটির জন্যে?
আলাউদ্দিন বলে, হ, দোস্ত, রাকিব নিজের কাগজে রহিমার বুক আর মাজার খিধার কবিতা ছাপাইয়া তারে কবি বানাইতে আছিল আর প্রেম করতে আছিল; গতকাইল তারা বিয়া কইর্যা ফালাইছে।
হাসান বলে, রাকিবের না পাঁচ ছটি ছেলেমেয়ে আছে?
আলাউদ্দিন বলে, হ, রাকিবের কামই ত বউর প্যাট বছর ভাইর্যা ফুলাই রাখন, রহিমা বানুর প্যাটও তিন চাইর মাস ধইরা ফোলছে, বছর বছর ফোলবো।
হাসান জিজ্ঞেস করে, রাকিবের স্ত্রীর কী অবস্থা এখন?
আলাউদ্দিন বলে, তার স্ত্রী পোলাপান লইয়া বাপের বাড়ি চইল্যা গ্যাছে, বহুত মারামারি হইছে।
হাসান বলে, মানুষ যে কোনো বিয়ে করে!
আলাউদ্দিন বলে, আমিও সেইটাই ভাবি, দোস্ত তুমিই ভাল আছো, বিয়াটিয়া করো নাই, তোমার প্রব্লেম নাই।
প্ৰব্লেম! কাকে বলে? হ্যাঁ, আমার প্রব্লেম নেই, আহা, প্রব্রেম।
হাসান বলে, তুমি তো বিয়ে ক’রে ভালো আছো।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, আমিও ভাল নাই।
হাসান জিজ্ঞেস করে, কেনো?
আলাউদ্দিন বলে, আমার বউটার লগেও আমার ভাল চলতেছে না কয় বছর। ধইর্যাই, সেইজন্যেই তা তিনি মাঝেমইধ্যে দিল্লি দার্জিলিং চইল্যা যান, ভাইগ্যা ভাল কবিতা ছাইর্যা টাকা করছিলাম। আমি গার্মেন্টসের মাইয়াগুলি লইয়া থাকি, এইটাই আমি বেশি এনজয় করি। বাউরে এনজয় করার আর কিছু নাই।
হাসান বলে, মানুষের পক্ষে সম্ভবত ভালো থাকা সম্ভব নয়।
আলাউদ্দিন বলে, মানুষ কোনো কালে ভাল আছিল না, আমিও ভাল নাই, আমিও ভাল থাকুম না।
হাসান জিজ্ঞেস করে, তুমিও কি ডিভোর্সে যাবে?
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, ডিভোর্সটা আমি করতে চাই না। পোলাপানগুলির অসুবিধা হইবো, আর আমার বউটা চাকরানির কামও পাইবো না, তিনি আবার এসি ছারা ঘুমাইতে পারেন না, এসি ছারা গাড়িতে উঠতে পারেন না। বউটারে চিৎ করতে আমার ভাল্লাগে না, তয় ডিভোর্সও করতে পারুম না।
হাসান জিজ্ঞেস করে, কেনো পারবে না?
বউ চাকরানীর মত রাস্তায় হাটবো, ব্যাজার হইয়া থাকবো, মাইনষে কইবো এইটা আলাউদিনের বউ আছিলো, এইটা আমার ভাল্লাগবো না।
হাসান বলে, তুমি তোমার বউকে ভালোবাসো।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, ভালোবাসাটাসা কিছু না, তার প্যাট থিকা আমার পোলাপানিগুলি বাইর হইছে, ত, এইটা আর কি।
হাসান টেলিফোন রেখে দিলে তরুণীটি হেসে বলে, আমি খুব চমৎকার সময় এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে।
হাসান বলে, হ্যাঁ, খুবই চমৎকার সময়; যখন ভূমিকম্প হচ্ছে তখন দরোজায় প্রিয় কলিংবেলের শব্দের মতো।
তরুণী বলে, আমার নাম মেঘা, আমি মাঝেমাঝে মডেলিং করি।
হাসান বলে, চুল আর মুখ আর ঠোঁট দেখেই বুঝেছি।
মেঘা বলে, আজ এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে, আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে, আপনাকেও ভালো লাগছে।
হাসান বলে, অনুরাগিণীদের থেকে আমি আজকাল দূরে থাকি, অনুরাগে আমি ভয় পাই; চুল আর মুখ আর ঠোঁট থেকে আমি দূরে থাকতে চাই।
মেঘা বলে, আমাকে দেখে কি আপনার ভয় লাগছে?
হাসান বলে, কেমন লাগছে সেটা কি আমি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করবো?
মেঘা বলে, আমি স্পষ্টভাবেই শুনতে চাই।
হাসান বলে, অনেক দিন পর আমার অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।
মেঘা বলে, সেটা কী? হাসান বলে, তোমাকে আমার জড়িয়ে ধ’রে চুমো খেতে ইচ্ছে করছে।
মেঘা বলে, এই আমি, আমাকে জড়িয়ে ধরুন, চুমো খান।
হাসান উঠে মেঘাকে জড়িয়ে ধরে, দীর্ঘ সময় ধ’রে চুমো খায়; মেঘাও জড়িয়ে ধরে হাসানকে, চুমো খায়।
হাসান বলে, মেঘা, তোমাকে আমি জড়িয়ে ধরেছি, চুমো খেয়েছি, কিন্তু আমি তোমার প্রেমে পড়ি নি, আর হয়তো আমি প্রেমে পড়বো না।
মেঘা বলে, আমি আপনার প্রেমে পড়েছি; চুমো খেতে খেতে আমি প্রেমে পড়েছি, আমি গ’লে গেছি, আমি এমন স্বপ্নেই ছিলাম।
হাসান বলে, তোমার জীবনে আজ বিপর্যয়ের সূত্রপাত হলো; তোমার জীবন আর আগের মতো থাকবে না।
মেঘা বলে, বিপর্যয় কেনো?