আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, এখন কী করব? দ্যাশে ত ফ্যাশিবাদ শুরু হইয়া গ্যাছে, তোমারে ত বাইচ্যা থাকতে হইবো।
হাসান বলে, আমি বেঁচে থাকতে চাই, কিন্তু ওই সভায় আমি যাচ্ছি না।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, কবিল্যাখকরা সবাই যাইতেছে, দুই চাইরজন মহানায়করে লইয়া পইদ্যও লেইখ্যা ফ্যালছে, আরও হাজার হাজার পইদ্য লিখবো; অরা কায়দে আজম কায়দে মিল্লাতরে বাবা বাবা ডাইক্যা পদ্য লেইখ্যা বাঙলা ভাষার পাছা ফাটাইছে। অয়া আইউব খাঁয় বুনিয়াদি গণতন্ত্ৰ লইয়া পাগল হইছে, দাউদ আদ-মজি পাইছে; আইউব খাঁর দিকে চাইয়া ক্রীতদাসের মতন হাইস্যা প্রাইজ লাইছে। তার রেভোলেশন টেরেনে ওঠছে, আইজ আবার বিপ্লবের নাওয়ে ওঠাবো। তুমি না গ্যালে বিপদে পড়বা, সময় ভাল মনে হইতেছে না, সব সলিউশন কইরা ফ্যালবো।
হাসান চুপ ক’রে থাকে; যদি সে বোবা হয়ে যেতে পারতো!
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, লাও, বিয়ার খাইয়া আসি, বিয়ারই তোমারে বইল্যা দিবো। তুমি বাচতে চাও না মরতে চাও।
হাসান ওই সভায় যায় না; কিন্তু রাতেই শুনতে পায় শহিদালি কবিলেখকদের ধমকে, দাঁড় করিয়ে, মহানায়কের নামে শ্লোগান দিয়ে, বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের একদলে যোগ দেয়া ছাড়া কোনো পথ নেই; কবিতা উপন্যাস নাটক কিছু না, এখন সবই হচ্ছে মহানায়ক, এবং একদল। যারা গিয়েছিলো, তারা সবাই একদলে যোগ দিয়ে এসেছে; অনেকে মঞ্চে উঠে একদল ও মহানায়কের জয়গানও গেয়ে এসেছে, বলেছে মহানায়কই দেশ, রাষ্ট্র, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, তিনিই মহাকাল।
শ্যামলী ফোন করেছে, হাসান, তোমাকে অনেক দিন দেখি না; তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে, শুতে ইচ্ছে করছে।
হাসান বলে, তুমি কিছু মনে কোরো না, আমার কাউকে দেখতে ইচ্ছে করছে না, আমার অন্ধ হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
শ্যামলী বলে, শুতেও ইচ্ছে করছে না?
হাসান বলে, আমার নপুংসক হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, হয়তো হয়ে গেছি।
শ্যামলী বলে, তা তুমি কখনো হবে না, হাসান, তোমার ওটি কেটে ফেলে দিলেও তুমি পুংসক থাকবে; তোমার একটা না, বারোটা।
হাসান বলে, তোমার এমন কেনো মনে হয়?
শ্যামলী বলে, আমি তোমাকে জানি বলে; তোমার বারোটা আছে, তোমার বারোটাই আমার ভালো লাগে।
হাসান বলে, আমি চাই একটিও না থাক।
শ্যামলী বলে, সত্যিই কি আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে না?
হাসান বলে, মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
শ্যামলী বলে, আমি জানতে চেয়েছি আমাকে কি দেখতে ইচ্ছে করছে না?
হাসান বলে, মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
শ্যামলী জিজ্ঞেস করে, তোমারও একজন মা আছে?
হাসান বলে, তোমার সন্দেহ হচ্ছে কেনো?
শ্যামলী বলে, তুমি তো কোনোদিন মাবাবার কথা বলো নি। আমার বুড়ো হাজব্যান্ডটাও মা বাবার কথা ব’লে কাইন্দা জারে জার হইয়া যায়, বারবার ডান হাতে বা হাতে চোখ মোছে, তার কান্দন দেখে মনে হয় তার মা তারে দুই দিন আগে বিইয়েছে, কিন্তু তুমি তো কখনো বলো নি।
হাসান বলে, আমি তো তোমার হাজব্যান্ড নই।
শ্যামলী বলে, কেনো, আমি তো তোমাকে বলেছি তোমাকে আমি আমার হাজব্যান্ডই মনে করি।
হাসান বলে, তোমাকে ধন্যবাদ যে অন্তত তুমি ওটা মনে করো।
শ্যামলী বলে, সত্যিই বিশ্বাস করো তোমাকে আমি হাজব্যান্ডই মনে করি।
হাসান বলে, আমার খুব ভালো লাগে যে সারাদেশে শুধু আমারই একটি অবিবাহিত স্ত্রী আছে, যে অন্যের স্ত্রী কিন্তু আমাকে হাজব্যান্ড মনে করে।
শ্যামলী বলে, আমি নিজেকে সত্যিই তোমার স্ত্রী মনে করি।
হাসান বলে, সারাদেশে একমাত্র আমার স্ত্রীই অন্য পুরুষের সাথে ঘুমোয়, অন্য পুরুষের সন্তানের জননী হয়।
শ্যামলী বলে, আমার সমস্যা তো তুমি বোঝে।
হাসান বলে, তা বুঝি।
শ্যামলী বলে, তাহলে আমাকে এমন কষ্ট দাও কেনো?
হাসান বলে, আমি খুব খারাপ মানুষ ব’লে।
শ্যামলী বলে, আমার আসতে ইচ্ছে করছে, আমি কি আজি দুপুরে আসবো?
হাসান বলে, এসে কী হবে?
শ্যামলী বলে, হাজব্যান্ডকে কি আমার দেখতে ইচ্ছে করে না, তার সাথে শুতে ইচ্ছে করে না?
হাসান বলে, তারচেয়ে বরং আমিই আসি।
শ্যামলী আঁতকে উঠে বলে, না, না, ফরহাদ সাহেব এসে পড়লে বিশ্রী ঘটনা ঘটবে, জানো তো সে তোমাকে সহ্য করতে পারে না।
হাসান বলে, তাহলে তুমি এসে পড়ো, সারারাত আমার সাথে থাকবে।
শ্যামলী বলে, তুমি তো আমার সমস্যা জানো।
হাসান বলে, সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।
শ্যামলী বলে, অতো সহজ নয় জীবন, খুবই জটিল।
হাসান বলে, আমি জটিল কবিতা আর সহজ সরল জীবন পছন্দ করি।
শ্যামলী বলে, জানো, গতকাল কী হয়েছে?
হাসান জিজ্ঞেস করে, কী?
শ্যামলী বলে, ফরহাদ সাহেব আমার ওপর উপগত হ’তে চেয়েছিলো।
হাসান বলে, তাহলে নিশ্চয়ই একটি জমজমাট রাত কাটিয়েছো।
শ্যামলী বলে, না, না, আমি রাজি হই নি; তাকে ঢুকতে দিই নি।
হাসান বলে, দিলেও পারতে, তার দাবি আছে, সে তোমার বিবাহিত হাজব্যান্ড, তার কাবিন আছে, ফেরেশতারা ওই ময়লা কাবিন হাতে সারারাত তোমাকে অভিশাপ দিয়েছে।
শ্যামলী বলে, আমি দিতে পারি না; আমি তোমার প্রতি ফেইথফুল থাকতে চাই, অনেস্ট থাকতে চাই।
হাসান বলে, তোমার সতীত্বে প্রাচীন দেবতারা মুগ্ধ হবেন, সতী হিশেবে তোমার নাম দ্যুলোকে ভূলোকে কীর্তিত হবে; স্বৰ্গলোকে তোমার নাম হবে সতী শ্যামলী, বিশশতকের একমাত্র সতী।
শ্যামলী বলে, আমার সমস্যা তুমি বুঝতে চাও না।