হাসান সংবাদটি পড়ে অভিবাদন জানায় মোহাম্মদ ফজর আলিকে।
হাসান এবার আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করে যে নারীদের স্তন্য জাতীয় সম্পদ, তা নষ্ট হ’তে দেয়া যায় না। গরিব দেশে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি লিটার মাতৃদুগ্ধ; কিন্তু ওই মূল্যবান জাতীয় সম্পদ নষ্ট হ’তে দেয়া যায় না। মােহাম্মদ ফজর আলিকে হাসানের পথপ্রদর্শক ব’লে মনে হয়–আবার অভিনন্দন জানায় সে মোহাম্মদ ফজর আলিকে। জাতিসংঘ কি তাঁকে নেবে?
আহমেদ মাওলা, বিজ্ঞাপন নির্বাহী, তাকে ডেকে পাঠায় অ্যাড দুটির মেসেজ বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে।
আহমেদ মাওলা বলে, বোঝাতেই পারছেন অ্যাড দুইটা ওয়ান হান্ড্রেড অ্যান্ড এইট্টি ডিগ্রি অপজিট, একটায় আমাগো নীতিকথা শুনাইতে হইবো, কোনো মাল ব্যাচতে হইবো না, মেসেজ ব্যাচতে হইবো ফিলসফি ব্যাচতে হইবো এথিক্স ব্যাচতে হইবো মরালিটি ব্যাচতে হইবো; আরেকটায় মাল ব্যাচতে হইবো, খাঁটি মাল যা গরুর বান থিকা বাইর হয়, তা গুড়া কইর্যা ব্যাচতে হইবো, ফিলসফি মরালিটি এথিক্স কয়েক মাসেই ফুরাই যাইবো, কিন্তু মাল থাকবো। এই কথা মনে রাইখ্যা স্ক্রিপ্ট ল্যাখবেন।
হাসান বলে, দুটিকেই আমার শয়তানদের কাজ মনে হচ্ছে।
আহমেদ মাওলা বলে, আরো পয়েট ভাই, শয়তানরাই দুনিয়া চালাইতেছে, আমাগো কাম হইতেছে শয়তানগো গ্রেট গড বাগান। আইচ্ছা কইর্যা স্ক্রিপ্ট লেইখেন। কবিতা ত আইচ্ছা কইর্যাই লেখেন, দেখি এইবার স্ক্রিপ্ট লেখনের ট্যালেন্ট আছে কেমন। দুই এক দিনের মইধ্যেই লেখন শ্যাষ করতে হইবো।
হাসান দুটি অ্যাডের স্ক্রিপ্টই বিস্তৃতভাবে লিখে ফেলে। মাতৃদুগ্ধ অ্যাডের জন্যে সে দুটি ক’রে স্ক্রিপ্ট তৈরি করে–প্রিন্ট মিডিয়ার জন্যে দুটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্যে দুটি, তার বেশ মজা লাগে; আর ‘রাধিকা’র জন্যে তৈরি করে তিনটি ক’রে স্ক্রিপ্টপ্রিন্ট মিডিয়ার জন্যে তিনটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্যে তিনটি, অসাধারণ মজা লাগে তার। হাসানের মনে হয় সে নতুন ধরনের পদ্য লিখছে, শয়তানের পদ্য, মহান শয়তান ক্ষমা কোরো মোর সীমাহীন দুঃখে, যে-পদ্য সক্রিয়, সে-পদ্য কাজ করবে, যে-পদ্য বস্তু বিক্রি করবে, যে-পদ্য অর্জন করবে মহাজগতের শ্রেষ্ঠ সাফল্য–টাকা-আমর উজ্জ্বল মেধাবী প্রতিভাবান।
বেশ ভেবেচিন্তে কেটে ছিঁড়ে পাতার পর পাতা নিউজপ্রিন্ট ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে সে শিরোনাম, উপশিরোনাম, পাঠ, অডিও, ভিডিও, উপসংহার তৈরি করে। এই প্রথম সে নিউজপ্রিন্টের প্যাডে লিখছে, অদ্ভুত বস্তু মনে হয় এটাকে তার, বলপয়েন্ট আর নিউজপ্রিন্ট কাছাকাছি এলেই একটা বিস্ফোরণ একটা দুর্ঘটনা ঘটে—শুধু লিখতে আর কাটতে আর ছিঁড়তে ইচ্ছে হয়, মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত বাস্কেট, সারা পৃথিবী, ডাঁই ডাঁই ছেঁড়া নিউজপ্রিন্টে ভরে ফেলি। কিন্তু তাকে পারতে হবে; কবিদের পারতে হবে, নিজেকে সে বলে, কবি না পারলে আর কে থাকে যে পারে? তাই তাকে পারতে হবে। মাতৃদুগ্ধ অ্যাডটিতে তার ভাষার কণ্ঠ চিরসত্যের, জিহোভা ঈশ্বর হোলি ঘোস্ট উজ্জা প্রকাশ করছে। ওই পরম সত্য, ওই ধ্রুব সত্য থেকে স’রে গেলে ধ্বংস হয়ে যাবে। সব কিছু, মরুভূমিতে পরিণত হবে মহাসমুদ্র, চানসুরুজ আর দশ আসমান মাটিতে নেমে আসবে, আর ‘রাধিকা’য় তার ভাষার স্বর উদ্দীপক উষ্ণ সুস্বাদু পুষ্টিকর, শিশুরা রাধিকার বাঁট ধ’রে ঝুলে থাকবে বছরের পর বছর।
তার স্ক্রিপ্ট প’ড়ে আহমেদ মাওলা ছুটে আসে তার ডেস্কে। চমৎকার, যাকে বলে মাইডিয়ার, মানুষ আহমেদ মাওলা।
আহমেদ মাওলা খুশিতে ফেটে পড়ে বলে, আরো পয়েট ভাই, দারুণ স্ক্রিপ্ট ল্যাখছেন আপনে, দুইটাই হিট হইবো, সুপারহিট; এখন আমার মাথা ঘোরছে স্ক্রিপ্ট বাছাই করতে গিয়া, কোনটা থুইয়া কোনটা রাখি। মনে করছিলাম পয়েট দিয়া ব্যাচাকেনা হইবো না, এখন দেখছি পয়েট ছাড়া কাম হইবো না।
হাসান বিব্রত হয়ে বলে, আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম, এখনো আমার মনে হচ্ছে হয়তো কিছুই হয় নি। এগুলো কবিতা হ’লে আমি ছিঁড়ে ফেলে দিতাম।
আহমেদ মাওলা বলে, স্ক্রিপ্ট পাওয়ার পর আমার সাতদিন ঘষাঘষি করতে হয়, আর এই স্ক্রিপ্ট লইয়া কাইলই কামে নামতে পারি। স্পন্সরগো লগে কথা বইল্যা ঠিক করতে হইবো কোন স্ক্রিপ্টটারে রাখুম কোনটারে ছারুম।
হাসান বলে, আমাকেও ডাকবেন, কীভাবে আপনারা কাজ করেন দেখবো।
আহমেদ মাওলা জিজ্ঞেস করে, ভিডিওর সময় থাকতে চান নি?
হাসান বলে, হ্যাঁ, ওটা এখনো আমার কাছে বিস্ময়।
আহমেদ মাওলা বলেন, বোঝতে পারছি মাইয়া দ্যাখতে চান, তা মাঝেমইধ্যে দাখন ভাল; তাতে স্ক্রিপ্টও ভাল হইবো, মডেলগুলিরেও একটু লাড়াচাড়া করা যাইবাে। দুইটা খুব ডগমইগ্যা সেক্সি মডেল লাগবাে। মাতৃদুগ্ধের মাটারে হইতে হইবাে মধুবালার মতন সেক্সি, মা সেক্সি না হইলে পোলাপান মার দুধ খাইতে চাইবো ক্যান? বুকের দুধ খাওয়াতে হইলে মাগুলিরে সেক্সি হইতেই হইবো। আর হইবো বুক ভরা মধু বঙ্গের বধু। এমুনভাবে ক্যামেরা চালাইতে হইবো যে পোলাপান ক্যান বাপোরাও দুধ খাইতে চাইবো।
হাসান বলে, তাহলে আমি পুরোপুরি ব্যর্থ হই নি? কবিরাও পারে?
আহমেদ মাওলা বলেন, যা স্ক্রিপ্টট ল্যাখছেন তার জাইন্যে আপনেরে প্রাইজ দিমু, একটা মিল্কি মডেলের গে এক সন্ধ্যা ছাইর্যা দিমু। অইটা ঠিক রাধিকার অস্ট্রেলিয়ান গাভীটার মতন, যত ইচ্ছা ওলানা থিকা দুধ খাইবেন।