তাহলে শুধু শিশুদেরই পান করাতে হবে মাতৃদুগ্ধ?
কিন্তু কেনাে শুধু শিশুদেরই পান করাতে হবে মাতৃদুগ্ধ?
হাসান একবার চোখ বুজে দেশ জুড়ে গোয়ালঘর দেখতে পায়, তাতে রাশিরাশি দুগ্ধবতী গাভী দেখতে পায়, তাদের বাঁট ফেটে পড়তে চাচ্ছে। পরমুহূর্তে সে রাশিরাশি দুগ্ধবতী মাতাদের দেখতে পায়, তাদের বাঁট ফেটে পড়তে চাচ্ছে। মাতাদের জন্যে অমন গোয়ালঘর দরকার।
মাতৃদুগ্ধ বিশ্বের সম্পদ, তার এক ফোঁটাও নষ্ট করা চলবে না, এর প্রতি ফোঁটা সম্মিলিতভাবে চুষে খেতে হবে; ফুরিয়ে আসছে গরিব বিশ্বের সম্পদ, নিশ্চিত করতে হবে তার সম্পদের চূড়ান্ত ব্যবহার।
সে মাতৃদুগ্ধ পান করাবে সবাইকে, দারোগা থেকে জেনারেল সবাইকে।
মাতৃদুগ্ধের কোনাে বিকল্প নেই, এর পুষ্টিকরতার সীমা নেই।
এটা বিনিয়োগের শতাব্দী, মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানাে হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।
এটা এক আশ্চর্য ঔষধ। এতে সারাক্ষণ লাফালাফি দৌড়োদৌড়ি কুচকাওয়াজ গোলাগুলি করছে এমন এক জীবন্ত কোষ, যা দেশরক্ষী বাহিনীর মতোই অতন্দ্র–এটা কোনো বিদেশি বাহিনীকে ঢুকতে দেয় না ত্রিসীমার মধ্যে; এটা খেলে ঘনঘন হাণ্ড হয় না, বাতাসের নালি জ্বালাপোড়া ক’রে না, দাঁতগণ আর মাঢ়ি হিমালয়ের পাথরের মতো শক্ত থাকে, মাথাটা মগজটা থাকে ঝকঝকে, যে খাবে সে নিউটন আইনস্টাইন রবীন্দ্রনাথ না হয়ে যাবে না।
বেশি ক’রে মাতৃদুগ্ধ খাও, জাতিসংঘ ব’লে দিয়েছে খাও, মাতৃদুগ্ধ খাও, এমন বিনিয়োগ আর হয় না।
হাসান দেশের প্রধান নারীবাদীটির সাথে একটু কথা বলতে চায়। ইচ্ছে করে এখনি তাকে ফোন করে; তবে ফোন না ক’রে মনে মনে ফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে থাকে। এর নাম সে দেয় মানসিক সাক্ষাৎকার।
হাসান জিজ্ঞেস করে, একটু বলুন তো মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা কী?
এভাবে প্রশ্ন করা কি ঠিক হলো বিখ্যাত নারীবাদীকে?
সে ভাষা বদলে আবার জিজ্ঞেস করে, দয়া ক’রে মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা কী সে-সম্পর্কে আপনার মতামত জানালে খুশি হবো।
নারীবাদী হা হা হা হা হা হা ক’রে হেসে উঠে বলেন, জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলটির প্রতিদিন এক লিটার মাতৃদুগ্ধ খাওয়া উচিত, তাহলে তার মাথা সুস্থ থাকবে, পাগলামো করবে না।
হাসান জিজ্ঞেস করে, আপনি কি তাহলে মাতৃদুগ্ধ খাওয়া বা খাওয়ানাে পছন্দ করেন না?
নারীবাদী হা হা হা ক’রে বলেন, ওরা মনে করে নারীরা দুগ্ধবতী গাভী, নারীদের ওলানের দিকে এবার ওদের চোখ পড়েছে, আগামী বছর হয়তো ওরা উন্নত জাতের দুগ্ধবতী নারী উৎপাদনের জন্যে উন্নত মানের গোয়ালঘর বানানোর পরিকল্পনা নেবে, নারীদের উন্নত মানের ফিড দেবে, যাতে দেশে বেশি পরিমাণে নারীদুগ্ধ মাতৃদুগ্ধ উৎপাদিত হয়।
হাসান জিজ্ঞেস করে, মাতৃদুগ্ধ থেকে কি আমরা আমাদের অতি প্রয়ােজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো?
নারীবাদী বলেন, হ্যাঁ, তা খুবই পারা যাবে। বছরে যদি আমরা কয়েক কোটি লিটার মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনা করি, তাহলে তা পলিথিনের ব্যাগে ভ’রে বেচা যাবে, ওই দুগ্ধ থেকে বাটার চিজ ঘি কন্ডেন্স্ড্ মিল্ক আইস ক্রিম উৎপাদন করা যাবে, হা হা হা, হা, বিদেশে রপ্তানি করা যাবে, তখন নিজেরা অবশ্য খেতে পাবো না।
হাসান বলে, আপনার কথা বেশ নেগেটিভ ব’লে মনে হচ্ছে।
নারীবাদী বলেন, কোথায় নেগেটিভ? আমি তো খুবই পজিটিভ কথা বলছি। ব্যাপারটি হচ্ছে ওরা নারীদের ঘরে আটকে রাখার নতুন নতুন ফর্মুলা বের করছে। ওরা নারীর মগজ চায় না ওলান চায়, মেধা চায় না দুগ্ধ চায়, আর নারীর ঐতিহাসিক দেহখানা তো আছেই। মাতৃদুগ্ধ পান করানো হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে নতুন সুন্দর ফর্মুলা নতুন নতুন চক্রান্ত।
হাসান জিজ্ঞেস করে, মাতৃদুগ্ধ পানে কি কোনােই উপকার হয় না?
নারীবাদী বলেন, দেশে কোটি কোটি বাচ্চা মায়ের দুধ খাচ্ছে, তাতে কি তাদের স্বাস্থ্য মেধা অতুলনীয় হচ্ছে? আর মায়ের দুধে প্রতিভা? মায়ের দুধে নৈতিকতা? রবীন্দ্রনাথ তো মায়ের দুধ না খেয়েই প্রতিভাবান হয়েছেন, আর বস্তির বাচ্চাগুলো মায়ের দুধ খেতে খেতে ম’রে যাচ্ছে। ওই দারোগা পুলিশ মাস্তানগুলো তো মায়ের দুধ খেয়েছে, ওই জেনারেলগুলোও মায়ের দুধ খেয়েছিলো। তাতে কি তারা নৈতিক হয়েছে? হা হা হা হা।
হাসান জিজ্ঞেস করে, বুড়োদের মাতৃদুগ্ধ খাওয়ালে উপকার হ’তে পারে?
নারীবাদী বলে, হ্যাঁ ওই বদমাশ বুড়োগুলোকে মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানাে দরকার; তাহলে হয়তো বদমাশি কিছুটা কমবে।
হাসান নারীবাদীটির সাথে কথা বন্ধ ক’রে তার সামনের একগুচ্ছ দৈনিক পত্রিকার একটির পাতা উল্টোতে শুরু করে; দ্বিতীয় পাতায় একটি সংবাদ তাকে যারপরনাই স্বস্তি দেয়। বাক্স ক’রে সংবাদটি ছাপা হয়েছে, যার শিরোনাম ‘স্ত্রীর স্তন্য পান ক’রে বেঁচে আছেন মোহাম্মদ ফজর আলি’। সংবাদে বলা হয়েছে মোহাম্মদ ফজর আলি বছর বছর বিয়ে ক’রে চলছেন, তার ঘরে সব সময়ই কমপক্ষে একটি ক’রে গর্ভবতী স্ত্রী থাকে, এবং থাকে একটি নতুন সন্তানবতী স্ত্রী। মোহাম্মদ ফজর আলি তাঁর শিশু সন্তানকে মায়ের স্তন্য পান করতে দেন না, তিনি নিজেই স্ত্রীকে চেপে ধ’রে সকাল দুপুর বিকেলে রাতে চারবেলা স্ত্রীর দুগ্ধ পান করেন। স্ত্রীর পুষ্টিকর দুগ্ধ পান না করলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার গর্দান সরু হয়ে যায়; তাই এই কাজ তিনি ক’রে আসছেন তিরিশ বছর ধ’রে। এবার তিনি গোলমালে পড়েছেন, তিনি নতুন বিউটির স্তন্য পান করতে গেলে বউটি তাকে বাধা দেয়, তিনি জোর ক’রে তিন মাস ধরে স্ত্রীর স্তন্য পান করেন, শিশু কন্যাটিকে স্তন্য পান করতে দেন না। মোহাম্মদ ফজর আলি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠলেও শিশুটি দিন দিন রোগাপটকা হয়ে পড়তে থাকে। স্বামীর স্তন্যপাননেশা বন্ধ করতে না পেরে অবশেষে বউটি গিয়ে থানায় মামলা দায়ের করে; এবং নীতিপরায়ণ পুলিশ ফজর আলিকে গ্রেফতার করে।