সে কি এমন সেক্সি কবিতা লিখতে পেরেছে আজো? ছবির এই তরুণীটিকে কি কবিতায় রূপান্তরিত করা সম্ভব?
আমি অ্যাড হয়ে গেলাম, কবিতা আমাকে ক্ষমা কোরো। সে মনে মনে বলে।
কিন্তু তোমার আমার মধ্যে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। সে মনে মনে বলে।
আমি অ্যাডকে কবিতা ক’রে তুলবো, কিন্তু কবিতা, তোমাকে অ্যাড করবো না। তুমি অ্যাড নও, সেক্স নও, তুমি লোকোত্তর শিল্পকলা। সে মনে মনে বলে।
সামনের দিকে তাকিয়ে আবার সে তরুণীকে দেখে।
তুমি সুন্দর, কিন্তু তুমি কবিতা নও, তুমি আশ্চর্য শরীর, তুমি বিস্ময়কর টাকা। সে মনে মনে বলে। তুমি শাশ্বত পণ্য, তুমি এই সময়ের উর্বশী।
উর্বশী হাসানকে জিজ্ঞেস করছে, আমাকে কি তুমি ঘৃণা করছাে?
একটা অপরাধবোধ তার রক্তের ভেতর ঢুকে যায়, সে ক্ষমা চায়।
না, তোমাকে ঘৃণা করছি না, তুমি সুন্দর, তোমাকে ঘৃণা করি না; ঘৃণা করার আমার অধিকার নেই, তুমি সুন্দর।
আমি কি বেশ্যা? আমাকে কি বেশ্য মনে করছে তুমি?
বেশ্যা কাকে বলে? কেউ বেশ্যা নয়, বা সবাই বেশ্যা। আসলে বেশ্যা কাকে বলে আমি জানি না।
অ্যাড কী, তুমি কি জানো হাসান?
অ্যাড হচ্ছে নিরন্তর বেচা বেচা বেচা, অবিনাশী টাকা টাকা টাকা।
অ্যাড আর কী হাসান?
অ্যাড হচ্ছে আধামিনিটের জন্যে অমরতা দান, বিশ্ববিখ্যাত করা।
এখন কি সবাই বিশ্ববিখ্যাত?
এই অসামান্য সময়ে প্রত্যেকের নিয়তি অন্তত আধামিনিটের জন্যে বিশ্ববিখ্যাত হওয়া। বিখ্যাত না হয়ে আর উপায় নেই, বিখ্যাত না হয়ে আমাদের মৃত্যু নেই।
আাধামিনিট বিখ্যাত হওয়ার জন্যে দণ্ডিত আমরা।
আমি তোমার থেকে বিখ্যাত, রাস্তায় তোমাকে কেউ চেনে না, তোমাকে দেখে কেউ রিকশা থেকে লাফিয়ে নামার উত্তেজনা বোধ করে না, আমাকে দেখে করে; আমি সাবানের অ্যাড ছিলাম, এখন আমি রাস্তায় বেরোতে পারি না।
সবাই তোমার পায়ে পড়তে চায়?
না, সবাই আমাকে রেস্টহাউজে মোটেলে নিতে চায়, অন্তত একরাতের জন্যে পুলক অনুভব করতে চায়, এক রাত এক রাত।
তুমি একরাতের বিলোল হিল্লোল উর্বশী?
আমরা এখন সবাই একরাতের উর্বশী, সবাই আধামিনিটের সেলিব্রেটি।
তুমি কি বাস্তব, তুমি কি বাস্তবতা, হে তরুণী?
না, আমি বাস্তব নাই, আমি ফ্যান্টাসি। এটা বাস্তবতার কাল নয়, এখন কেউ বাস্তবতা সহ্য করে না, এখন সব কিছু ভেঙেচুরে ফ্যান্টাসি তৈরি করতে হয়, এটা ফ্যান্টাসির যুগ। আমি ফ্যান্টাসির কন্যা।
হাসান তরুণীটির সাথে কথা বন্ধ ক’রে একটি সিগারেট ধরায়।
আমি যতো দিন এখানে আছি তুমি আমার সামনে থাকবে, হাসান মনে মনে বলে, তাহলে আমি পারবো।
দেয়ালে আমরা কেউ বেশি দিন থাকি না, আমাকে সরিয়ে অন্য কেউ আসবে। প্রতিদিন আমার জন্ম হচ্ছে, প্রতিদিন আমি নতুন তরুণী হয়ে দেয়ালে আসি।
একটি পংক্তি জলের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। হাসানের মাথায়। সে কি এখনই ওটাকে কবিতা বানাতে বসবে, কাটতে ছিড়তে থাকবে? সে কি রামপ্রসাদা? হিশেবের খাতায় লিখবে শ্যামা কালির স্তব? না, এখন আর কেউ কালি নেই, সবাই রঙিনা; সে পংক্তিটিকে মাথার ভেতর রেখে দেয়, তুমি আমার মাথার ভেতর থাকো, পংক্তি, এটা অ্যাডের টেবিল, এখানে আমি তোমাকে নিয়ে খেলতে পারি না। এখানে আমার অন্য দেবীর স্তব লিখতে হবে, যার নাম স্ক্রিপ্ট, কবিতা নয়।
দুটি অ্যাডের স্ক্রিপ্ট লেখার দায়িত্ব পরের দিনই লাফিয়ে পড়ে হাসানের ওপর।
অ্যাড ১ : মাতৃদুগ্ধের গুণকীর্তন ক’রে অ্যাড লিখতে হবে, চােখে খোঁচা দিয়ে দেখাতে হবে মাতৃদুগ্ধের কোনাে বিকল্প নেই।
অ্যাড ২: ‘রাধিকা’ নামের একটি অস্ট্রেলীয় গুঁড়োদুধের অ্যাড লিখতে হবে, চোখে মায়াজাল ছড়িয়ে দেখাতে হবে এটা মাতৃদুগ্ধের থেকেও পুষ্টিকর, আর মায়ের দুধ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রাধিকার ধারা অফুরন্ত।
অ্যাড দুটির বৈপরীত্যে মুগ্ধ হয়। হাসান, সুখীও বোধ করে; এটা তার কবিতার মতোই, সে তো কবিতায় ভয়াবহ বৈপরীত্যকেই বিন্যস্ত ক’রে দিতে পছন্দ করে। সে কি অগ্নিগিরি। আর অশ্রুবিন্দুকে পাশাপাশি বসায় না? তার ওপর এই বৈপরীত্য এসে কি পড়লো সে-জন্যেই?
প্রথম অ্যাডটা সরকারি, জাতিসংঘফংঘ হয়তো বিশ্বমায়েদের ঝোলা স্তনের দিকে তাকিয়েছে। দয়া ক’রে, ফোলা স্তন দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, এবং বিশ্বের কোনো সম্পদকেই নষ্ট হ’তে দেবে না ব’লে মায়ের দুধের গুণকীর্তনের শ্লোগান তৈরি ক’রে ফেলেছে।
হাসানকে তার অ্যাড লিখতে হবে। বেশ, সে লিখবে।
দ্বিতীয়টা প্রাইভেট; ‘রাধিকা’র পিতৃপুরুষেরা মায়ের স্তনকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের পুষ্টিকর খাদ্য মনে করে, শিশুর নয়, শিশুকালের স্তন নিয়ে টানাটানি ইত্যাদিতে কোমলমতি শিশুদের চরিত্র নষ্ট হয়ে যেতে পারে, দুধ খাওয়া ছেড়ে চোষাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, যা জাতির জন্যে শুভ নয়; তাছাড়া মায়ের দুধ বিনে পয়সায় পাওয়া যায়, কিন্তু বিনে পয়সার জিনিশে বিশ্ব চললে বিশ্ব চলতো না। ব্যবসা থেমে যেতো, ধস নামতো বাজারে। অন্য দিকে মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন ব্যয়বহুল, আধলিটার মাতৃদুগ্ধের পেছনে খরচ হয়, একশো টাকা, সেখানে এক লিটার রাধিকা পাওয়া যায় পাঁচ টাকায়।
হাসানকে তার অ্যাড লিখতে হবে। বেশ, সে লিখবে।
প্রথম অ্যাডটি নিয়েই প্রথম বসে হাসান, সে মাতৃদুগ্ধ পান করাবে সবাইকে। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মহাপতি উপপতি অতিপতি যুগপতি বিচারপতি আমলা মামলা অধ্যাপক পুলিশক এনজিওক গার্মেন্টস্ক ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টক ধর্ষক ধৰ্মক কৰ্মক চর্মক সবাইকে। মাতৃদুগ্ধ পান ক’রে তারা সুস্থ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠবে, তাদের অকল বিকল মাথাগুলো ঠিকভাবে কাজ করবে, রাস্তাঘাট ধানক্ষেত পাটক্ষেতে তার বিকাশ দেখা যাবে। ওহ, তারা এখন আর মাতৃদুগ্ধ পান করে না? ওই দুধের গন্ধে তাদের বমি আসে? তারা স্তন্য পান করতে পছন্দ করে না? তারা পছন্দ করে শুধু স্তন পান করতে? মায়ের না, অন্য কারো?