হাসান বলে, আমার মনে হয়। আমি কোনো কাজেরই উপযুক্ত নই, অ্যাড পারবো কি না আমি জানি না। আমাকে ভাবতে হবে।
পাত্রটি শেষ ক’রে নিজের ও হাসানের জন্যে আরো দুটি ফরাশি ওয়াইনের আদেশ দেন আলাউদ্দিন।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, তুমি পারবা, তোমার কবিতায় দুইটা কোয়ালিটি আছে, একটা হইছে গোপনে বালির ভিতর দিয়া বিসুভিয়াসের লাভার মতন বইয়াচলা ভাইওলেন্ট সেক্স, মনে হয় সাওতালগো মতন আকাশ ফাটাইয়া নাচতেছে, আর শরিলের রগ ছিররা ফেলনের মতন ফ্যান্টাসি; গদ্যও তুমি ল্যাখতে পারো, আমাগো মডার্নিজমের টিচার ব্লু ব-র থিকাও অ্যাট্রাক্টিভ। দোস্ত, বাঙালি মুসলমান আইজও গদ্য ল্যাখতে শিখে নাই।
হাসানের খুব সুখ লাগে আলাউদিনের কথা শুনে; তাহলে তার কবিতা, তার গদ্য, এবং তাকেও কেউ কেউ বুঝতে পারছে।
হাসান বলে, সেক্স হচ্ছে প্রতিভার রক্তধারা, নদীর স্রোতের সাথেও এটা বয়ে চলে মেঘেও বয়ে চলে, গীতাঞ্জলি আর নভোযান সেক্স থেকেই জন্মেছে; বাঙালি মুসলমান শোয়া বোঝে, সেক্স বোঝে না কাম বোঝে না; তাই ওরা এখনো হাম্দ্ নাত চায়, ওরা কখনো ‘শাশ্বতী’ আর ‘অবসরের গান’ লিখতে পারবে না।
আলাউদ্দিন বলে, আমরা অ্যাডআলারা এইটা বুজছি; অ্যাডে কোনো হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইহুদি ক্যাথলিক প্রোসেস্ট্যান্ট নাই, অ্যাডের একটাই ধর্ম–ব্যাচো ব্যাচো ব্যাচো, সব ব্যাইচা দেও, গাড়ি ব্যাচো শাড়ি ব্যাচো লাভারের পাছা ব্যাচো আকাশ ব্যাচো বাতাস ব্যাচো। তয় মানুষ আইজকাল জিনিশ কিনতে চায় না, চায় সেক্স কিনতে; সেইজন্য আমরা জামাকাপড় গাড়িবাড়ি ফ্রিজ টেলিভিশন কম্পিউটার টুথপেস্ট সেন্ট পাউডার আলকাতরা বেচি না, বেচি সেক্স; সেক্স ছাড়া আর কিছুর দাম নাই। সেক্স ইজ অলপাওয়ারফুল, অমনিপোটেন্ট; সেক্সে ফুল ফোটে, সেক্সে পাজেরো ঘণ্টায় একশো মাইল দৌরায়; সেক্সে ভোটের বাক্সে ভোট পরে। তোমার কবিতা যে আমি লাইক করি, তার একটা কারণ অই দুর্দান্ত সেক্স।
হাসান বলে, আমার ভালো লাগছে যে তুমি আমার কবিতার ভেতরটা বুঝতে পেরেছে; তবে আমি কিন্তু অন্যদের মতো নারীর কয়েকটি বাঁক নিয়ে মাতামাতি করি না, কথায় কথায় স্তন যোনি উরু, সঙ্গম উচ্চারণ করি না।
আলাউদ্দিন বলে, এইখানেই ত তোমার প্রতিভা; তুমি অইসব উচানিচা জায়গাগুলি নিয়া ডলাড্লি চাপাচাপি খোদাখুদি কর না, কিন্তু সব কিছুর ভিতর ভিতর কাম ঢুকাইয়া দেও গোপন রাঙা লাভার মতন, তাতে আসমান ফাইট্যা পরতে চায় জমিন ফাক হইয়া যায়। অ্যাডেও তোমার তাই করতে হইবো। হুন্ডার ভিতরে তোমার কাম ঢুকাই দিতে হইবো, সাবানের মইধ্যে সেক্স ঢুকাই দিতে হইবো, ব্যাটারির মইধ্যে সেক্স ভইরা দিতে হইবো। আইজাকাইল ত্যালে হুন্ডা পাজেরো টয়োটা চলে না, চলে সেক্সে; সাবানে কাপড় সাফ হয় না, সাফ হয় সেক্সে; ইলেকট্রসিটিতে লাইট জ্বলে না, জ্বলে সেক্সে। সেক্সই হইল আইজাকাইলাকার অ্যাটমিক এনার্জি। দোস্ত, লাভার মতন সেক্সি অ্যাড লেখতে হইবো তোমারে; তুমি পারবা, আমি বইল্যা দিলাম কবিতায় তুমি শাইন করবা, অ্যাডেও শাইন করবা।
হাসান বলে, আমি তো শাইন করতে চাই না, নিজেকে আমি ধ্বংস করতে চাই কবিতার জন্যে।
আলাউদ্দিন বলে, তুমি দোস্ত অ্যান্ডের লিগাও নিজেরে কিছুটা ধ্বংস কর, তোমার কাছে যা ধ্বংস আমাগো কাছে তা ক্রিয়েশন মনে হইবো, কবিরা ডেস্ট্রাকশনের মইধ্যেও ক্রিয়েটিভ।
দু-দিন পর হাসান অ্যাড-২০০০–এ যোগ দেয়।
নিয়োগপত্রে একটি জিনিশই দর্শনীয় মনে হয় হাসানের কাছে, সেটি বেতন। একটা মোটা অংশ দেখে সে বিস্মিত হয়। সে মুঠোয় একগুচ্ছ চকচকে টাকা দেখতে পায়, খুব ভারি লাগে, পরমুহূর্তেই এক আকাশ নক্ষত্রের মতো ঝলমল ক’রে ওঠে কাগজগুলো, সে শিউরে ওঠে, এবং তীব্র একটা কাম বোধ করে। এতো টাকার কথা সে ভাবে নি, এতো টাকা দিয়ে কী করবে। সে বুঝতে পারে না, একটু পরেই মনে হয় টাকা বোঝার বস্তু নয়, ভোগের বস্তু, যেমন ফুল বোঝার বস্তু নয়, রঙধনু বোঝার বস্তু নয়। টাকা সে বোঝে না, কোনো দিন বুঝবে না; এটা এক রহস্যময় বস্তু, রহস্য হয়েই থাক।
আলাউদ্দিন তাকে অফিসে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেয় সবার সাথে ,বুঝিয়ে দেয় তার কাজও; এবং হাসান সুখ পায় অ্যাড ২০০০-এর কেউ কেউ তার নাম আগে থেকেই জানে–শুধু এটুকুর জন্যেই সে নিজেকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যরা কেউ কেউ তার নাম জানবে, শুধু এটুকুর জন্যে?–দু-একজন তার কবিতারও অনুরাগী। অফিসটি তাকে বিব্রত ও সুখী করে একই সাথে;–সব কিছুই ঝলমলে ঝকঝকে; যে-কয়েকটি তরুণীকে সে দেখতে পায়, তাদের মতোই অত্যন্ত নিবিড় সুন্দর ঢলঢলে আবেদনময়ী অফিস।
হাসান কাচ দিয়ে ঘেরা একটি ডেস্ক পায়, চেয়ারটি খুবই রূপসী আরামদায়ক, একটি মডেলের মতোই ক্যামেরার সামনে স্থির পোজ দিয়ে আছে–ব’সেই মনে মনে সে বলে, কবিতা, প্রিয় কবিতা; তারপর মনে পড়ে–অ্যাড, আবেদনময়ী রঙিন সেক্সি অ্যাড, সমকালের ঈশ্বর না ঈশ্বরী; সাথে সাথে চেয়ারটি এদিকে সেদিকে যেনো ঘুরতে থাকে। হাসানকে তার অ্যাঙ্গেল দেখায়।
সামনের দিকে তাকিয়ে একটি থরোথরো তরুণীর রঙিন দিগন্তজোড়া ছবি দেখতে পায় হাসান। এ কি তরুণী, না বাঁক? এ কি তরুণী, না ওষ্ঠ? এ কি তরুণী, না যুগল বক্ষ? ছবিটির দিকে সে তাকিয়ে থাকে।