বাঁ পাশের সিনেমা হলটি নাভি খুলে মাজা বাঁকিয়ে হাসানের কানে কানে বলে, আমি তোমাকে কবিতা দিতে পারবো না, আমি ব্যানার, জোড়া জোড়া নগ্ন স্তন, স্থল উরু, স্তনবাঁক, চিজ বড়ি হায় মস্ত্ মস্ত্।
ডান পাশের ভিডিওর দোকানটি ন্যাংটাে হয়ে যায়, ঝনক ঝনক ক’রে বুক দাপাতে থাকে, অট্টরোলে বলে, হা হা হা হা, কবিতা কারে বলে মিয়া? অইটা আবার কি জিনিশ, কি মাল? পিরথিমিতে অইটার কি দরকার? অইটায় কয় কেজি সেক্স? তু চিজ বড়ি হায় মস্ত্ মস্ত্।
মুক্তি ক্লিনিকটি দুই পা ফাঁক ক’রে দু-দিকে ছড়িয়ে দিয়ে গোঙাতে থাকে, এমআর এমআর এমআর, এমআর দিতে পারি, তোমারে কবিতা দিতে পারি না। তুমি কি এমআর করাইবা? আসো, চিৎ হইয়া শোও, তিন মিনিটে ভিতরের কবিতার সব ফিটাস ফালাইয়া দিমু, আধঘণ্টায় বাড়িতে হাইট্যা চইল্যা যাইবা।
হাসান দেখতে পায় ঝাঁকে ঝাঁকে দলবেঁধে সবাই এসে বলছে, তারা তাকে কবিতা দিতে পারবে না।
নৌকো ছেঁড়া পাল উড়িয়ে এসে তার সামনে থামে, বলে, তুমি কোথায় যাচ্ছো, হাসান? তোমাকে আমি কবিতা দিতে পারবো না। যাও, তুমি অপরূপ অ্যাড গার্মেন্টস ইন্ডেন্টিং হইয়া যাও, সেইখানে চাইর তারা পাঁচতারা ব্ল্যাক লেবেল মরিয়ম মরিয়ম মরিয়ম।
একঝাঁক কাক উড়ে যেতে যেতে বলে, তোমাকে আমরা কবিতা দিতে পারবো না, হাসান, তুমি যেখানে যাচ্ছে সেখানে অনেক মাল আছে, কবিতা নেই, সেইখানে আমাগো মতো কাউয়ারাই আছে।
নদী বয়ে যাচ্ছে, তার ঢেউ বলছে, তোমাকে কবিতা দিতে পারবো না; তোমার ভেতর থেকে আমি কবিতা টেনে বের ক’রে আনবো, তোমার ভেতরে আমি চর পড়াবো, ধুধু বালুচর।
হাসান কি চিৎকার ক’রে উঠবে? সে চিৎকার ক’রে উঠতে যাচ্ছিলো, একটা চিৎকার তার গলায় এসে গামগম শুরু করতে যাচ্ছে, এমন সময় পাজেরো গিয়ে ঝলমলে চার তারার সামনে মসৃণভাবে থামে।
হাসান পাজেরো থেকে নেমে সালাম স্যালুট লাল কার্পেটে অদ্ভুতভাবে অসুস্থ বোধ করে, ভেতরে গেলে রোগটা নোংরা ঢালের মতো তার শরীর উপচে বইতে থাকবে ব’লে মনে হয়; সে ফিরে দাঁড়ায়, বাইরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।
আলাউদ্দিন বলে, আরো দোস্ত, কোন দিকে যাইতাছো, অইটা ত রাস্তার দিক।
হাসান একটু লজ্জা পেয়ে ঘুরে আলাউদ্দিনের পেছনে পেছনে হাঁটতে থাকে।
আলাউদ্দিনের অ্যান্ড ২০০০-এ হাসানের একটি কাজ হয়ে যায়।
হাসান এ-কাজের এবং কোনো কাজের কথাই ভাবে নি; কবিতা ছাড়া কিছুই ভাবছিলো না সে, কিন্তু ভেতরে কী একটা যেনো খচখচ করছিলো, হয়তো সেটা কাজ, তবে কীভাবে সেটা পেতে হয় তার মাথায় আসছিলো না।
আলাউদ্দিনই প্রস্তাব করে, দোস্ত, থাকন থাওন কবিতা লেখনের লিগা তোমার একটা কাম দরকার; আমার অ্যান্ড ২০০০-এ একটা কাম খালি আছে, তুমি সেইখানে লাইগ্যা যাও।
হাসান বলে, আমি তো অ্যাডের কিছু জানি না।
আলাউদ্দিন বলে, দোস্ত, আইজাকাইল কোনো কামই আগে থিকা জানতে হয় না; কাম শুরু করলেই জানা হইয়া যায়, তখন তার থিকা আর কেউ বেশি জানে না। আমিই কি আগে থিকা এইসব, এই অ্যাড ইন্ডেন্টিং গার্মেন্টস্ জানতাম? আইজ দ্যাখো আমার থিকা আর কে বেশি জানে?
হাসান বলে, আমাকে কী করতে হবে?
আলাউদ্দিন বলে, তোমারে দোস্ত স্ক্রিপ্টট ল্যাখতে হইবো, নানা রকম অ্যাডের স্ক্রিপ্ট। তুমি পারবা, তোমার আঙুলে কবিতার লাইনও আসবো, আর গদ্যটাও তুমি ভালই ল্যাখো। ভাল ব্যাতন পাইবা, লগে আরও নানান মজাও আছে।
হাসান বলে, অ্যাডের কাজ তো জিনিশপত্রের বিক্রি বাড়ানো, কিন্তু জিনিশপত্র দেখলেই যে আমার ঘেন্না লাগে বমি আসে। ফ্রিজ টেলিভিশন ব্রা টুথপেস্ট এসি টয়োটা দেখলেই যে, ওগুলোতে আমার আগুন ধরিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়, কমলাপুরের ভাগাড়ে নিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয়।
হা হা হা ক’রে উল্লাসে ফেটে পড়ে আলাউদ্দিন, যেনো সে এমন আনন্দ অনেক বছর পায় নি; যেনো হাসানের সাথে সেও আগুন ধরাবে, ভাগাড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ স্টেডিয়াম বায়তুল মোকাররম গাউছিয়া মৌচাক ও আর যা আছে, সব কিছুকে কমলাপুরে ফেলে দিয়ে আসবে এক্ষুনি।
আলাউদ্দিন বলে, ঠিক কথা বলছে দোস্ত। ফ্রিজ দেখলেই অইটার ভিতর ভড়ভড় কইর্যা হাগতে ইচ্ছা করে, মনে মনে আমি ফ্রিজ ডিপফ্রিজে রেগুলার হাগি, কমোড হিসাবে অইগুলি খুবই ভাল, টেলিভিশন, দেখলে মনে মনে দিনরাত মুতি; কিন্তু কথা হইছে ব্যাচাকিনাই হইছে লাইফ, লাইফে ব্যাচাকিনাই আসল কথা।
আলাউদ্দিন আরো কিছুক্ষণ হা হা হাসে; এবং বলে, এই দুনিয়ায় অনলি দি সেলার সারভাইভস্, আইজ দি সেলার ইজ দি ফিটেস্ট পার্সন, ডারউইন সাবের রুলে আইজ বাচবো খালি দোকানদার, প্রোডিউসার, যার মাল মাইনষে কিনে সেই বাইচ্যা থাকে, যারটা কিনে না সে মরে। পয়েটের মাল কোনো হারামজাদা কিনে না, কিন্তু গার্মেন্টসের মাল আমরিকা জারমানি কিনে; মাইনষে টুথপেস্ট কিনে জুতা কিনে রাজা কিনে মায়া কিনে ব্ল্যাক লেবেল কিনে, কবিতা কিনে না। এইর লিগা জীবনানন্দরা ট্রামের নিচে পরে।
হাসান হেসে বলে, আলাউদ্দিন, আমি ট্রাম রেলগাড়ি বাস ট্রাকের নিচে পড়তে চাই না, উটের গ্ৰীবার ডাকে সাড়া দিতে চাই না, ভূত দেখতে চাই না, দু-একটা ইঁদুর ধরেই বেঁচে থাকতে চাই।
আলাউদ্দিন বলে, তাইলে তোমারে অ্যাড ল্যাখতেই হইবো, অ্যাডে অ্যাডে আশমানজামিন ঢাইক্যা দিতে হইবো, দোস্ত; আইজকাল ভগবান ঈশ্বর জিহোভা গডরাও অ্যাড ছাড়া টিকতে পারে না, গডরাও আমাগো দিয়া আইজাকাইল সেক্সি অ্যাড ছারে। আইজ অ্যান্ড ইজ গড, মীের পাওয়ারফুল দ্যান অল দি ইস্টার্ন অ্যান্ড ওয়েস্টার্ন গড্স্। দোস্ত, লোকে বিজ্ঞান বিজ্ঞান করে, তয় এইটা বিজ্ঞানের যুগ না, এইটা হইল বিজ্ঞাপনের যুগ মনে রাখবা।