হাসান বলে, চলুন, মেয়েগুলোকে দেখি।
ম্যানেজার হাসানকে নিয়ে তেতলার একটি ঘরে যায়; হাসান দেখে মেয়ে কলকল খলখল করছে, ওদের কণ্ঠের শব্দ ওদের মুখের রঙের মতোই শস্তা ও তীব্র।
ম্যানেজার বলে, ছার, দেখেন কোনাডারে আপনের পছন্দ হয়। সবগুলিই মাল ভাল, ইচ্ছা লইলে ধইর্যাও দেখতে পারেন।
হাসান মেয়েগুলোর দিকে বিব্রতভাবে তাকায়; মেয়েগুলোকে কি সে টিপে টিপে পরীক্ষা ক’রে দেখবে, ওদের জিভ টেনে বের ক’রে দেখবে, ওদের শরীরের ওপরের কটকটে রঙিন বস্তিগুলো ছিঁড়ে ওদের খুলে দেখবে, অন্ধকার সুড়ঙ্গগুলোতে উঁকি দিয়ে দেখবে?
একটি মেয়ে বলে, চোখ-মেইল্যা ভাল কইর্যা দেখেন, সাব, কোনাডারে আপনের পছন্দ। আমাগো সবারই শরিল আর বুক ভাল; আমাগো অসুক নাই, আমরা গিরস্ত ঘরের মাইয়া, আমরা বেশ্যা না।
হাসান দুটি মেয়েকে দেখিয়ে ম্যানেজারকে বলে, এই মেয়ে দুটি আমার পছন্দ। ম্যানেজার বলে, কন কি, ছার, আপনের দুইডা মাইয়া লাগবো?
হাসান বলে, হ্যাঁ।
ম্যানেজার বলে, সারারাত ধইরা লাগবো, ছার?
হাসান বলে, হ্যাঁ।
ম্যানেজার বলে, দইজনের দুইশ টাকা লাগবো, ছার।
হাসান বলে, তাতে অসুবিধা নেই।
ম্যানেজার বলে, একটা কেরু লাগবো না, ছার?
হাসান বলে, হ্যাঁ, তাও লাগবে। হাসান চ’লে আসে, কিছুক্ষণ পর মেয়ে দুটি খলখল ক’রে তার ঘরে ঢোকে। ঢুকেই একটি মেয়ে বলে, আপনের দেখি বিছনা ভরা বই, আমাগো লইয়া শুইবেন কই?
খিলখিল ক’রে হাসে মেয়েটি। আরেকটি মেয়ে বলে, বইই বোধয় সাবের বউ, সাবের আবার মাইয়ালোকের দরকার কি?
হাসান বলে, দেখছো তো আমার দুটি মেয়েলোক লাগে, একটিতে হয় না।
প্রথম মেয়েটি বলে, এইটা ভাইব্যাই আমরা তাজব হই, দুইটা মাইয়া দিয়া আপনে কি করবেন? একটা লইয়া লোকজন পারে না, সারারাইতের জাইন্যে নিয়া একঘণ্টা পরই বাইর কইর্যা দোআনের লিগা অস্থির হইয়া ওঠে।
হাসান কেরুটা খোলে, একটা তীব্ৰ দুৰ্গন্ধ এসে তার রক্তে ধাক্কা দেয়; তবু সে তিনটি সবুজ-শাদা শস্তা গেলাশে কেরু ঢালে, পানি মেশায়।
নিজে একটু চুমুক দিয়ে বলে, তোমরা নাও। মেয়ে দুটি বিছানার ওপর বসে গেলাশে চুমুক দেয়। হাসান এক চুমুকে গোলাশটি শেষ ক’রে আবার গেলাশ ভরে, চুমুক দেয়; এবং মেয়ে দুটির দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাদের নাম আমি জানি না।
একটি মেয়ে বলে, আমার নাম সুন্দরী।
হাসান বলে, তোমার আমি নাম দিলাম কংকাবতী।
মেয়েটি বলে, কি নাম দিলেন, নামটা ত সোন্দর।
হাসান বলে, কংকাবতী।
মেয়েটি বলে, আইজ থিকা আমি কংকাবতী, নামটা ভুলুম না, নামটা আমার সোন্দর লাগতেছে।
হাসান আরেকটি মেয়েকে বলে, তোমার আমি নাম দিলাম আফ্রোদিতি।
মেয়েটি বলে, কি নাম কইলেন? খুব কঠিন আর সোন্দর লাগতেছে ত।
হাসান বলে, আফ্রোদিতি।
মেয়েটি বলে, তাইলে আমিও আইজ থিকা আফরদিতি।
হাসান জিজ্ঞেস করে, আমাকে কেমন লাগছে তোমাদের?
কংকাবতী বলে, খুব ভাল মনে হইতাছে; অন্য পুরুষগো মতন লাগতেছে না। তারা ত ঘরে ঢুকাইয়াই ছিইর্যাফাইর্যা শুরু কইর্যা দেয়।
হাসান বলে, তোমরা কি জানাে একধরনের মানুষ আছে, যারা কোনাে অপরাধ করে নি, তবু তারা অপরাধী, তারা সবচেয়ে সুস্থ, তবু তারা সবচেয়ে বড়ো পাগল, এতো বড়ো পাগল আর নেই?
কংকাবতী আর আফ্রোদিতি গেলাশে চুমুক দিতে দিতে বলে, না ত, এমুন মাইনষের কথা আমরা শুনি নাই। অপরাধ না করলে আবার অপরাধী হইব কেন, পাগল না হইলে আবার পাগল হইব কেন?
হাসান বলে, আমাকে দেখো, আমি সেই মানুষ।
তারা চমকে ওঠে, অ্যা, আপনে পাগল? আপনেরে দেইখা ত পাগল মনে হইতেছে না, আপনেরে তা ভাল মানুষ মনে হইতেছে।।
হাসান বলে, যাদের দেখে পাগল মনে হয়, তারা গভীর পাগল নয় পবিত্র পাগল নয় বিশুদ্ধ পাগল নয়, তারা পাগলদের নকল, গভীর বিশুদ্ধ পবিত্র পাগল দেখে কখনাে পাগল মনে হয় না।
কংকাবতী বলে, আমারে আরেক গেলাশ দেন, সাব, জিনিশটা টানতে আমার ভাল লাগতেছে। আপনে পাগল হইলে আমিও পাগল; আইজ রাইতে আমার পাগল হইতে ইচ্ছা লাগতেছে।
আফ্রোদিতিও বলে, আমারেও আরেক গেলাশ দেন, সাব, এমুন রাইতু আর পামু না এমুন রাইত আর আইব না, এত ভাল পাগল আর পামু না; দুনিয়াতে একটাও খাঁটি পাগল দ্যাখলাম না।
হাসান তাদের গেলাশে কেরু ঢালতে ঢালতে বলে, আমি তোমাদের সাথে আজ রাতে কবিতা দিয়ে করবাে, সেইটা দিয়ে না; কবিতা দিয়ে তোমাদের স্তন ছোঁবাে ঠোঁট ছোঁবাে কবিতা দিয়ে তোমাদের ভেতরে নামবো, এতো ভেতরে নামবাে যেখানে কখনাে কেউ নামে নি।
আফ্রোদিতি গেলাশে চুমুক দিতে দিতে বলে, যা দিয়া ইচ্ছা আপনের তা দিয়াই করেন, আমাগো ভালই লাগতেছে, তয় দেইখ্যেন আমাগো যেন কোনো ক্ষতি না হয়, ছিররাফাইররা না যায়।
হাসান তার পােশাক খুলে ফেলে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
মেয়ে দুটি একবার চমকে ওঠে; তার শিশ্নের দিকে তাকিয়ে থাকে।
হাসান বলে, তোমরাও হও, আমার মতো নগ্ন পবিত্র শুদ্ধ আদিম, আমার মতো কবি।
কংকাবতী বলে, বাত্তি জ্বলাইয়া এমন হইতে আমাগো শরম লাগে, সাব।
হাসান বলে, নগ্নতা সুন্দর, নগ্ন না হ’লে মানুষ পবিত্র হয় না, নগ্নতায় লজ্জা নেই, তোমরা কবিতার বোন, কবিতার মতো নগ্ন কবিতার মতো শুদ্ধ, কবিরা চিরকাল তোমাদের বন্দনা করেছে, আলো অন্ধকারের মধ্যে পার্থক্য নেই তোমাদের রক্তে, আলোই অন্ধকার, আলোর অন্ধকারেই তোমাদের আমি নগ্ন পবিত্র বিশুদ্ধ সুন্দর দেখতে চাই। আমি তোমাদের দেখতে চাই, তোমাদের কেউ দেখতে চায়না, তোমাদের স্তনবৃত্তের দিকে কেউ তাকায় না, তোমাদের গ্ৰীবার জ্যোৎস্নার দিকে কেউ তাকায় না, সবাই তোমাদের মাংস খেতে চায়।