শঙ্কর মুখটা নামিয়ে চুপ করে বসে রইল।
খুব সরু এবং নিচু গলায় শবর বলল, এই সুযোগটাই কি বাসুদেব নিতেন?
প্লিজ! প্রসঙ্গটা আমার সহ্য হচ্ছে না।
কেন মিস্টার বোস, আমি তো বন্ধুর মতোই আপনার সঙ্গে কথা বলছি। আমি আপনার শত্রু নই। আমি আপনার প্রবলেমগুলো নিয়ে ভেবেছি বলেই এত খবর নিয়েছি। ডাক্তার চৌধুরী আপনাকে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছেও পাঠিয়েছিলেন, তাই না?
হ্যাঁ।
মিস্টার বোস, সেক্সের শতকরা আশি-নব্বই ভাগই হল মানসিক, দশ বা কুড়ি পারসেন্ট হল শরীর। একটা মোটিভেশন থেকেই ওটা হয়ে ওঠে।
ক্লান্ত শঙ্কর বলল, আপনি কি আমাকে যৌনশিক্ষার পাঠ দিচ্ছেন?
শবর একটু হাসল, বলল, না। লেট ইট গো। আপনি একজন অপমানিত, লাঞ্ছিত মানুষ। আপনার স্ত্রী এবং বাসুদেব মিলে আপনাকে একসময়ে সহ্যের শেষ সীমায় নিয়ে গিয়েছিল। আপনার স্ত্রী আপনাকে একরকম জানিয়েই বাসুদেবের সন্তান ধারণ করেন। আপনি সবই মেনে নিয়েছিলেন, সহ্য করেছিলেন। একদিক দিয়ে দেখতে গেলে এটা একটা মহত্ত্বের ব্যাপার। অন্যদিক দিয়ে দেখতে গেলে, পৌরুষের অভাব।
ধরুন তাই। নাউ লেট মি গো হোম।
শঙ্কর উঠতে যাচ্ছিল। শবর ঠান্ডা এবং দৃঢ় কণ্ঠে বলল, আমার কথা এখনও শেষ হয়নি৷
শঙ্কর গা ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ে বলল, ইউ আর গোয়িং টু ফার।
আমি সেটা জানি। আপনি হয়তো তখন প্রতিশোধ নেননি, কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে বাসুদেবের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছেন।
কী বলছেন আপনি? শঙ্কুর ফের সাদা মুখে বলল। তার হাত ফের চেয়ারের হাতলে শক্ত।
শবর হাসল, নানারকম সন্দেহ দেখা দিচ্ছে। এরকম নাও হতে পারে। তেরো তারিখে বিকেল ছ’টা থেকে সাড়ে সাতটা অবধি আপনার হোয়ারঅ্যাবাউটস জানাটা সেজন্যই জরুরি।
বললাম তো!
কিছুই বলেননি। যা বলেছেন তা ভাসাভাসা। ইনি ডিটেলস যদি বলতে না পারেন তবে ইউ আর ইন এ স্যুপ।
মাই গড!
শঙ্কর দৃশ্যতই ভেঙে পড়ার ভঙ্গি করে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল।
শবর মৃদুস্বরে বলল, কোথায় ছিলেন?
আই হ্যাড অ্যান অ্যাপয়েন্টমেন্ট।
কার সঙ্গে?
সেটা বলা যাবে না।
দরকার হলেও না?
এখনও দরকারটা বুঝতে পারছি না।
শবর উঠল। বলল, ওকে। লেট আস কল ইট এ ডে!
ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় একবার ফিরে চাইল শবর। দেখল, যেন নিজেরই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বসে আছে শঙ্কর বসু।
রাত ন’টায় হাসপাতালে হানা দিল শবর। ভিজিটিং আওয়ার অনেকক্ষণ আগে শেষ হয়ে গেছে। এখন হাসপাতালটা বেশ শান্ত।
ঘোষাল বিছানায় উঁচু বালিশে হেলান দিয়ে বসে গীতা পড়ছিল। তাকে দেখে ছোট বইটা বালিশের পাশে রেখে উঠে বসে হাসল।
শবর বিছানারাই এক ধারে বসে বলল, শুনলাম আপনার রিলিজ অর্ডার কালই হয়ে গেছে। তবু আপনি বাড়ি যাচ্ছেন না কেন?
মায়ার বন্ধন একটু আলগা করার চেষ্টা করছি।
বুঝিয়ে বলুন মশাই।
আমি এসেনশিয়ালি একজন ফ্যামিলিম্যান। ছেলেবউ এদের নিয়ে জড়িয়ে জেবড়ে থাকতে ভালবাসি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই অত্যধিক মায়ার বন্ধনটা পৌরুষের পক্ষে ক্ষতিদায়ক। আমার ইদানীং হোমসিকনেসটাও বেড়ে গিয়েছিল খুব। অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে তর সইত না। তাই ভাবছি আরও দু-চার দিন ফ্যামিলি থেকে একটু তফাত থাকি।
এ কি গীতা পাঠের ফল নাকি?
ঘোষাল হাসল, তাও বলতে পারেন, অ্যাকচুয়ালি তাই।
ভাল। কিন্তু তার চেয়েও ভাল কাজেকর্মে নেমে পড়া। কর্মের মতো মুক্তির পথ আর নেই।
তা বটে। সেটাও ভাবছি। আপনার কেসটার খবর কী?
সেই সেনগুপ্ত মার্ডার কেস?
হ্যাঁ। কিন্তু কাগজে তো দিচ্ছে না কিছু।
কাগজে দেওয়ার মতো ব্যাপার নয়। সূক্ষ্ম ব্যাপার, রগরগে ঘটনা তো নয়। এখনও খুবই গোপন তদন্ত চলছে।
কেন?
শবর একটু হাসল, কারণ আছে। এ কেসটা থেকে কী বেরোয় তা আমিও জানি না।
ফ্যাক্টসগুলো আমাকে বলুন না। খানিকটা শুনেছি। বাকিটাও শুনি। একটা জিগস পাজল খেলি।
শুনবেন?
হ্যাঁ। বলুন।
শবর গোটা ঘটনাটা বলল। প্রায় কিছুই বাদ দিল না। খুব মন দিয়ে শুনল ঘোষাল।
শোনার পর ঘোষাল হঠাৎ বলল, রীণা বোসকে ফোনটা কে করছে বলে মনে হয়?
শবর একটু হাসল, আপনিই বলুন।
ঘোষাল একটু হাসল। বলল, ডিডাকশন করলে যা দাঁড়ায় তাতে একজনই হতে পারে। লাভ-হেট রিলেশনে যে লোকটা বরাবর.দু’ভাগ হয়ে ছিল। কখনও ভালবেসে, কখনও ঘেন্না করে। দুটোই তীব্রভাবে করে। লোকটা শঙ্কর বসু।
এই তো মস্তিস্ক চমৎকার কাজ করছে!
শঙ্কর বসুর অ্যালিবাই আছে?
না, কারও কোনও ফুলপ্রুফ অ্যালিবাই নেই।
ছেলেটা?
তারও নেই। মাণ্ডবী বলে তার একটি ফুটফুটে বান্ধবী আছে। শি উইল ভাউচ ফর হিম।
ঘোষাল একটু হাসল, আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে ইউ নো সামথিং। অ্যালিবাই নেই বলে নিশ্চিন্ত থাকতেন না, ক্র্যাকডাউন করতেন। আপনার লাইন অফ অ্যাকশন আমি জানি।
শবরের মুখ থেকে হাসিহাসি ভাবটা আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল। চুপ করে একটু ভাবল সে। তারপর বলল, লোক দুটো কে হতে পারে বলুন তো।
কোন দুটো লোক?
যারা লিফট সারানোর নাম করে বাসুদেব সেনগুপ্তকে সিঁড়ি ভাঙতে বাধ্য করেছিল।
ঘোষাল মিটিমিটি একটু হেসে বলল, আপনি ইচ্ছে করলেই তাদের খুঁজে বের করতে পারেন।
কী করে বুঝলেন?
আপনার মুখ দেখে। আপনি তেমন চিন্তিত নন। কেন নন মিস্টার দাশগুপ্ত?
শবর একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, ঘোষালবাবু, ইউ আর এ ভেরি কানিং কপ। কেন যে অমন গুটিয়ে গিয়েছিলেন।