কী ব্যবস্থা নেব? আমার তো কিছু করার ছিল না।
আপনি আপনার স্ত্রী বা বাসুদেবকে কখনও চার্জ করেননি?
করে কী হবে? দে ওয়্যার ইন লাভ, আমার কিছু করার ছিল না।
সাধারণত প্রেমিক পুরুষেরা জেলাস হয়। স্ত্রীর প্রেমিককে তারা বড় একটা ক্ষমা করে না। বাসুদেবকে আপনি কিছুই করেননি। মারপিট না হোক একটা শো-ডাউন বা একটা ঝগড়া তো করবার চেষ্টা করতে পারতেন।
তাতে লাভ হত না।
আপনি কি মোর ক্যালকুলেটিভ দ্যান ইমোশনাল?
আমি আমার ইমোশন কন্ট্রোল করতে পারি।
তাই যদি হয় তা হলে আপনি আপনার স্ত্রীকে ডিভোর্স না করার জন্য কান্নাকাটি এবং সাধাসাধি করলেন কী করে? দ্যাট ইজ ইমোশন। তাই না?
এসব কথা আপনাকে কে বলল? আমার স্ত্রী?
তা ছাড়া আর কে হতে পারে?
রীণা যদি ও কথা বলে থাকে তবে খুব একটা ভুল বলেনি। হ্যাঁ, আমি ওকে ছাড়তে চাইনি। সেই সময়ে আমি আবেগে খানিকটা ক্যারেড হয়ে গিয়েছিলাম–সত্যি কথা।
বাসুদেব সেনগুপ্তকে কি আপনি ভয় পেতেন?
হঠাৎ শঙ্কর রাগে লাল হয়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, স্টপ ইট। কেন–কেন আমি সেই স্কাউন্ড্রেলটাকে ভয় পাব? আমি ওকে ঘেন্না করতাম।
প্লিজ! ওরকম হেস্টি হবেন না। এসব অনভিপ্রেত প্রশ্ন আমাদের বাধ্য হয়েই করতে হয়। আপনি নিজেই বলেছেন যে, আপনি আপনার ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে পারেন।
সরি। বলুন।
ভয়ের প্রশ্নটা উঠছে তার কারণ বাসুদেব সেনগুপ্ত খুবই মারকুট্টা এবং অ্যাগ্রেসিভ লোক ছিলেন। খেলার মাঠেও ওঁর মারাকু বলে বদনাম ছিল। নিজের পরিবারের কাছেও ছিলেন একজন ভীতিপ্রদ মানুষ।
তা জানি।
এবার বলুন ওঁর সঙ্গে লাইন অফ কলিশনে আসতে কি আপনার একধরনের উইকনেস ছিল?
সামান্য সাদা মুখে কিছুক্ষণ বসে রইল শঙ্কর। তারপর জোর করে মাথা নেড়ে বলল, না।
ওই আকস্মিক রক্তহীনতা শবর চেনে। ঘোষালবাবুর ঠিক ওরকমই হয়েছিল। তবে শবর পয়েন্টটা নিয়ে আর চাপাচাপি করল না।
এবার একটু সেনসিটিভ প্রশ্নে যাচ্ছি।
শঙ্কর একটা শ্বাস ফেলে বলে, গো অ্যাহেড।
রিগার্ডিং অজাতশত্রু বসু।
হ্যাঁ। অজু বাসুদেবের ছেলে।
সেটা এখন অনেকেই জানে। প্রশ্ন হল, এ ছেলেটির প্রতি আপনার মনোভাব কেমন?
কীরকম হওয়া উচিত?
আমার প্রশ্ন হল, বাসুদেব অন্যায়কারী হলেও ছেলেটি তো ইনোসেন্ট।
শুনুন, আমি রক্তমাংসের মানুষ, পাথর নই। আমি আমার স্ত্রী আর বাসুদেবের অনেক অন্যায় সহ্য করেছি বটে, তা বলে বাসুদেবের ছেলেকে মাথায় করে নাচবার তো কিছু নেই।
তা বলছি না। আমার প্রশ্ন, ছেলেটার প্রতি আপনার এত তীব্র বিদ্বেষ ছিল কেন, যার জন্য ছেলেটা কখনও আপনার সামনে আসার সাহস পেত না?
আপনার নিজের জীবনে এরকম ঘটনা ঘটলে বুঝতেন আমি কতটা মানসিক সাফারার।
কখনও প্রতিশোধ নেওয়ার কথা মনে হয়নি?
প্রতিশোধ! প্রতিশোধ কীভাবে নেব তা আমি ভেবে পেতাম না।
প্রতিশোধের কথা ভাবতেন তো? বাসুদেবকে খুন করার ইচ্ছে কখনও হয়নি?
ফের উত্তেজিত হয়ে শঙ্কর বলে ওঠে, আর ইউ হিন্টিং সামথিং?
ঠান্ডা গলায় শবর বলল, এরকম ইচ্ছে তো হতেই পারে। বিশেষ করে যারা অসহায় আর দুর্বল, যারা ভিতু তাদের মনেই জিঘাংসা থাকে বেশি। যেহেতু তারা ঘটনা ঘটাতে পারে না সেইহেতুই তারা মনে মনে খুনটুনের কথা ভাবে। শুধু ভাবেই, তার বেশি কিছু নয়।
আপনি আমাকে দুর্বল আর ভিতু বলে ব্র্যান্ডেড করছেন নাকি? আর ইউ শিয়োর?
শবর মাথা নেড়ে বলে, না। আই অ্যাম নট শিয়োর। কিন্তু এবার একটা আরও সেনসিটিভ প্রশ্ন আছে। ভয় হচ্ছে প্রশ্নটা করলে আপনার ভায়োলেন্ট রি-অ্যাকশন হতে পারে। করব কি?
ইফ দ্যাট ক্লিয়ার্স মি ফ্রম দিস হিনিয়াস অ্যাফেয়ার্স দেন শুট।
দেন পুল ইয়োরসেলফ টুগেদার। প্রশ্নটার জবাব ইচ্ছে করলে আপনি নাও দিতে পারেন।
গো আহেড।
আপনার যৌন ক্ষমতা কি কিছুটা কম ছিল?
চেয়ারের দু’হাতলে শঙ্করের দু’হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। মুখটা হয়ে গেল পাথরের মতো। দুই চোয়ালে দুটো ঢিবি। চাপা হিংস্র গলায় সে বলল, হোয়াট ডু ইউ মিন? এটা কী ধরনের–
রিল্যাক্স। আই হ্যাভ গট দি মেসেজ।
হোয়াট মেসেজ, ইউ বাস্টার্ড?
শবর একটু হাসল। ঠান্ডা নরম গলাতেই বলল, ইট হার্টস আই নো।
ক্লান্ত শঙ্কর নিজের ব্যবহারে সামান্য লজ্জিত হয়ে বলে, এসব অবান্তর প্রশ্ন করছেন কেন?
অবান্তর নয় বলেই করছি। আমি হোমওয়ার্ক না করে আপনার কাছে আসিনি।
কীসের হোমওয়ার্ক?
রসকো ক্লিনিকের ডাক্তার চৌধুরী আমাকে জানিয়েছেন, আপনি তার রেগুলার ক্লায়েন্ট। একসময়ে আপনি তার কাছে হরমোন ট্রিটমেন্টের জন্য গিয়েছিলেন।
শঙ্করের মুখটার বয়স যেন চোখের পলকে দশ বছর বেড়ে গেল। স্তম্ভিত এবং হতশ্বাস একটা চেহারা। ঢাকা দেওয়া গেলাস তুলে খানিকটা জল খেল ঢক ঢক করে।
এতে লজ্জার কী আছে? এরকম তো হতেই পারে। সকলের কি সব দিক পারফেক্ট থাকে?
প্লিজ! আজ আপনি আসুন।
কেন উত্তেজিত হচ্ছেন? আমি পুলিশে চাকরি করি বলেই মায়াদয়াহীন নই। কিন্তু সত্যের ভিতরে পৌঁছোতে হলে এসব বিচ্ছিরি প্রসঙ্গ না তুলেও উপায় থাকে না।
আমি ইম্পোটেন্ট নই।
ইম্পোটেন্ট বলিনি।
তা হলে?
ডাক্তার চৌধুরী আমাকে বলেছেন, ইউ ওয়্যার নট এ ভেরি উইলিং অ্যান্ড অ্যাগ্রেসিভ লাভার। ওঁর একটা ব্যাখ্যা আছে।
কী সেটা?
আপনি আপনার সুন্দরী স্ত্রীকে অত্যধিক ভালবাসতেন। এতটা ভালবাসতেন বলেই আপনি তাকে সেয়ালি খুশি করতে পারবেন কি না তা নিয়ে আপনার টেনশন থাকত। এটা একধরনের ভয়। এই ভয় এতটাই তীব্র যে ইন রিয়ালিটি আপনি দুর্বল হয়ে পড়তেন। স্ত্রীকে তৃপ্ত করা আপনার পক্ষে সম্ভব হত না।