আপনি ভদ্রলোক নন?
আজ্ঞে না। ভদ্রলোক হলে আপনার সঙ্গে এসব রসালাপ করতে পারতাম কি?
আমি ফোন ছাড়ছি।
সেটা আপনার ইচ্ছে। তবে কথা বললে আলটিমেটলি আপনার হয়তো লাভই হবে।
দেখুন, আমার জীবনটা আমার একারই। আপনি হয়তো জানেন না, আমি আমার স্বামীর কাছে ডিভোর্সও চেয়েছিলাম। উনি দেননি। সুতরাং আমার খুব একটা দোষ নেই। আপনি অকারণ বিবেকের ভূমিকা নিচ্ছেন কেন? আপনি কে?
বাঃ, এই তো দেখছি, মানসিকভাবে অনেকটা সামলে উঠেছেন। নিজের ফেবারে সাজিয়ে গুছিয়ে যুক্তিও খাড়া করছেন। তবে সেদিন ওরকম মিউ মিউ করছিলেন কেন?
আপনার কথা কি শেষ হয়েছে?
কথার কি শেষ আছে ম্যাডাম? শুধু বলি, আপনি ভাগ্যবতী মহিলা বটে, কিন্তু আপনার স্বামী শঙ্কর বসু একটি আস্ত পাঁঠা। অ্যাডাল্টারাস উওম্যান জেনেও আপনাকে মহারানির মতো লোকটা পালপোষ করছে কীভাবে? ওর গায়ে কি মানুষের চামড়া নেই?
প্লিজ! আপনি এসব বন্ধ করুন।
লোকটা একটা ঘিনঘিনে হাসি হেসে বলল, বিবেকের দংশন হচ্ছে নাকি?
প্লিজ!
আপনি আগের দিন আমার পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন। আমাকে বিবেক বলেই জানবেন।
আপনি আর দয়া করে ফোন করবেন না। বিশেষ করে আমার দুধের বাচ্চা মেয়েটার কাছে আপনি যেসব কথা জানতে চেয়েছেন তা অন্যায়।
আপনার মেয়ে কি একদিন তার মায়ের কথা জানতে পারবে না?
হয়তো জানবে। বড় হোক, আমিই জানাব।
আপনার মতো মহিলা আমি সত্যিই দেখিনি মিসেস বোস। আপনার ভাগ্য অন্য মেয়েদের কাছে ঈর্ষণীয়।
৮. শঙ্করবাবু, তেরো তারিখে
শঙ্করবাবু, তেরো তারিখে বিকেলবেলা ছ’টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আপনার হোয়ার অ্যাবাউটস কী ছিল?
অ্যাম আই এ সাসপেক্ট?
এভরিওয়ান ইজ এ সাসপেক্ট। বলুন।
ইউজুয়ালি ছ’টার পর আমার মিটিং থাকে।
সেদিনও ছিল?
ছিল।
কার সঙ্গে এবং ক’টা থেকে ক’টা পর্যন্ত?
শব্দহীন নিজস্ব মস্ত চেম্বারে আরামদায়ক একটা রিভলভিং চেয়ারে বসে শঙ্কর একটু ভাবল। উলটোদিকে বসা মাঝারি চেহারার শবর দাশগুপ্ত লোকটিকে তার ভাল লাগছে না। এ একজন অল্প বেতনের গোয়েন্দা। এর কি তার সঙ্গে ওপরওয়ালার মতো কথা বলার স্পর্ধা থাকা উচিত?
শঙ্কর বলল, মনে নেই। আমার সেক্রেটারি হয়তো জানে।
আমি আপনার সঙ্গে কথা বলছি। দরকার হলে সেক্রেটারির সঙ্গে পরে কথা বলা যাবে।
সরকার যে কেন এইসব পাতি গোয়েন্দাদের হাতে এত ক্ষমতা দেয় তা বোঝে না শঙ্কর। সে অত্যন্ত তেতো গলায় বলল, মনে না থাকলে কী করা যাবে? আমি ব্যস্ত মানুষ, রোজই মিটিং টিটিং করতে হয়–
আপনি কতটা ব্যস্ত সে খবর আমার জানা আছে। এত বড় একটা কোম্পানির আপনি রিজিওন্যাল ম্যানেজার, ব্যস্ত তো থাকারই কথা। তবু তেরো তারিখটা একটু মনে করার চেষ্টা করুন। সেদিন সল্টলেকে আপনাদের একটা নেমন্তন্ন ছিল।
হ্যাঁ।
ওই অকেশনটা থেকে চিন্তাকে একটু পিছিয়ে নিতে থাকুন, মনে পড়বে।
শঙ্কর একটু ভাবল। তারপর বলল, সেদিন আমার ড্রাইভার ছিল না। তাই আমি বোধহয় একটু আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে যাই।
ড্রাইভারের কী হয়েছিল?
কী একটা দরকারে ছুটি নিয়েছিল।
ইট ক্যান বি ক্রস চেকড। যা বলার ভেবেচিন্তে বলুন।
তাই তো বলছি।
একটু আগে বেরিয়ে গিয়ে কী করলেন?
একটা উপহার কেনার দরকার ছিল। তাই—
উপহার কার জন্য?
আমার শালির মেয়ের জন্য। ওর জন্মদিন ছিল।
আপনারা স্বামী-স্ত্রী কি দুতরফা উপহার দিয়েছিলেন?
তার মানে?
আপনার স্ত্রীও সেদিন উপহার কিনেছিলেন বলে আমাকে বলেছেন।
ওঃ!
উপহারটা কোথা থেকে কিনলেন?
নিউ মার্কেট।
কী কিনেছিলেন?
ঝুটো গয়না।
বাসুদেব সেনগুপ্তকে আপনি কতকাল চেনেন?
অনেকদিন।
কীরকম লোক ছিলেন তিনি?
সেটা উহ্যই থাকা ভাল।
তেরো তারিখে আপনি ক’টার সময় অফিস থেকে বেরিয়েছিলেন?
ছ’টা–না আরও পরে।
ঘড়ি না দেখে বেরোবার মানুষ তো আপনি নন।
বলেছি তো, ভাল মনে পড়ছে না।
নিউ মার্কেটের কোন দোকান থেকে গয়না কিনেছিলেন মনে আছে?
দোকানের নামটাম জানি না। না, মনে নেই।
ইতিমধ্যে আমি সল্টলেকে আপনার শালির বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েছি। ওঁরা জানিয়েছেন, ওঁদের মেয়ের জন্মদিনে তাকে আপনারা পাঁচশো টাকার একটা গিফট চেক দিয়েছেন। সেই চেকটা কেনা হয়েছিল বারো তারিখে।
ওঃ।
শঙ্কর বড্ড অপ্রতিভ বোধ করতে লাগল। নিজেকে এমন বোকা তার বহুকাল লাগেনি। গোয়েন্দারা কীভাবে কাজ করে এবং কত দূর অবধি খোঁজখবর নেয় সে সম্পর্কেও তার ধারণা ছিল না। সে শবর দাশগুপ্তর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে টেবিলের দিকে চেয়ে রইল।
এবার বাসুদেব সেনগুপ্তর প্রসঙ্গ। মিস্টার বোস, আমার কাছে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, আমি আপনার স্ত্রী ও বাসুদেববাবুর সম্পর্কের কথা জানি। আমার প্রশ্ন হল, আপনি যখন দেখলেন ওঁরা পরস্পরের প্রেমে পড়েছেন, তখন আপনি আপনার স্ত্রীকে ডিভোর্স না দিয়ে তার অবৈধ প্রেম মেনে নিলেন কেন?
এটা খুবই ব্যক্তিগত অভিরুচির ব্যাপার। আপনি ঠিক বুঝবেন না।
আমি এও শুনেছি, আপনি আপনার স্ত্রীকে ভীষণ ভালবাসেন। এতটাই সেই ভালবাসা যে, তার সমস্ত অন্যায় ও ব্যভিচার অম্লান বদনে মেনে নেন। সত্যিই কি তাই?
শঙ্কর একটু লাল হয়ে বলল, হয়তো ভালবাসাটা একটা যন্ত্রণা ছাড়া কিছু নয়। তবুবলি, কথাটা সত্যি। আমি আমার স্ত্রীকে প্রবলভাবে ভালবাসি।
ভালবাসা ইউজুয়ালি পজেসিভ। আপনার স্ত্রী হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে দেখেও আপনি তেমন কোনও ব্যবস্থা নেননি। কেন তা বলতে পারেন?