কী করে হবে? বললাম তো, উনি আসতেন না।
গতকাল যখন শুনলেন যে, উনিই আপনার বাবা তখন কি ওঁর ওপর আপনার রাগ বা ঘেন্না হল?
অজু কিছুক্ষণ পাথরের মতো বসে থেকে বলল, একটা মিক্সড ফিলিং। ঠিক বোঝাতে পারব না। মনে হচ্ছিল যেন আমার আইডেন্টিটিটাই হারিয়ে যাচ্ছে। না রাগ নয়, হেপলেসনেস।
আপনি কি জানেন যে, বাসুদেব সেনগুপ্ত আপনার জন্য একটা ফ্ল্যাট এবং পাঁচ লাখ টাকার একটা পলিসি রেখে গেছেন!
কাল মায়ের কাছে শুনলাম।
শুনে কীরকম রি-অ্যাকশন হল?
অজু একটা করুণ হাসি হেসে বলল, এসব তো কমপেনসেশন। কিন্তু আমার হেপলেসনেসটা তাতে কমছে না।
যদিও আপনি তখন ছোট ছিলেন, তবু বলুন বাসুদেব সেনগুপ্তকে আপনার কেমন লোক বলে মনে হত?
একটু ডিস্টার্কিং লাগত। উনি প্রায়ই এসে বিকেলের দিকে বসে থাকতেন। বাইরের কোনও লোক রোজ এলে কি ভাল লাগে?
ওঁর সঙ্গে আপনার কি কথাবার্তা হত?
না। উনি ’র সঙ্গে কথা বলতেন।
আপনার সঙ্গে কখনও বলতেন না?
হয়তো কখনও এক-আধটা বলেছেন, কিন্তু এটা মনে আছে যে, আমি ওঁদের কাছে বড় একটা যেতাম না।
লোকটা সম্পর্কে আপনার কখনও কোনও সন্দেহ হয়নি?
সন্দেহ নয়, একটু বিরক্ত বোধ করতাম হয়তো।
আপনি যখন কাল শুনলেন যে বাসুদেব সেনগুপ্তই আপনার বাবা তখন কি মায়ের ওপর আপনার কোনও রিপালশন হল?
কেন হবে! আজকাল একস্ট্রা ম্যারিটাল রিলেশন তো কোনও ব্যাপার নয়।
নয়?
অজু একটু লজ্জা পেয়ে বলে, ব্যাপার ঠিকই, তবে এরকম তো হতেই পারে। হি ওয়াজ এ স্পোটসম্যান অ্যান্ড পারসোনেবল অলসো।
আপনি আপনার মাকে তা হলে ক্ষমা করেছেন?
মাকে আমি খুব ভালবাসি।
আর শঙ্করবাবুকে?
উনি একজন চমৎকার ভদ্রলোক।
বাবা হিসেবে?
বাবা হিসেবেও খারাপ নন।
তেরো তারিখে সন্ধে সাড়ে ছটা থেকে সাড়ে সাতটা আপনি কোথায় ছিলেন?
প্রশ্নটা ভাল করে শেষ হওয়ার আগেই চটজলদি জবাব দিয়ে ফেলল অজু, আমার এক বন্ধুর বাড়িতে একটা স্পোর্টস প্রোগ্রাম দেখছিলাম ভিডিয়ো-তে।
এত দ্রুত জবাবে একটু অবাক শবর বলল, বন্ধুটি কে?
মাণ্ডবী ঘোষ। উডবার্ন পার্কে থাকে। ওই যে মেয়েটির সঙ্গে আমি একটু আগে কথা বলছিলাম।
ওদের বাড়িতে আর কে কে থাকে?
মা-বাবা।
আর কেউ নয়?
না।
ওইদিন ওর মা-বাবা বাড়িতে ছিলেন?
না। ওঁরা বেরিয়েছিলেন।
তা হলে বাড়িতে ছিলেন শুধু আপনি আর মাণ্ডবী?
হ্যাঁ। উই আর চামস।
বাড়িতে কোথাও কাজের লোকটোক নেই?
আছে। তবে তারা সব ঠিকে। সন্ধের আগেই চলে যায়।
কখন গিয়েছিলেন?
ছ’টা নাগাদ।
ক’টা অবধি ছিলেন?
আটটা।
আপনাকে কেউ ও-বাড়িতে ঢুকতে বা বেরোতে দেখেছে?
তা কী করে বলব?
বাড়ি না ফ্ল্যাট?
বাড়িই বলতে পারেন। দোতলা একটা বাড়ির গ্রাউন্ড ফ্লোরটা নিয়ে ওরা থাকে।
দোতলায় কারা আছে?
সাম সিন্ধি পিপল।
বাড়িটা কি মাণ্ডবীদের?
না। ওরা ভাড়া থাকে। অনেকদিনের পুরনো ভাড়াটে।
মাণ্ডবীর ভাইবোন নেই?
না। শি ইজ অ্যান ওনলি চাইল্ড।
শবর একটু হাসল। তারপর বলল, আপনি কি জানেন বাসুদেববাবু কীভাবে মারা গেছেন?
শুনেছি।
কী শুনেছেন?
মৃত্যুটা স্বাভাবিকভাবে হয়নি।
হ্যাঁ। ওঁর হার্ট খারাপ ছিল। লিফট খারাপ বলে উনি সিঁড়ি ভেঙে উঠছিলেন।
মা সব বলেছে। ইউ আর আফটার দি ম্যান।
ম্যান। উওম্যান নয়?
ছেলেটা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, মেয়েরা কি ওসব করে?
কে জানে! আমার পুলিশি অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে।
হতে পারে। মে বি এ উওম্যান।
আপনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিখছেন?
হ্যাঁ।
প্রসপেক্ট কীরকম?
বুঝতে পারছি না। সব লাইনেই তো ভিড়।
তা হলে পড়ছেন কেন?
কী করব? একটা কিছু করার চেষ্টা তো করতে হবে।
আপনার কি অন্য কিছু করার ইচ্ছে?
ইচ্ছে থাকলেই বা লাভ কী?
কেন, আপনি তো একটা বেশ বড় ফ্ল্যাট আর পাঁচ লাখ টাকার মালিক।
সেটা তো আগে জানতাম না।
জানতেন না?
না। কী করে জানব? ইটস অ্যান আউটরেজিয়াস কোশ্চেন।
ফরগেট ইট। আপনি তো খেলাধুলো করেন বলে শুনেছি।
করি।
কোন ক্লাব?
স্পোর্টিং ইউনাইটেড।
অজিত ঘোষ বলে কাউকে চেনেন?
না। সে কে?
ঢাকুরিয়ার যে বাড়িতে আপনার নামে বাসুদেব সেনগুপ্ত একটা ফ্ল্যাট রেখে গেছেন সেই বাড়ির প্রমোটার।
না, চিনি না। ফ্ল্যাটের কথা তো কালই জানলাম।
অজিতবাবু কিন্তু অন্য কথা বলেন।
তার মানে?
অজিতবাবু বলেছেন আপনি সেই ফ্ল্যাটের কনস্ট্রাকশন দেখতে গত এক বছরে বেশ কয়েকবার সেখানে গেছেন। ইন ফ্যাক্ট, আপনার ডিরেকশন অনুযায়ী ফ্ল্যাটের ভিতরকার কিছু অল্টারেশনও হয়েছে।
অজু বজ্রাহতের মত কিছুক্ষণ বসে রইল। জবাব দিতে পারল না।
অজিতবাবুর সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন আপনার বায়োলজিক্যাল বাবা বাসুদেব সেনগুপ্ত।
অজু এবারও চুপ। মুখটা নোয়ানো।
শবর একটা শ্বাস ফেলে বলল, এসব লুকিয়ে কোনও লাভ আছে কি অজাতশত্রুবাবু?
অজু ধীরে মুখটা তুলে শবরের দিকে ফিরে বলল, আমাকে ক্ষমা করবেন। লজ্জা আর সংকোচের বশে আমি কথাটা গোপন করছিলাম।
নাউ, আউট উইথ দি ফ্যাক্টস, প্লিজ।
আমি যখন স্কুলে এইট-নাইনে পড়ি তখনই একদিন উনি আমার সঙ্গে স্কুলের বাইরে দেখা করেন। আমি ওঁকে চিনতাম, কিন্তু বাবা বলে জানতাম না। উনি সেদিন আমাকে একটা ভাল রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালেন। তারপর আমাকে একটু রেখে ঢেকে ওঁর সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা জানালেন। উনি বলেছিলেন, আমি ওঁরই ছেলে, তবে আমাকে উনি অনেকটা দত্তক হিসেবে শঙ্কর বসু ও রীণা বসুর কাছে দিয়েছেন।