রাগী মানুষ ছিলেন কি?
বেয়াদবি বরদাস্ত করতেন না। আমাদের খুব ফিটফাট থাকতে হত, নোংরা দেখলে রেগে যেতেন।
কাজে খুশি হলে বখশিশ দিতেন নাকি?
না। বখশিশ দিতেন না।
উনি কি কৃপণ ছিলেন?
না সাহেব। কিন্তু বখশিশ দিতেন না।
তোমাদের মাসের মাইনে কে দিত?
সতুবাবু। মেমসাহেবে সম্পর্কে দাদা। নিউ আলিপুরে থাকেন।
সতুবাবু কি প্রতি মাসে নিজে এসে টাকা দিয়ে যেতেন?
না। আমরা গিয়ে নিয়ে আসতাম।
সতুবাবুই কি এ বাড়ির দেখাশোনা করতেন?
হ্যাঁ। তবে উনি খুব একটা আসতেন না। ইদানীং এক পোমোটার বাবুকে নিয়ে মাঝে মাঝে এসে মাপ জোক করাতেন।
প্রোমোটারকে চেনো?
ঘোষবাবু। শুনেছি বড় প্রোমোটার।
তাঁর সঙ্গে তোমাদের কোনও কথাবার্তা হয়েছে?
না সাহেব। উনি আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন কেন?
এবার ঘটনার দিনের কথা বলো। সেই বাবুটি কখন এলেন?
আটটার পর।
চেহারা কেমন?
লম্বা-চওড়া চেহারা। হিরোর মতো।
দেখে কীরকম মনে হল?
আমি ভেবেছিলাম ফিল্মস্টার হবেন বোধহয়।
মেমসাহেবের সঙ্গে তাঁর কী কথাবার্তা হল জানো?
না সাহেব।
মেমসাহেব কি গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন?
তা হতে পারে সাহেব। আমি ওসব দেখিনি।
উনি কতক্ষণ ছিলেন?
এক ঘন্টার মতো হবে। একটু কমও হতে পারে।
তুমি কি কফি বা চা দিয়েছিলে?
মেমসাহেব বলেছিলেন যেন কথাবার্তার সময় ওঁদের ডিস্টার্ব না করি। তাই আমি দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আর ভিতরে যাইনি। তবে দরজার কাছেই ছিলাম, যদি ডাকেন তা হলে যেন শুনতে পাই।
ভিতরে কী কথাবার্তা হয়েছিল তা শুনতে পেয়েছিলে?
মেমসাহেব রাগারাগি করছিলেন, তবে আমি ইংরেজি জানি না বলে কথা কিছু বুঝতে পারিনি।
মেমসাহেব কি কান্নাকাটিও করেছিলেন?
হ্যাঁ। বাবুটি চলে যাওয়ার পর মেমসাহেব খুব আপসেট ছিলেন।
তুমি কি একেবারেই ইংরিজি জানো না? এই যে বললে আপসেট।
দুটো-একটা শব্দ জানি সাহেব।
সেরকম কোনও শব্দ মনে করতে পারো?
মেমসাহেব একবার বাস্টার্ড বলে গাল দিয়েছিলেন, মনে আছে।
ব্যস?
হ্যাঁ। আর কিছু মনে নেই।
বাবুটি যখন বেরিয়ে যায় তখন তাকে দেখেছ?
না সাহেব, আমি ভিতর দিকের দরজার পাশে ছিলাম। বাবু সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
তুমি জানো যে মেমসাহেব বাবুটিকে চড় মারেন?
জানি সাহেব, শব্দ শুনেছি।
আর কিছু?
দারোয়ান বলরাম বলেছিল বাবুর বাঁ-গাল থেকে রক্ত পড়ছিল। বাবু রুমাল দিয়ে গাল চেপে গিয়ে গাড়িতে ওঠেন।
মেমসাহেবকে তারপর কেমন দেখলে?
উনি খুব আপসেট ছিলেন। ইংরিজিতে কী সব বলতে বলতে দোতলায় উঠে গেলেন।
উনি সেদিন দুপুরে লাঞ্চ করেছিলেন কি?
না সাহেব আমি বেলা সাড়ে বারোটায় ওঁর দরজায় নক করি।
উনি সাড়া দেননি?
হ্যাঁ, দরজা খুলে দিয়ে বললেন, আমি কিছু খাব না। দুধ থাকলে এক গেলাস ঠান্ডা দুধ দিতে বললেন।
দুধটা খেয়েছিলেন কি?
হ্যাঁ সাহেব।
তারপর কী করলেন?
ঘরে চুপচাপ শুয়েছিলেন বলে মনে হয়।
খুনটা ক’টার সময় হয় তুমি তো জানো।
হ্যাঁ সাহেব, পুলিশের কাছে শুনেছি। বেলা দুটো থেকে আড়াইটের মধ্যে।
তুমি তখন কোথায় ছিলে এবং কেন তা পরিষ্কার করে বলো। পু
লিশকে সব বলেছি সাহেব। কিছু লুকোইনি। বেলা দেড়টা নাগাদ একটা ফোন আসে।
ফোন কি মেমসাহেব ধরতেন না?
না। মেমসাহেব ফোন ধরতেন না। কোনও জরুরি ফোন থাকলে আমি কর্ডলেস ফোনটা নিয়ে ওঁকে দিতাম।
সব ফোন তুমিই ধরো?
আজ্ঞে হ্যাঁ।
এবার বলো।
ফোনে একটা লোক আমাকে বলল, ভিখুচাচা তোমার ছেলে অ্যাক্সিডেন্টে জখম হয়েছে। খুব গহেরা জখম। আমরা তাকে পি জি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তুমি এখনই চলে এসো।
গলাটা কার তা চিনতে পেরেছিলে?
না।
জিগ্যেস করোনি?
হ্যাঁ। বলল, আরে আমি তোমার পাড়ার ছেলে রামু। তাড়াতাড়ি চলে এসো। বহুত ইমার্জেন্সি। আমার মাথার ঠিক ছিল না সাহেব। আমি দৌড়ে গিয়ে মেমসাহেবকে বললাম। উনি ছুটি দিয়ে দিলেন। আমি পাগলের মতো হাসপাতালে ছুটলাম। গিয়ে দেখি ওখানে আমার ছেলের নামে কাউকে ভরতি করা হয়নি। তখন ছুটলাম বাড়িতে। গিয়ে দেখি আমার বউ ঘুমোচ্ছ। তাকে ডেকে তুলে সব বললাম। তারপর ছুটলাম ছেলের ইস্কুলে। গিয়ে দেখি, ছেলে ঠিক আছে, কিছু হয়নি।
কখন ফিরলে?
বেলা চারটে হবে।
এসে কী দেখলে?
চারটের সময় মেমসাহেবকে রোজ কফি দিই। সোজা রান্নাঘরে গিয়ে কফি করে দোতলায় উঠে দরজা নক করতে গিয়ে দেখি দরজা খোলা রয়েছে। বাইরে থেকে বললাম, কফি এনেছি। মেমসাহেব সাড়া দিলেন না। ভাবলাম ঘুমোচ্ছন। পরদা সরিয়ে উঁকি মেরে দেখি মেমসাহেবের বডি অর্ধেকটা বিছানায় আর অর্ধেকটা নীচের দিকে ঝুলে রয়েছে। মাথা নীচের দিকে।
ঠিক আছে। বাকিটা আমরা জানি। পুলিশ তোমাকে কী বলেছে?
সাহেব, পুলিশ আমাদের খুব হয়রান করেছে। চড় থাপ্পড় মেরেছে। কিন্তু আমি বা বলরাম আমরা মেমসাহেবকে খুন করতে যাব কেন বলুন! আমরাই তো তা হলে ভাতে মরব।
ঘর থেকে কিছু চুরি গিয়েছিল বলে মনে হয়?
ঘরের জিনিসপত্র সবই আমি চিনি। সেসব কিছু চুরি যায়নি। তবে মেমসাহেবের ব্যাগ বা সুটকেস থেকে কিছু চুরি গিয়ে থাকলে তা বলতে পারব না। মেমসাহেবের জিনিস তো আমি ধরতাম না।
এবার যা জিগ্যেস করব খুব ভেবেচিন্তে তার জবাব দেবে।
বলুন সাহেব।
মাসখানেক আগে মেমসাহেব যখন এলেন তখন কি একাই এসেছিলেন?
হ্যাঁ সাহেব। মেমসাহেবের ফ্লাইট দেরিতে এসেছিল। আমার ওপর হুকুম ছিল সব রেডি রাখতে।