কেসটা খুনের, তাই আমাদের একটু সিরিয়াস হতে হয়েছে। তার ওপর সুব্রত বকশির কিছু পাওয়ারফুল কানেকশান আছে বলে আমাদের ওপর প্রেশার আসছে। যদিও আপনার একটু হ্যারাসমেন্ট হচ্ছে তবু একটু বিয়ার করুন, আপনাকে হয়তো আরও ইন্টারোগেট করা হবে। আপনি ওঁর সঙ্গে কতক্ষণ ছিলেন?
খুব বেশি হলে ঘণ্টা খানেক।
তার বেশি নয়?
না, বরং দু’-চার মিনিট কমই হবে।
যখন আপনি চলে আসেন তখন কি মিসেস বকশি শান্ত ছিলেন? মানে প্যাসিফয়েড হয়েছিলেন কি?
না। উই পার্টেড উইথ এ বিটার নোট। শি ওয়াজ আপসেট।
আর আপনি?
আমি খুবই হেলপলেস ফিল করেছিলাম। মিসেস বকশির মতো কঠিন মানুষ যে এতটা ইমোশনাল হতে পারেন সে ধারণা আমার ছিল না। এ যেন মিসেস বকশি নয়, অন্য কেউ। যেন বয়ঃসন্ধির কিশোরী। সাধারণত কম বয়সে প্রথম প্রেমে দাগা খেয়ে মেয়েরা ওরকম ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু মিসেস বকশির মতো প্র্যাকটিক্যাল ডাউন টু আর্থ সেনসিবল মহিলাদের এরকম হওয়ার কথা নয়।
আপনার কি মনে হয় উনি অভিনয় করছিলেন?
না, একেবারেই না। অভিনয় করবেন কেন?
আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্য।
না-না মিস্টার দাশগুপ্ত, অভিনয় হতেই পারে না, অভিনয় হলে ঠিকই ধরতে পারতাম।
তা হলে এই নতুন রূপের মিসেস বকশিকে দেখে আপনি ইমপ্রেসড?
তা এক রকম বলতে পারেন।
আপনি কি একটুও সফট হয়ে পড়েননি?
সফট কথাটার যদি বাঁকা অর্থ না ধরেন তবে বলতে পারি, হ্যাঁ, ওঁর প্রতি সহানুভূতিও হচ্ছিল। কিন্তু আমি একজন ওয়েদারবিটুন ম্যান, বয়স ত্রিশ হলেও অভিজ্ঞতায় পোড় খাওয়া মানুষ। সহানুভূতি হয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা কোনও দুর্বলতা নয়। ওঁকে আর প্রশ্রয় দেওয়া বা ওঁর কুক্ষিগত হয়ে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
খুনটা কখন হয় তা কি আপনি জানেন?
আপনাদের কাছ থেকেই জেনেছি। দুপুর দুটো-আড়াইটে নাগাদ।
সে সময়ে আপনি কোথায় ছিলেন?
সেও পুলিশকে বলেছি, তারা আমার কথা বিশ্বাস করছে না।
তবু আর একবার বলুন। আমি হয়তো বিশ্বাস করতেও পারি।
দুপুর একটা-দেড়টা থেকে বিকেল চারটে অবধি আমি আমার একটা ট্রাকের মধ্যে শুয়ে ঘুমোচ্ছিলাম।
কোথায়?
বেলতলায় আমার ট্রলারগুলো রাখার জন্য আমি একটা জমি লিজ নিয়েছি। ছোটখাটো সারাইয়ের কাজও হয়। সেদিন আমি নিজেই আমার ট্রাকের একটা জখম চাকা মেরামত করছিলাম। খুব পরিশ্রান্ত হওয়ায় ড্রাইভারের কেবিনে উঠে শুয়ে পড়ি।
কোনও সাক্ষী আছে?
না।
আপনার গ্যারেজ পাহারা দেয় কে?
ওয়াচম্যান আছে।
ওয়াচম্যান আপনাকে দেখেনি?
সেদিন ওয়াচম্যান ছুটি নিয়েছিল। ভোররাতে তার মা মারা যায়। ফলে কেউ ছিল না। ওয়াচম্যানকে পুলিশ জেরাও করেছে।
জানি। মিসেস বকশির বাড়ি থেকে বেরিয়ে আপনি কোথায় গেলেন?
ডোভার লেনে আমার অফিসে। সেদিন আমার দম ফেলার সময় ছিল না। সেখান থেকে বেরিয়ে বেলতলায় যাই।
আপনার অ্যালিবাই কিন্তু দুর্বল।
কান্ট হেলপ ইট। এবার কি আমি যেতে পারি?
পারেন। আসুন।
২. এই বাড়ির কাজের লোক
তুমি এই বাড়ির কাজের লোক ভিখু?
‘আজ্ঞে হ্যাঁ।
কতদিন হল এ বাড়িতে কাজ করছ?
প্রায় দশ বছর।
বাড়ি কোথায়?
ছাপরা জেলা।
এ বাড়িতে কীভাবে কাজে ঢুকলে?
আমার কাকা এ-বাড়িতে কাজ করত। কাকা এখন দোকান করে। আমাকে কাকা চাকরিতে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে।
তুমি তো বেশ ভাল বাংলা বলো!
আমি তো জন্ম থেকেই কলকাতায় আছি। এখানেই মানুষ।
এ বাড়িতে তোমার কাজ কী?
এ বাড়িতে তো কেউ থাকে না। আমার কাজ ঘরদোর বিছানা-টিছানা সব পরিষ্কার রাখা। বছরে একবার মেমসাহেব আসেন, তখন তাঁর দেখভাল করতে হয়।
মেমসাহেবের বাপের বাড়ির লোকেরা কোথায়?
মেমসাহেবের তো কেউ নেই। বড় মালিক আর মালকিনও এখানে থাকতেন না। আমেরিকায় থাকতেন। সেখানেই একটা অ্যাক্সিডেন্টে দু’জনেই মারা যান। এ বাড়িও বিক্রির চেষ্টা চলছে।
তোমাকে কত মাইনে দেওয়া হয়?
আড়াই হাজার টাকা।
বাড়ির কাজের লোকের পক্ষে মাইনেটা তো ভালই, কী বলো?
না সাহেব, এ টাকায় সংসার চালানো মুশকিল।
তোমার সংসারে কে আছে?
আমার বউ আর চার ছেলেমেয়ে। দুই বেটা, দুই বেটি।
এ বাড়িতেই থাকো?
না সাহেব। ফ্যামিলি নিয়ে এ বাড়িতে থাকার হুকুম নেই। আমার পরিবার থাকে তিলজলায়, একটা বস্তিতে।
তোমার চলে কী করে?
আমার বউও কাজ করে। বাড়ির কাজ।
ফ্যামিলি নিয়ে এখানে থাকার হুকুম নেই কেন? এ বাড়িতে তো আউট হাউস আছে এবং সেগুলো ফাঁকাই পড়ে থাকে।
বাচ্চাকাচ্চা থাকলে বাড়ি নোংরা করবে, বাগানের গাছপালা ছিড়বে বলেই হুকুম নেই। তা ছাড়া অনেকে বাড়ি দখল-টখল করে নেয়।
এ বাড়িতে তো অনেক দামি জিনিস রয়েছে দেখছি। তোমাকে কি মেমসাহেব খুব বিশ্বাস করতেন?
তা জানি না। তবে থানায় আমার নাম ঠিকানা ফটো সব রেকর্ড করা আছে। কোনও জিনিস চুরি গেলে পুলিশ তো আমাদেরই ধরবে।
এবার ঘটনার দিনের কথা বলো।
ঘটনার দিন সকালে মেমসাহেব আমাকে ডেকে বলে দিলেন, একজন বাবু দেখা করতে আসবেন, ঘরদোর যেন ফিটফাট থাকে।
ঘরদোর তো ফিটফাটই আছে দেখছি।
হা সাহেব। এ বাড়ি সবসময়ে ফিটফাট থাকে। তবু মেমসাহেব বললেন বলে আমি আরও একটু ঝাড়পোঁছ করলাম।
মেমসাহেব কীরকম লোক ছিলেন বলে তোমার মনে হয়?
ভাল লোক ছিলেন।
কীরকম ভাল?
ঝুট ঝামেলা কিছু করতেন না। চুপচাপ থাকতেন।