ঠিকই শুনেছেন। তারপর বলুন, সকাল সোয়া আটটায় পৌঁছে আপনি কী দেখেছিলেন?
নাথিং অফ এনি ইমপর্টেন্স। ফটক দিয়ে ঢোকার সময় দারোয়ান আটকাল। তার কাছে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক থাকে। সেটা দেখে ছেড়ে দিল। আমি দু’-এক মিনিট দাঁড়িয়ে বাগানটা দেখলাম। তারপর বৈঠকখানায় ঢুকলাম। একজন চাকর এসে স্লিপ লিখিয়ে নিয়ে ভিতরে গেল। দু’-তিন মিনিটের মধ্যেই মিসেস বকশি এসে ঘরে ঢুকলেন।
ডিসক্রাইব হার। ওঁকে কীরকম মুড আর পোশাকে দেখলেন?
গায়ে একটা কিমোনো ছিল। গাঢ় বেগুনি রঙের ওপর একটা ড্রাগন আঁকা। মনে হল খটি জাপানি জিনিস। এ তো গেল পোশাক। আর মুড একটু অফ ছিল। আমাকে দেখেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন।
চাকরবাকরদের সামনেই?
চাকরটা বোধহয় তখন বেরিয়ে গিয়েছিল। ঠিক লক্ষ করিনি। তবে কে দেখল না-দেখল উনি তার পরোয়া করতেন না।
আপনার কি মনে হয় না যে উনি আপনার প্রতি ইমোশনালি অ্যাটাচড ছিলেন।
সেদিনই প্রথম মনে হল, মে বি শি ইজ সিরিয়াসলি ইন লাভ উইথ মি।
আগে মনে হয়নি?
ইমোশনের চেয়ে ওঁর বোধহয় সেক্সয়াল আর্জটাই বেশি ছিল বলে মনে হত।
উনি আপনাকে চিঠিপত্র লিখতেন না?
হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে লিখতেন।
লাভ লেটার?
ঠিক লাভ লেটার বলা যায় না। আমি হঠাৎ আমেরিকার কারবার গুটিয়ে চলে আসায় উনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ওঁর ধারণা ছিল আমি ওঁকে বিট্রে করেছি।
আপনি হঠাৎ চলে এলেন কেন?
হঠাৎ করে আসিনি। মাস দুই ধরে ধীরে ধীরে কাজকারবার গুটিয়ে তৈরি হয়েই এসেছি। তবে ব্যাপারটা সুব্রতদা বা তার স্ত্রীকে জানাইনি।
জানাননি কেন?
আমার বিশ্বাস ওঁরা বাগড়া দিতেন। বিশেষ করে মিসেস বকশি।
ওঁদের তো সন্তান নেই, না?
না। হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
এমনি, হঠাৎ মনে হল।
ওঁরা অবশ্য অ্যাডপ্ট করার কথা ভাবছিলেন।
অ্যাডপ্ট কি শেষপর্যন্ত করেছেন?
যতদূর জানি, না।
সুব্রতবাবুর বয়স এখন কত? আপনারা তো তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, আপনারাই তো সেটা জানবেন।
আমি এই কেসটা সদ্য হাতে নিয়েছি। সুব্রতবাবু তার আগেই আমেরিকায় ফিরে গেছেন। ওঁর বায়োডাটা এখনও আমার স্টাডি করা হয়নি।
পঁয়তাল্লিশ-ছেচল্লিশ হবে।
বিয়ে করার বয়স আছে বলছেন।
নিশ্চয়ই। ও দেশে এখনও অনেকে এই বয়সে প্রথম বিয়ে করে।
আপনি কি সত্যিই জানেন না সুব্রতবাবুর কোনও প্রেমিকা বা বান্ধবী আছে কিনা।
সত্যিই জানি না।
থাকা কি সম্ভব?
থাকতেই পারে। কোয়াইট নরমাল।
হ্যাঁ, তারপর অরুণিমা বকশির সঙ্গে আপনার দেখা হওয়ার ঘটনাটা বলুন।
উনি আমাকে এমব্রেস করলেন, বলেছি তো।
হ্যাঁ।
কিছুক্ষণ একটু ইমোশনাল কথাবার্তাও বললেন, তার মধ্যে প্রেমের কথাই ছিল, ওঃ আই লাভ ইউ সো মাচ! আই মিস ইউ সো মাচ! ওঃ ডিয়ারেস্ট, ওঃ ডার্লিং, ওঃ সুইটহার্ট! এইসব আর কী।
আপনার রিঅ্যাকশন কী হল?
খুব একটা কিছু নয়। বরং বছরখানেক বাদে ফের এইসব আমার খারাপই লাগছিল। ভদ্রমহিলার জন্য একটু দুঃখও হচ্ছিল।
এনি সেক্স?
বি সেনসিবল মিস্টার দাশগুপ্ত। ইট ওয়াজ আর্লি ইন দি মর্নিং এবং আমাদের আগের রিলেশনটাও তখন ছিল না, অন্তত আমি এখন একদম আলাদা মানুষ।
ওকে, ওকে। ঝগড়া হল কেন?
ঝগড়া। না ঝগড়া হয়নি। ঝগড়া হতে দুটো পক্ষ লাগে। আমি সম্পূর্ণ প্যাসিভ ছিলাম। উনি একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।
উত্তেজিত হলেন কেন?
উনি পুরনো কথা তুলে আবার আমাদের আগের সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন, আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার জন্য ঝোলাঝুলি করতে থাকেন, এমনকী সুব্রতদাকে ডিভোর্স করে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেছিলেন। দেখলাম ভদ্রমহিলা আমার জন্য বেশ পাগল হয়ে উঠেছেন। খুব ডেসপারেট, অথচ আমি ওঁকে কুল ক্যালকুলেটিং অ্যান্ড ক্রুয়েল টাইপের বলে জানতাম। বেহিসেবি হওয়ার মতো মহিলা উনি ছিলেন না।
আপনি ওঁর প্রস্তাবে সায় দেননি বোধহয়?
দেওয়া সম্ভব ছিল না। আমার জীবনের ধারা পালটে গেছে। তা ছাড়া, আপনাকে তো বলেইছি আমি ওঁর প্রতি কখনও অ্যাট্রাকটেড ছিলাম না, উনি আমাকে ব্যবহার করেছেন, আমিও নিজেকে ব্যবহৃত হতে দিয়েছি লাইক এ গিগোলো, তার বেশি কিছু নয়।
সেদিন কি ওঁর প্রস্তাবে আপনি রেগে গিয়েছিলেন?
একটুও না। বলেছি তো, ভদ্রমহিলার জন্য আমার করুণা হচ্ছিল, আমি খুব শান্তভাবে ওঁকে বোঝনোর চেষ্টা করছিলাম, লজিক্যালি, কিন্তু উনি ক্রমশ রেগে উঠছিলেন, ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিলেন।
রেগে গিয়ে উনি কী করলেন?
চেঁচামেচি করলেন, কাঁদলেন, আমাকে যা খুশি বলে অপমান করলেন, আমি কিছুই গায়ে মাখিনি।
বাড়িতে কজন ঝি-চাকর ছিল বলে আপনার অনুমান?
খুব বেশি নয়। দারোয়ান আর একজন চাকরকেই আমি দেখেছি।
কোনও মহিলা?
না, কারও কোথাও সাড়াশব্দও পাইনি।
বাই দি বাই, আপনি সেদিন কীসে করে ওঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন?
আমার একটা গাড়ি আছে।
নিজে চালান?
তা তো বটেই।
কী গাড়ি আপনার?
হুন্ডাই।
মিসেস বকশি কি আপনাকে মারধর করেছিলেন?
উত্তেজনার বশে উনি আমাকে একটা চড় মারেন এবং গালে খিমচে দেন। পুলিশ সেই দাগ থেকে ধারণা করে নেয় যে, আমি যখন ওঁকে গলা টিপে মারছিলাম তখন নাকি উনি আত্মরক্ষার জন্য আমাকে খিমচে দিয়েছিলেন, পুলিশ খুব সরল পথে চলতে চায়, তাই না?
ব্যাপারটাকে আপনিই বা জটিল ভাবছেন কেন?
আমি জটিল ভাবছি না, আপনারা যত সরল সিদ্ধান্তে আসছেন আমার পক্ষে পরিস্থিতি ততই জটিল হয়ে উঠছে। এই যে আপনি আমাকে তলব করে লালবাজারে টেনে এনেছেন তাতে আমার কত জরুরি কাজ পণ্ড হচ্ছে তা কি জানেন?