একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিহির বলে, আমি থ্রিলার পড়ি, এক সময়ে আমেরিকায় লং ডিসট্যান্স ড্রাইভের পর মোটেলে সময় কাটানোর জন্য পড়তাম। কাজেই আপনি যা বলছেন তা বুঝতে আমার অসুবিধে হচ্ছে না। কিন্তু আপাতত কিছুই তেমন মনে পড়ছে না আমার। পড়লে জানাব।
ধন্যবাদ, বাই দি বাই, জনাদেবী দেখতে কেমন তা বলবেন?
অবাক হয়ে মিহির বলে, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
এমনি, কৌতূহল মাত্র।
মৃদু হেসে মিহির বলল, এ যাবৎ যে কজন পুলিশের লোক দেখেছি তার মধ্যে আপনাকেই ইন্টেলিজেন্ট বলে মনে হয়েছে। ফালতু প্রশ্ন করার লোক আপনি নন। তবে মেয়েদের রূপের ব্যাপারে আমার মতামতকে গুরুত্ব দেবেন না। আমার সৌন্দর্য বিচারের চোখ নেই। আমার একটা খুড়তুতো বোন আছে, তার সঙ্গে আমার খুব ভাব। সে বলে, দুখুদা, তুই কিন্তু তোর পাত্রী দেখতে যাস না, তা হলে একেবারে কেলোর কীর্তি হবে।
শবর মৃদু হেসে বলল, তা হোক। তবু আপনার জাজমেন্টটাই আমি জানতে আগ্রহী।
জনা হল গুঁড়ি গুডি টাইপ। শুনেছি খুব ভাল ছাত্রী। যাদবপুর থেকে এম টেক-এ ফাস্ট ক্লাস পেয়েছিল। ভাল ছাত্রীরা যেমন দেখতে হয় জনা ঠিক তেমনি চোখে ভারী চশমা, মুখ গম্ভীর, হাসিঠাট্টা নেই, কথাবার্তা কম, রং একটু ফ্যাকাশে, স্বাস্থ্য রোগা এবং মুখটা রসকষহীন।
বাঃ, এই তো চমৎকার বিবরণ দিলেন। কে বলল আপনার বিচারকের চোখ নেই?
কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছেন? থ্যাঙ্ক ইউ।
এবার বলি, জনা কেমন টাইপের মেয়ে? ডেসপারেট? রাগী? টেম্পারমেন্টাল? মুডি? না কি ঠান্ডা ভালমানুষ?
বোঝা মুশকিল। ওর এক্সপ্রেশন নেই তেমন। তা ছাড়া আমি ওকে স্টাডি করিনি কখনও। কথাটথা বলতাম ঠিকই, তবে মনোযোগ দিইনি।
সুব্রত বকশি কি তার বোনেরই মতো?
না-না, সুব্রতদা অন্যরকম। দারুণ স্মার্ট, আড্ডাবাজ, বুদ্ধিমান, ডাউন টু আর্থ ম্যান। বেশ ভাল স্কলারও বটে। শুধু ওঁর দাম্পত্য সম্পর্কটাই গোলমেলে।
কীরকম গোলমাল?
সেটাও তো বলেছি আপনাকে।
আবারও না হয় বলুন।
উনি ওঁর স্ত্রীকে খুব তোয়াজ করতেন, খুবই খাতির করতেন, কিন্তু আমার কেন যেন মনে হত স্ত্রীকে উনি মোটেই ভালবাসেন না।
বিশেষ কোনও লক্ষণ দেখেছেন কি?
ঠিক সেভাবে বলা যায় না। তবে অরুণিমা বকশি যে আমার সঙ্গে ইনভলভড এটা জেনেও ওঁর কোনও ভাবান্তর ছিল না। স্ত্রী ব্যভিচারিণী হলে স্বামীর তো স্বাভাবিকভাবেই রি-অ্যাক্ট করা উচিত, তাই না?
উনি নপুংসক নন তো!
মিহির হেসে ফেলে বলল, তা তো আমার জানা নেই।
মিসেস বকশি তার স্বামীর সম্পর্কে কোনও মন্তব্য আপনার কাছে করেননি?
না। ওই ব্যাপারে উনি খুব রিজার্ভড ছিলেন। ওঁর স্বামী ইমপোটেন্ট কিনা তা আমাকে বলবার লোক উনি নন। আমাদের ইন্টিম্যাসিটা শুধু ফিজিক্যাল লেভেলেই ছিল, হৃদয়ঘটিত নয়।
তা হলে উনি জনাকে হিংসে করতেন কেন?
ফিজিক্যাল পজেশনও তো একটা পজেশন। উনি ওটাও ছাড়তে চাননি।
ঠিক আছে, এ প্রসঙ্গটা থাক। এবার মিসেস বকশির মৃত্যুর প্রসঙ্গে আসি। উনি মারা যাওয়ায় আপনি কি দুঃখ পেয়েছেন?
যে কারও মৃত্যুই দুঃখজনক।
আপনি আপনার কথা বলুন।
হ্যাঁ, আই ফেল্ট স্যাড।
কে ওঁকে খুন করতে পারে বলে মনে হয়?
নো আইডিয়া। পুলিশ যে কতবার কতভাবে এ প্রশ্ন করেছে তার হিসেব নেই।
জানি, পুলিশকে একই প্রশ্ন বারবার করতেই হয়।
উইথ থার্ড ডিগ্রি?
শবর দাশগুপ্ত ম্লান একটু হেসে বলল, পুলিশের কাজ তো ভাল কাজ নয়। অপরাধী আর অপরাধ যে কত জটিল আর কুটিল তা যদি জানতেন তা হলে রাগ করতেন না।
পুলিশের কাজ কীরকম এবং কাদের নিয়ে তা আমি খানিকটা জানি। কিন্তু ইন্টেলিজেন্ট হতে পুলিশের বাধা কোথায় বলুন তো! আপনাদের ওই মিস্টার নাগের কথাই ধরুন, কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ উনি ঠাস করে একটা চড় মেরে বসলেন! যেন মারের চোটেই আমি স্বীকারোক্তিটা করে ফেলব। আমি ওঁকে উলটে মারলে কী হত জানেন?
জানি। আপনি ফিজিক্যালি একজন স্ট্রং ম্যান। হয়তো ক্যারাটে জানেন।
ক্যারাটে জানি বলেই রক্ষে। আমরা ক্যারাটের সঙ্গে ধৈর্য ও স্থৈর্যও শিখেছি। কাজেই চরম প্রয়োজন ছাড়া কাউকে মারি না। মার্শাল আর্ট তো মারপিট নয়, ওটা একটা ধরন।
জানি। তবে আমি তো নাগ নই, আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করিনি।
আপনার কথা আলাদা। আপনি শুধু ভাল ব্যবহারই করেননি, অকারণ হাজতবাসের হাত থেকেও মুক্তি দিয়েছেন। সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।
ধন্যবাদ, আশা করি আপনি কো-অপারেট করবেন।
করব। আপনার মোডাস অপারেন্ডি খুবই বাস্তবসম্মত এবং লজিক্যাল। মিসেস বকশির খুনিকে ধরতে যদি পারেন তা হলে আমি খুশিই হব। কিন্তু মুশকিল হল আমার কাছে তেমন কোনও তথ্য নেই যা আপনার সাহায্যে আসতে পারে।
ধন্যবাদ। মিসেস বকশি কীভাবে খুন হন তা তো আপনি জানেনই।
হ্যাঁ, গলা টিপে ওঁকে খুন করা হয়েছিল।
ওঁর বাড়িতে আপনি গিয়েছিলেন সকাল আটটা বেজে পনেরো মিনিটে। ঠিক তো?
দু’-এক মিনিট এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে মোটামুটি সোয়া আটটাই ধরে নিতে পারেন।
বাড়িতে গিয়ে কী দেখলেন?
বিশাল বাড়ি, বিরাট কম্পাউন্ডও, মিসেস বকশিদের ফ্যামিলি বনেদি বড়লোক। আয়রন সাইড রোডের মতো ঘ্যাম জায়গায় ওরকম বাড়ির দাম কয়েক কোটি টাকা।
সে তো বটেই।
বাড়ি দেখেই আমি ট্যারা হয়ে গিয়েছিলাম। শুনেছি, একজন দারোয়ান আর একটা চাকর সেই বাড়ি মেনটেন করে।