সেটা কীরকম?
আমাকে খুবই চোখে চোখে রাখতেন এবং থ্রেট করতেন।
জনা কতদূর এগিয়েছিল?
ফোন করত। রোম্যান্টিক কথাবার্তা বলত, প্রেমে পড়লে যেমনটা বলে আর কী?
আপনি কি প্রশ্রয় দিতেন?
দিতাম। মেয়েদের আমি সহজে চটাই না।
আপনি বেশ বুদ্ধিমান মানুষ।
বুদ্ধি না হলে কি আমার চলে?
এবার মিসেস বকশির খুনের ঘটনায় আসি।
আমার যা বলার তো বলেছি।
আবার বলুন।
খুনের দিন সকালে আমি মিসেস বকশির সঙ্গে ওঁর আয়রন সাইড রোডের বাড়িতে দেখা করি। উনিই ডেকে পাঠিয়েছিলেন। শনিবার ছিল।
কী কথাবার্তা হয়েছিল?
উনি আমার উপর ভীষণ রেগে ছিলেন।
রাগের কারণ?
সেটাও বলেছি, হঠাৎ আমেরিকা থেকে চলে আসা এবং ওঁদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা হল একটা কারণ। আরও একটা কারণ হল জনা। আমি চলে আসায় জনাও নাকি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে নিরস্ত করা হয়।
খুনটা হয়েছিল দুপুরে।
খবরের কাগজে তাই তো পড়েছি।
খুনটা আপনি করেননি?
কেন করব সেটা তো বলবেন! মিসেস বকশির সঙ্গে আর আমার বিজনেস রিলেশন
ছিল না। দেশে ফিরে আসি। একে-একে তিনটে ট্রেলার কিনি এবং গত আট মাসে আমার ব্যাবসা মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। মিসেস বকশির প্রতি আমার কোনও সেন্টিমেন্টও নেই। খুন করতে যাব কেন?
মিসেস বকশি কি আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে চেষ্টা করেছিলেন?
ব্ল্যাকমেল করার ব্যাপারটা আপনাদের মাথায় কে ঢোকাল কে জানে! আমি তো খোলামেলা মানুষ। যা করেছি তা স্বীকার করি। লুকোনোর তো কিছু নেই আমার। আমাকে ব্ল্যাকমেল করার মতো গুপ্ত কিছুই থাকতে পারে না।
কিন্তু ভাইস ভার্সা। আপনি ওঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেননি তো!
আজ্ঞে, সেটাও পুলিশ বলছে। কিন্তু তারা এখনও কোনও সূত্র পাচ্ছে না। আমি বলি কী, একটু স্ট্রং হান ছাড়া আমাকে নিয়ে টানা-হ্যাঁচড়া করাটা কিন্তু হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে।
আপনার পক্ষে মিসেস বকশির গুপ্ত খবর জানা কি অসম্ভব?
মিসেস বকশি স্ট্রং মাইন্ডেড মহিলা। ওঁর গুপ্ত ব্যাপার বলতে আমার সঙ্গে ফিজিক্যাল রিলেশন। তিনি সেটা গোপন করতে যাবেন কোন দুঃখে? সুব্রতদাকে তো ওঁর কোনও ভয় ছিল না। বরং সুব্রতদাই ওঁকে ভয় পেতেন।
আপনার অ্যালিবাই স্ট্রং নয়।
জানি। কিন্তু সেটাই তো কোনও প্রমাণ হতে পারে না।
মিহিরবাবু, আপনি কিন্তু পুলিশকে যথেষ্ট হেল্প করছেন না।
হেলপ করার দায় কী বলুন। আপনার পুলিশের লোক যদি আমাকে অকারণে হ্যারাস আর থ্রেট না করত তা হলে আমি নিশ্চয়ই হেল্প করতাম। ইন্সপেক্টর নাগ একজন অভদ্র লোক। তিনি আমাকে প্রথম ইন্টেবোগেশনের সময়ে একটা থাপ্পড় মেরেছেন। আর কুৎসিত গালাগালের তো হিসেব নেই। ওঁরা ধরেই নিয়েছেন খুনটা আমিই করেছি, এখন কনফেস করে ফেললেই হয়।
মিস্টার নাগের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।
কেন, নাগসাহেবের হয়ে আপনি ক্ষমা চাইবেন কেন? আর ক্ষমা চাওয়াটাও অর্থহীন। লোকটাকে দেখেই মনে হয় রাফিয়ান টাইপ। দরকার হলেই ফের চড়-থাপ্পড় মেরে বসবে। আপনি কাজ উদ্ধারের জন্য ক্ষমা চাইছেন বটে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার আর বিশেষ কিছু বলার নেই।
জনাদেবী সম্পর্কে যদি কিছু জিজ্ঞেস করি?
জনা সম্পর্কে যা বলার তো বলেইছি।
আপনি বলেছেন জনাদেবী সম্পর্কে আপনি ইন্টারেস্টেড নন।
হ্যাঁ, এবং সেটা সত্যি কথা। মেয়েদের নিয়ে রোমান্টিক চিন্তা করার সময় আমার হাতে নেই।
জনাদেবী কি এখনও আপনার প্রতি দুর্বল?
তা জানি না। তবে মাঝে মাঝে চিঠি দেয়, ফোনও করে।
আপনি চিঠির জবাব দেন না?
দিই, দেব না কেন? তবে তাতে ভালবাসার কথা থাকে না।
জনাদেবীর চিঠিতে কি ভালবাসার কথা থাকে?
খুব থাকে। তবে সেসব হচ্ছে শ্যাম্পেনের ফেনার মতো, ওর মধ্যে বস্তু বিশেষ থাকে।
আপনি তো দেখছি নর-নারীর প্রেমে বিশ্বাসী নন।
আপনাকে তো বলেছি, আমি খাটিয়ে পিটিয়ে মানুষ। দেশে ফিরে আসার পর আমাকে নতুন করে আবার জীবন সংগ্রাম করতে হচ্ছে। নেপাল, ভুটান, আসাম, পাঞ্জাব জুড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করা তো চাট্টিখানি কথা নয়।
আপনার ফ্যামিলি সম্পর্কে যদি কিছু জানতে চাই?
স্বচ্ছন্দে।
আপনার মা-বাবা? বাবা রিটায়ার্ড পোস্টমাস্টার, সামান্য পেনশন পান। মা বরাবর হাউস ওয়াইফ, দু’জনেই নানারকম অসুখে ভুগছেন। আমার দুই দাদা আছেন। একজন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট–তাঁর প্রচুর পয়সা। তিনি আলাদা হয়ে গেছেন। মেজ দাদাও আলাদা। তিনি চাকরি করেন দিল্লির একটি ইংরেজি পত্রিকায়। মোটামুটি এই হচ্ছে আমার ফ্যামিলি।
মা বাবাকে কে দেখে?
কেউ দেখে না। মা-বাবা দুজনেই এখনও পরস্পরের দেখাশোনা করেন। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার পর আমি তাঁদের কাছেই থাকি বটে, কিন্তু কাজের চাপে তাদের ওপর বিশেষ নজর দিতে পারি না। কিন্তু এসব জানতে চাইছেন কেন? এগুলো তো আপনার কেসে ইরালেভ্যান্ট।
আমি আসলে আপনাকে অফ গার্ড ধরতে চাইছি। অসতর্ক মনে যদি হঠাৎ কিছু রিল্যাভেন্ট বলে ফেলেন।
মিহির একটু হেসে বলে, আপনার কি এখনও ধারণা যে, আমি সত্য গোপন করছি?
অফ কোর্স! আপনার চোখে-মুখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে আপনি সত্যি কথা বলছেন। অন্তত সব সময়ে নয়।
কী যে বলেন শবরবাবু! গোপন করার মতো কিছুই নেই আমার।
এমনও হতে পারে যে, আপনি ইচ্ছে করে গোপন করছেন না। হয়তো যেটা সামান্য কোনও ঘটনা যা হয়তো কোনও একটা কথা বা আচরণ, যেটাকে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না, অথচ সেটা তদন্তের পক্ষে খুবই গুরুতর হয়ে দাঁড়াতে পারে।