হ্যাঁ।
আপনি কি মনে করেন যে, ত্রিশ বছরের এক যুবকের সঙ্গে উনচল্লিশ বছরের এক মহিলার প্রেম হওয়া সম্ভব নয়?
তা হতেই পারে। আজকাল নানারকম রিলেশন তৈরি হচ্ছে।
আপনার ক্ষেত্রে কী হয়েছিল?
সুব্রত বকশি আমাকে বিজনেসের ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন। নিউ ইয়র্কে তিনি আমার অফিসেরও ব্যবস্থা করে দেন। তিনি থাকতেন কুইনসে। আমাকে প্রায়ই বাড়িতে নেমন্তন্ন করতেন। মিসেস বকশিও আমাকে বেশ পছন্দ করতেন।
কী ধরনের পছন্দ?
আমি গেলে খুশি হতেন, লক্ষ করেছি।
তারপর?
দু-তিন মাসের মাথায় তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন।
সেটা কীরকম ঘনিষ্ঠতা? ফিজিক্যাল?
হ্যাঁ।
আপনিও রাজি হয়ে গেলেন?
আমার উপায় ছিল না। মিসেস বকশিই আসলে কোম্পানি চালাতেন। তার ইচ্ছেতেই সব হত। সুব্রতবাবু ছিলেন ফ্রন্ট মাত্র।
তার মানে আপনি মিসেস বকশিকে খুশি করার জন্যই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন?
আমেরিকায় ফিজিক্যাল রিলেশনটা জলভাত। মিসেস বকশি বাঙালি হলেও ওঁরা দুই পুরুষের আমেরিকান। উনি মার্কিন মেইনস্ট্রিমের মানুষ। বাংলা ভাল বলতেও পারতেন না। কোনও সংস্কারও মানতেন না।
এ ব্যাখ্যা তো আপনার।
আপনি তো আমার ব্যাখ্যাই শুনতে চাইছেন।
ঠিক কথা। বলুন। আপনার ভার্সানটাই শোনা যাক।
আমি আমার ভার্সানটাই বলতে পারি, তা থেকে ডিডাকশন যা করার তা আপনি করবেন। আমার মনে হয় মিসেস বকশি সেই সময়ে সুব্রতবাবুর ওপর আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। আমাকে উনি একসঙ্গে থাকার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
লিভিং টুগেদার?
হ্যাঁ, আমি রাজি হইনি।
রাজি না হওয়ার কারণটা কী?
আমি ওঁর প্রতি আসক্ত ছিলাম না। জীবিকার প্রয়োজনেই ওঁকে খুশি করার চেষ্টা করতাম মাত্র।
আপনাকে তো মোটেই ভাল লোক বলে মনে হচ্ছে না মশাই।
আমি ভাল লোক বলে দাবি করছি না। তবে আমি ভীষণ রকমের খারাপ লোকও নই। প্র্যাকটিক্যাল। জীবন সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাকে নানারকম আপসরফা করতে হয়েছে।
তাই দেখছি। তা হলে আপনার ব্যাবসা মিসেস বকশির কল্যাণে বেশ ভালই চলছিল?
মোটামুটি। মিসেস বকশি আমাকে ব্যবহার করতেন বটে, তা বলে উনি খুব দরাজ হাতের মহিলা ছিলেন না। খুব হিসেবিই ছিলেন।
তাতে তো আপনার ক্ষতি হয়নি। কারণ আপনি তো আর ওঁদের কর্মচারী ছিলেন না, কোলাবরেটর ছিলেন মাত্র। মিসেস বকশি কৃপণ হলেই বা আপনার ক্ষতি কী?
ঠিক কথা। আপাত দৃষ্টিতে আমার ওপর ওঁর কোনও ফিনানসিয়াল কন্ট্রোল থাকার কথা নয়। কিন্তু মিসেস বকশিকে চিনলে আপনার ধারণা পালটে যেত। উনি আমার কাছ থেকে নিয়মিত নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন।
আমেরিকায় ওসব হয় নাকি?
কেন হবে না? সেটা তো আর সাধুর দেশ নয়।
মিসেস বকশি কি সুন্দরী ছিলেন বলে আপনার মনে হয়?
না। তবে নিয়মিত ব্যায়াম ট্যায়াম করে নিজেকে ট্রিম রাখতেন।
মিসেস বকশির সঙ্গে তার হাজব্যান্ডের রিলেশন কীরকম ছিল?
ঝামেলাহীন। দু’জনেই বেশ কুল কাস্টমার। ওঁদের বাড়িতে বা র্যানচে যখন গেছি তখন দু’জনকে বেশ ইন্টিমেট বলেই ধারণা হত। ঝগড়া-টগড়া শুনিনি। সুব্রতবাবু তার স্ত্রীর অনুগত ছিলেন বলেই মনে হত।
সুব্রতবাবুর কি এক্সট্রা ম্যারিটাল কোনও রিলেশন ছিল?
থাকলেও আমি জানি না। আমি নিজের কাজকারবার নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।
মিসেস বকশির সঙ্গে আপনার রিলেশনটা সুব্রতবাবু কি টের পাননি?
টের না পাওয়ার কথা নয়। আমার ধারণা সুব্রতবাবু সবই জানতেন।
কীভাবে বুঝলেন?
অন্তত দু’বার উনি আমাকে ওঁর বাড়িতে খুবই অদ্ভুত সময়ে দেখতে পান। তা ছাড়া মিসেস বকশির সঙ্গে উইক এন্ড কাটাতেও আমি কয়েকবার বাইরে গেছি। সুব্রতদার তখন হয়তো কোনও টুর থাকত। কিন্তু টের না পাওয়ার কথা নয়। ওসব উইক এন্ডেও ওঁদের মধ্যে টেলিফোনে কথা হত।
তা হলে ব্যাপারটা খোলাখুলিই হত বলছেন?
হ্যাঁ, অন্তত আমার তাই ধারণা।
আপনি বেশ ফ্র্যাঙ্ক লোক, তাই না। কোনও লুকোছাপা নেই।
আমার জীবনটাই যে ওরকম। লজ্জাশরমের বালাই নেই।
ভাল কথা। আপনি একসময়ে আমেরিকার জীবনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন, তাই তো।
হ্যাঁ, আমার আর ভাল লাগছিল না।
এই ভাল না লাগার কারণ কি মিসেস বকশি?
উনিও।
নাকি জনা?
জনা আর আমাকে নিয়ে যা রটনা হয়েছে তার অর্ধেক সত্য।
অর্ধ সত্য নয় তো!
অর্ধ সত্য মানে হাফ টুথ। না, তা নয়।
খুলে বলুন।
জনা সুব্রতদার ছোট বোন। বয়স কুড়ি টুড়ি হবে। সে পড়াশুনো করতে আমেরিকা গিয়েছিল।
এবং গিয়েই আপনার প্রেমে পড়ে গেল তো!
ঠিক তাই।
আপনি মেয়েদের কি খুব সহজেই অ্যাট্রাক্ট করেন?
আমি কিন্তু করি না। আমার কী করার আছে বলুন ইফ দে ফল ফর মি।
ঠিক কথা, আপনার চেহারাটা অবশ্য খুবই ভাল, বেশ হি-ম্যানের মতো। জনার সঙ্গেও কি আপনার ফিজিক্যাল
না-না, ছিঃ, ও কথা বলবেন না।
তা হলে?
জনা রোমান্টিক মেয়ে। সেক্সি টাইপের নয়।
আপনারা তা হলে প্রেমে পড়ে গেলেন?
ওই তো বললাম, অর্ধেকটা সত্য। জনা প্রেমে পড়ল, কিন্তু আমার তো এত ভাবাবেগ নেই। আমি পোড়-খাওয়া, কাঠখোট্টা মানুষ। জীবনে মহিলা সঙ্গিনীর অভাব কখনও ঘটেনি। চেহারাটাই সেইজন্য খানিকটা দায়ী। প্রেমে পড়ার মতো মনটাই আর আমার নেই। কিন্তু জনা পড়েছিল, স্বীকার করছি।
তাই নিয়েই কি অশান্তি?
হ্যাঁ। মিসেস বকশি জনাকে অপছন্দ করতে শুরু করেন। এবং আমার ওপরেও আধিপত্য বাড়িয়ে দেন।