উঠতি মস্তান?
হা সাহেব।
এরকম ছক কষে কি ওরা কাজ করবে? মনে হয় না।
খোঁজ নিয়ে বলব সাহেব।
তোমার তো কখনও ভয়ডর বা জানের পরোয়া ছিল না।
ও বাত তো ঠিক সাহেব।
কিন্তু তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে আজকাল তোমার ভয়ডর হয়েছে।
শাহেনশা মাথাটা নিচু করে বলল, দিনকাল খারাপ আছে সাহেব। বহুত কম্পিটিশন, বহুত পলিটিক্স, বহুত টেনশন।
সেটা আমি জানি তোমার চেলা মিল্টন কি আলাদা হয়ে গেছে?
জি সাহেব। মিল্টন তিলজলায় ডেরা করেছে।
তোমার দলে কে আছে এখন?
বাচ্চু, ঘিয়া, পাগলু। সব নতুন আছে সাহেব।
তুমি কেস করো না?
না সাহেব। বখরা পাই।
অরুণিমা বকশিকে যে খুন করেছে সে পুরনো লোক।
আমার লোক করেনি সাহেব।
সেটা আমি জানি। কিন্তু কে করেছে সেটা তোমার না জানার কথা নয়।
জানি না সাহেব।
তুমি ভয় পাচ্ছ শাহেনশা!
শাহেনশা পায়ে পায়ে একটু ঘষাঘষি করল। মুখটা একটু বিবর্ণ।
কন্ট্রাক্ট মার্ডার, বুঝলে?
হ সাহেব।
খুনটা হয়েছে তোমার এলাকায়। তোমাকে সেলামি না দিয়ে কাজটা কি কেউ করতে পারে?
সাহেব, আজকাল এলাকা কেউ মানে না। পয়সার লালচ বাড়ছে তো। পুরানা জমানা তো আর নেই।
সেটা আমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। লোকটাকে আমার চাই শাহেনশা।
খবর নিয়ে জানাব সাহেব।
আজ বিকেলে?
আর একটু টাইম লাগবে।
টাইম লাগার কথা নয় শাহেনশা, তুমি আসলে ভয় পাচ্ছ। ড্রাগ ধরার পর কি এসব হচ্ছে?
না সাহেব। সিচুয়েশন বদল হয়ে গেছে।
কাকে ভয় পাও?
কাউকে না। টাইমটাকে ভয় পাই সাহেব। আজকাল সব উলটোপালটা ব্যাপার হয়।
ঝেড়ে কাশো শাহেনশা, চুপ করে থাকার জন্য কত টাকা পেয়েছ?
শাহেনশা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।
তোমার বিরুদ্ধে তো কোনও কেস দিচ্ছি না, তোমাকে ধরাও হবে না, শুধু একটা ইনফর্মেশন চাইছি। মনে পড়ে তোমাকে আমি এর আগে তিনবার বাঁচিয়ে দিয়েছি?
বহুত মেহেরবানি। সাহেব, আমি ভুলিনি।
তা হলে আমার ঋণ একটু শোধ করো।
ছোকরা অ্যারেস্ট হয়ে গেলে বহুত হুজ্জত হবে সাহেব। রায়ট হয়ে যাবে। আমি খতম হয়ে যাব।
অ্যারেস্ট করব না। যে খুনটা করে সে-ই তো আর আসল খুনি নয়, যে খুনটা করায় সে-ই আসল খুনি। আমি তাকে ধরতে চাইছি।
কথা দিচ্ছেন স্যার?
হ্যাঁ। তবে আমি জানতে চাই পেমেন্ট কে করেছে।
বকশি মেমসাহেবকে খুন করেছে লম্বুর দল। খাটো আর সেলিম ছিল অপারেশনে।
পেমেন্ট কে করেছে?
এজেন্সি।
কোন এজেন্সি?
সার্ভিস টু দি পিপল।
খাটো কি কলকাতায়?
না সাহেব। অপারেশনের পর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটাই নিয়ম।
জানি। এজেন্সির মালিক জনি, তাই না?
জি সাহেব। জনি ইনফর্মেশন পায় টেলিফোনে। টাকা ওর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়।
তার মানে খুনটা কে করিয়েছে তা জনি জানে না?
না সাহেব।
কাকে সন্দেহ হয় শাহেনশা?
আমরা কাউকে সন্দেহ করি না। টাকা পাই, কাজ করি।
বুঝলাম। টাকার অ্যামাউন্ট জানো?
না সাহেব। আমি দশ হাজার পেয়েছি।
সেটা কত পারসেন্ট?
জানি না সাহেব। নিট দশ হাজার। নো বারগেন।
ঠকে গেছ। আমার হিসেবে পাঁচ থেকে দশ লাখের মধ্যে কন্ট্রাক্ট হয়েছে। তার কম নয়।
হতে পারে সাহেব। আমার কাছে তো এটা ফালতু টাকা। তাই আমি আর খোঁজখবর নিইনি।
ঠিক আছে শাহেনশা, তুমি যেতে পারো।
জি সাহেব।
লম্বুর মোবাইল নম্বর জানো?
জানি সাহেব।
দাও।
নম্বরটা ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলল, বোলো।
শবর গম্ভীর গলায় বলল, ফোনটা লম্বুকে দাও।
তুমি কে?
তোর বাপ। লম্বুকে দে।
ওপাশটা কিছুক্ষণ চুপ। তারপর একটা গমগমে গলা বলে উঠল, কৌন হ্যায় বে?
বলেছি তো তোর বাপ। আমি শবর দাশগুপ্ত।
আরে স্যার, আপনি! নমস্কার স্যার। আমি লম্বু।
শোন, কথা আছে।
বলুন স্যার।
আয়রন সাইড রোডের অরুণিমা বকশিকে খুন করানোর কন্ট্রাক্ট তোমাকে কে দিয়েছিল জানো?
স্যার, এসব কী বলছেন!
আকাশ থেকে পড়লে যে! অ্যাকটিং ছাড়ো। তুমিও সেয়ানা, আমিও সেয়ানা।
সে কথা তো ঠিক, কিন্তু স্যার, পার্টিকে তো চিনি না।
খবর নিতে পারবে?
জনি কাজটা দিয়েছিল। জনিও জানে না।
কত টাকার কন্ট্রাক্ট?
পাঁচ।
জনি কোথায়?
এখানে আছে স্যার। আমি জনির এজেন্সি থেকেই বলছি।
ভারী মিষ্টি মোলায়েম একটা গলা বলল, নমস্কার স্যার। আমি জনি।
কন্ট্রাক্টটা কত টাকার ছিল জনি?
ছয়।
কে তোমাকে ফোন করেছিল?
নাম বলেনি।
পুরুষ না মহিলা?
মহিলা।
শিয়োর?
হ্যাঁ স্যার। শিয়োর।
বয়স কীরকম হবে?
বেশি নয় স্যার। ছুকরির গলা।
তোমার অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনে নিয়েছিল?
হ্যাঁ স্যার। অনেকে তো নিজে কন্ট্রাক্ট করে না। ভয় পায়।
ক’বার ফোন করেছিল?
দু’বার।
গলা চিনতে পারবে?
পারব। আমার ভয়েস মেমারি ভাল।
হয়তো দরকার হবে না। শোনো। এখন কয়েকদিন তোমার ফোন এলে ধরবে না। অ্যানসারিং মেশিনে রেকর্ড করে রাখবে। তোমাকে যেন মোবাইলে ফোন করে।
স্যার, আপনি কি আমাদের ওপর অ্যাকশন নেবেন?
আপাতত নয়। কিন্তু এ লাইনটা ছাড়ো। যেদিন ধরব সেদিন ঝুলিয়ে দেব। পার পাবে না।
জানি স্যার। কিন্তু এটা তো প্রফেশন, নাথিং এলস।
ফিলজফি ঝেড়ো না।
দোষ ধরবেন না স্যার, পুলিশের বখরাও দিয়েছি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা নামিয়ে রাখল শবর।
আরও চল্লিশ মিনিট বাদে মিহিরের গ্যারাজে হাজির হয়ে গেল শবর।
মিহির তার ট্রাকের ইঞ্জিনে কাজ করছিল। কালিঝুলি মাখা অবস্থায় নেমে এল।
আরে আপনি?
মোবাইলটা তো সুইচ অফ করে রেখেছেন, তাই আসতে হল।