এটা কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা? কে জানে।
মিহির ঘুমিয়ে পড়ল।
৪. লোকটিকে কি আপনারা ছেড়ে দিলেন
মিস্টার দাশগুপ্ত, লোকটিকে কি আপনারা ছেড়ে দিলেন?
না। মিহিরবাবু বেল পেয়েছেন।
বেলই বা পায় কী করে? হি ইজ দি প্রাইম সাসপেক্ট।
সেটা আদালত জানে। আমাদের কিছু করার নেই।
পাবলিক প্রসিকিউটর কি বেল-এর বিরোধিতা করেননি?
বলতে পারব না। আমি আদালতে ছিলাম না। কিন্তু মিহিরবাবুর বেল নিয়ে আপনি অত ভাবছেন কেন? প্রয়োজন হলে তাকে আবার অ্যারেস্ট করা যাবে।
ওকে আপনারা চেনেন না মিস্টার দাশগুপ্ত। যে-কোনও সময়ে ও হাওয়া হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে ওর প্রতিভা সাংঘাতিক।
সেক্ষেত্রে কী আর করা যাবে বলুন? পুলিশ তো সর্বশক্তিমান নয়। আদালতের বিরুদ্ধাচরণ তো করতে পারি না।
ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই ভাল হল না। খুনটা যে মিহিরই করেছে সে বিষয়ে তো কোনও সন্দেহই নেই!
কে বলল নেই? সন্দেহ অবশ্যই আছে।
সে কী?
পুলিশের হাতে ভদ্রলোককে কনডেম করার মতো যথেষ্ট তথ্য নেই।
এদেশের পুলিশ কি এতই অপদার্থ?
এদেশের পুলিশ এদেশের মতোই। কী আর করা যাবে বলুন?
ডিসগাস্টিং! ভেরি ডিসগাস্টিং।
দুঃখিত মিস্টার বকশি। আপনাকে খুশি করতে পারছি না। বাই দি বাই আপনি কবে এলেন?
কাল রাতে।
আপনি তো মোটে মাসখানেক আগেই আমেরিকায় ফিরে গেলেন!
দেড় মাস। আসতে হল জরুরি প্রয়োজনে। আমার সম্বন্ধী সত্যব্রত আয়রন সাইড রোডের বাড়িটা প্রমোটারকে বিক্রি করার তোড়জোড় শুরু করেছে। ওর কাছে নাকি আমার স্ত্রীর দেওয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিও আছে। খবর পেয়ে আসতেই হল।
বাড়িটা বোধহয় আপনি বিক্রি করতে রাজি নন?
পাগল নাকি? বাড়ি বিক্রি করব কেন? সত্যব্রতর সঙ্গে এই নিয়ে ঝামেলা চলছে বলেই আমাকে আসতে হয়েছে।
আমি যতদুর খবর রাখি আপনার স্ত্রীর আরও গোটা দুই বাড়ি আছে এবং ব্যাঙ্কে ক্যাশ এবং অন্যান্য বন্ডে আছে প্রচুর টাকা।
হ্যাঁ। ওদের অবস্থা তো ভালই ছিল।
আপনিই এখন এসবের মালিক তো।
ন্যাচারালি। জিজ্ঞেস করছেন কেন?
না, ভাবছিলাম অন্য কোনও ওয়ারিশান আছে কিনা।
কে থাকবে?
উনি কোনও উইলটুইল করেছিলেন কিনা জানেন?
লুক ম্যান, অরুণিমা ওয়াজ জাস্ট আভার ফটি। এই বয়সে কেউ উইল করতে যায়?
ভাল করে খুঁজে দেখেছেন?
খোঁজার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু একথা বলছেন কেন?
প্রিয়ব্রত মজুমদার নামে একজন বিখ্যাত অ্যাটর্নি আছেন, জানেন কি?
না তো!
আমি তার ফোন নম্বর আপনাকে দিচ্ছি। একটু কথা বলে দেখুন।
হোয়াট ডু ইউ মিন? হঠাৎ আমি উটকো একটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে যাব কেন?
উনি অরুণিমা দেবীর অ্যাপয়েন্টেড অ্যাটর্নি।
অরুণিমার অ্যাটর্নি! কই জানতাম না তো!
আপনি আপনার স্ত্রীর অনেক কিছুই হয়তো জানতেন না!
তার মানে?
স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম।
আপনি ননসেন্স টক করছেন।
আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন কেন? আমি তো জাস্ট আপনাকে একজনের সঙ্গে একটু কথা বলতে বলেছি। এতে মেজাজ খারাপ করার মতো কিছু তো নেই।
আর ইউ হিন্টিং সামথিং?
আরে মশাই, কথা বলেই দেখুন না। প্রিয়ব্রতবাবু ইজ এ রিনাউন্ড ম্যান ইন দি ফিল্ড অফ ল। আজেবাজে লোক নন।
তিনি আমাকে কী বলবেন?
যা বলবেন তা হয়তো আপনার পছন্দ হবে না। কিন্তু ট্রুথ ইজ অলওয়েজ লাইক দ্যাট। নট প্যালেটেবল।
ঠিক আছে, নম্বরটা দিন।
নোট করে নিন। এখন দশটা বাজে, ঘণ্টাখানেক পরে ওঁকে ওঁর চেম্বারে এই নম্বরে পাবেন।
অরুণিমা কি গোপনে কোনও ডিল করেছিল?
আমার মুখ থেকে শুনবেন কেন? প্রপার অথরিটির কাছ থেকে জেনে নিন।
আপনি আমাকে টেনশনে ফেলে দিলেন।
তা হয়তো দিলাম। কিন্তু সবটা জেনে এবং বুঝেই এগোনো ভাল।
ফোনটা কেটে গেল।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল শবর। কলকাতার ক্ষণস্থায়ী শীত বিদায় নিচ্ছে। বাইরে রোদের তেজ বাড়ছে। ফেব্রুয়ারির শেষে কলকাতায় আজকাল রোদের বেশ তাপ, হাঁটলেই ঘাম হয়। বেরোতে ইচ্ছে করছিল না শবরের। কিন্তু একটা মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন করেও মিহিরকে ধরা যাচ্ছে না। ফোন সুইচ অফ করা আছে।
শবর অগত্যা উঠল। ফোনটা বেজে উঠতেই ভ্রু কুঁচকে তাকাল যন্ত্রটার দিকে। তারপর তুলে নিল।
শবর দাশগুপ্ত বলছি।
শাহেনশাকে ধরা গেছে স্যার। চালান দেব কি?
আরে না না, চালানফালান নয়। বসিয়ে রাখুন। কয়েকটা প্রশ্ন করেই ছেড়ে দেব।
ওর নাকি ড্রাগ নেওয়ার সময় হয়েছে। খুব রেস্টলেস।
ওকে ড্রাগ নিতে দিন।
আপনি পারমিশন দিচ্ছেন তো?
হ্যাঁ। আমি ওকে নরমাল অবস্থায় চাই।
ঠিক আছে। আপনি কি আসছেন?
হ্যাঁ। আমি এখনই রওনা দিচ্ছি। আধ ঘণ্টায় পৌঁছে যাব।
আধঘণ্টা পর দক্ষিণ কলকাতার একটা ফাঁড়িতে শবর দাশগুপ্ত শাহেনশার মুখোমুখি হতেই সুপুরুষ, দীর্ঘকায় বছর পঁয়ত্রিশ বয়সের শাহেনশা উঠে দাঁড়িয়ে একটা সেলাম করল। শাহেনশার দাড়ি এবং গোঁফ খুব যত্ন করে ট্রিম করা। পরনের পোশাক অবশ্য এলোমেলো। ময়লা জিনসের প্যান্ট আর গায়ে ইস্তিরিহীন সবুজ পাঞ্জাবি।
ভাল আছেন তো সাহেব?
ভাল। তুমি কেমন?
সব ঠিক হ্যায়। কুছ মুসিবত হল নাকি সাহেব?
সাউথ ক্যালকাটার আয়রন সাইড রোডে অরুণিমা বকশি মার্ডার হয়েছিল জানো তো!
জানি সাহেব।
কে জানো?
না সাহেব।
তোমাকে না জানিয়ে কে কাজ করবে এখানে? তুমি না ডন?
আজকাল বহুত মস্তান উঠছে সাহেব। আপনি তো সব জানেন।