ওরা হয়তো আপনাকে সংসারী দেখলেই বেশি খুশি হতেন।
তা আর বলতে! মা তো বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে তুলেছে আমায়। গোটা দশেক পাত্রী দেখেও ফেলেছে। দেখার জন্য আমাকেও টানাহ্যাঁচড়া কম করা হয়নি। খুনের কেসটায় ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়েছে।
আপনি কি বিবাহবিরোধী?
তা কেন? আসলে ওসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না। আর দাদাদের তো দেখছি। মা বাবার খোঁজ অবধি নেয় না।
সেটা কি তাদের বউদের দোষ?
তা জানি না। তবে বিয়ের পরেই তাদের মানসিক পরিবর্তন হয়েছে।
সেইজন্য বউরা দায়ী হবে কেন? আপনার দাদারাই দায়ী।
ঠিকই বলেছেন। বউদিদের দায়ী করা আমার ঠিক হয়নি।
আজকাল মা-বাবার সঙ্গে থাকলে খটাখটি, অশান্তি বেশি হয়।
আমি সংসার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই। তবে আপনি যা বলছেন তা হতেও পারে।
হ্যাঁ মশাই, ছেলেরা বউ নিয়ে আলাদা থাকাই ভাল।
তা হলে আর আমার বিয়ে করা হবে না।
ওমা! কেন?
আমি বুড়ো মা-বাবাকে ছাড়তে পারব না। একটা জীবন অনেক কষ্ট দিয়েছি। দু-তিন বছর নাপাত্তা ছিলাম। ভেবে ভেবে আমার মায়ের হার্টের অসুখ হয়েছে।
তা হলে বোবা-কালা মেয়ে বিয়ে করুন। না হলে গাঁ-গঞ্জের একটু হাবাগোবা মেয়ে।
আমার তো বউয়ের দরকারই নেই।
ও! তা হলে সেই ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ানো!
বলেছি তো, ওটাও আমার হাতে নেই। ফুলেরা মধু বিতরণ করতে চাইলে বেচারি মৌমাছির দোষটা কোথায়?
আপনি ভীষণ খারাপ লোক।
তা তো আগেও বলেছেন।
আবার বলছি।
বেশ তো, মেনেও নিচ্ছি। আমি খারাপ লোক।
.
ফোন ছেড়ে দিলেন নাকি?
.
ম্যাডাম, তা হলে কি গুড নাইট?
ফোন ছাড়িনি মশাই।
তা হলে চুপ করে ছিলেন কেন?
আপনার ওপর রাগ হচ্ছিল।
সে তো বুঝতেই পারছি। আমাকে অনেকেই পছন্দ করে না।
আচ্ছা, যদি সেরকম মেয়ে পান তা হলে বিয়ে করবেন।
আপনাকে তো আমার মায়ের মতোই বিয়েতে পেয়েছে দেখছি।
আহা বলুন না।
কীরকম মেয়ের কথা বলছেন।
যে আপনার মা-বাবার যত্নআত্তি করবে?
সে কি আর পাওয়া যাবে? আমার মা-বাবা তো তোর মা-বাবা নয়। সে কি আর আমার চোখ দিয়ে আমার বাবা-মাকে দেখবে? ওসব শরৎচন্দ্রের নভেলে হয়।
কেন হবে না?
এখনকার মেয়েরা তাদের অন্যরকম আইডেন্টিটি খুঁজে পেয়েছে। তারা কেন শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে পড়ে থাকবে?
তা থাকতে হবে কেন? আপনি তো তাদের জন্য লোক রেখে দিয়েছেন। বউ একটু দেখাশোনা করবে, ভাল ব্যবহার করবে।
সেটা তো দুরাশা। হয়তো আমার মাকে বা বাবাকে সে পছন্দ করতে পারবে না। তারা তো আর পারফেক্ট হিউম্যানবিয়িং নয়। না ম্যাডাম, ওসব আমার দ্বারা হবে না।
তা হলে মা কি খুশি হবেন?
তা হবে না। তবু বিয়ে না করা লেসার ইভিল।
আপনার ঘুম পাচ্ছে না তো!
না ম্যাডাম, আমার ইচ্ছা-ঘুম।
এখন কটা বাজে জানেন?
রাত একটা।
আপনার কথা বলতে খারাপ লাগছে না তো?
আরে না ম্যাডাম, সারাদিন তো আড্ডা মারার সময়ও পাই না, মানুষও পাই না। এখন যাহোক একটু আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হচ্ছে।
আমি মোটেই আড্ডা দিচ্ছি না।
তা হলে কী করছেন?
আমি আপনাকে অ্যাসেস করছি।
ওঃ হ্যাঁ, তা তো বটে।
ইয়ারকি হচ্ছে?
না তো! তবে অ্যাসেস করে কী লাভ? আমি সামান্য মানুষ।
একটা মার্ডার কেসে আপনি প্রাইম সাসপেক্ট। খবরের কাগজে আপনার নাম উঠেছিল, মনে নেই?
হ্যাঁ, তা বটে। আমি কুখ্যাত লোক।
যা বলেছি তা মনে থাকবে?
অনেক কথাই তো বলেছেন। কোনটা বিশেষ করে মনে রাখতে হবে?
মার্ডারটা নিয়ে ভাবুন।
ভাবছি তো।
ওরকম এলোমেলো ভাবনা নয়।
তা হলে?
সেদিন মিসেস বকশির সঙ্গে আপনার যা যা কথা হয়েছিল সেগুলোর ওপর কনসেনট্রেট করুন।
সেগুলোও তো মাঝে মাঝে ভাবি।
আপনি ভীষণ ক্যালাস লোক।
তা হয়তো হবে।
সেদিন মিসেস বকশিত্র কোনও কথার কোনও আলাদা অর্থ হয় কি না ভেবে দেখুন। খুব ডিপলি ভাবুন। আমি কাল আবার রাত বারোটায় ফোন করব।
ধন্যবাদ ম্যাডাম। আপনি আমার জন্য ভাবছেন বলে ধন্যবাদ।
আপনার জন্য ভাবছি কে বলল?
তা হলে?
জাস্ট একটা নাগরিক কর্তব্য হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছি।
সেটাই বা কে দেয় বলুন?
এখন ইয়ারকি ছেড়ে ভাবুন তো। এক্ষুনি ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতে হবে না। রাতে–বিশেষ করে গভীর রাতে ভাবনাচিন্তা খুব শার্প হয়। এখন বসে বসে কিছুক্ষণ মাথাটাকে খাটান তো! আমিও ভাবছি।
আপনার ঘুম পায়নি তো।
না। বিবেক কি ঘুমোয়? ছাড়ছি।
আচ্ছা ম্যাডাম। কাল আবার
টুক করে ফোনটা কেটে গেল।
মহিলা যে কে তা কিছুই বুঝতে পারছে না মিহির, দিন-চারেক আগে প্রথম ফোনটা আসে৷ রহস্যময় কথাবার্তা, কিছুতেই পরিচয় না দেওয়া। তারপর প্রতি রাতেই ফোন। মেয়েটা কে হতে পারে তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না সে। এদেশের খুব বেশি মেয়েকে চেনেও না মিহির। গলার স্বর থেকে অনুমান হয়, বয়স কম। আঠেরো, উনিশ, কুড়ি হতে পারে। মিহির সম্পর্কে মেয়েটির দুর্বার কৌতূহল এবং বোধহয় হৃদয়ের একটু দ্রব ভাব। কিন্তু এসব কী করে হয়? মিহির একটু হি-ম্যান গোছের আছে ঠিকই। বেশ লম্বাচওড়া এবং সুপুরুষ, কিন্তু তা বলে সব মেয়েই ঢলে পড়বে এমন নয়।
কোনও চিন্তাই বেশিক্ষণ মাথায় থাকে না মিহিরের। ঘুম আসছিল না। সারাদিন আসুরিক খাটুনির পর ঘুম। আধো তন্দ্রার মধ্যে হঠাৎ সে চমকে উঠল। না, তেমন কনসেনট্রেট না করেও হঠাৎ তার মনে পড়ল, অরুণিমা সেদিন হঠাৎ এক সময়ে খুব অন্যমনস্ক ভাবে বলেছিল, আমি মরে গেলে ও সব পাবে। আমি একদম তা চাই না, একদম না। আমি চাই এসব তোমার হোক। কত টাকার সম্পত্তি আমার জানো! ভাবতেই পারবে না।