খুনের খবরটা আপনি কখন পান?
সেইদিনই বিকেলে। ভিখু ফোন করে আমায় জানায়।
আপনার নিজের কোনও ডিডাকশন আছে কি?
মাথা নেড়ে সতুবাবু বললেন, না মশাই, এ একেবারে বিনা মেঘে বজ্রপাত। অরুকে কে কেন খুন করবে তা আমি আজ অবধি বুঝে উঠতে পারিনি। মিহির বলে ছোরাটারই বা কী স্বার্থ ওকে খুন করার তাও জানি না।
মিহিরের সঙ্গে অরুণিমা দেবীর সম্পর্কটা কীরকম ছিল, জানেন?
একেবারে জানি না বললে ভুল হবে। ঘাসে মুখ দিয়ে তো চলি না। অরুণিমা ওর প্রতি সট ছিল।
আপনার কাছে অরুণিমা কিছু বলেছেন কি?
খুব পরিষ্কার করে নয়।
উনি কি সুব্রতবাবুকে ডিভোর্স করার কথা ভাবছিলেন?
আমাকে খুলে কিন্তু বলেনি। তবে অরুর হাবভাব দেখে মনে হয় সুব্রতর প্রতি ওর আর তেমন টান নেই।
তার জন্য মিহিরবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই কি দায়ী?
তাও জানি না মশাই।
সুব্রতবাবুকে আপনার কেমন লোক বলে মনে হয়? সতুবাবুর মুখটা ফের বিকৃত হল। তারপর একটু হেসে বলল, কিছু মনে করবেন না মশাই, নিজের মুখেই বলছি উই আর ভেরি রিচ পিপল। বনেদি বড়লোক। সুব্রতরা হল এ ক্লাস অ্যাপার্ট, সুব্রত নিজের যোগ্যতায় ওপরে উঠেছে বটে, কিন্তু ওদের কালচার আর রুচি তো সেই নিম্নমধ্যবিত্তই রয়ে গেছে। ওদের টাকা হলে লোক দেখানো বড়লোকি করতে থাকে। বনেদি পরিবার অন্যরকম হয়। সুব্রতকে অরুর সঙ্গে আমার মিসফিট বলেই মনে হয়েছে।
তা তো বুঝলাম। কিন্তু সুব্রতবাবু লোকটি কেমন?
মাপ করবেন, আমি জানি না। দু-চারবার দেখা হয়েছে, হেসে দু-চারটে কথাও কয়েছে, কিন্তু ওকে স্টাডি করিনি কখনও।
অরুণিমা দেবীও কি ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী ছিলেন?
হ্যাঁ, ওদেশে স্কুলে কলেজে ওর স্কোর দুর্দান্ত। যে জাপানি কোম্পানিতে ওরা দু’জনে কাজ করে তাতে অরুর পজিশনই বেটার।
দু’জনের মধ্যে কি প্রফেশনাল জেলাসি ছিল?
কী জানি, অত জানি না।
সুব্রতবাবুর এক বোন এখন আমেরিকায় আছে, জানেন?
জানি মশাই, জনা, শুটকি মেয়েটার বোধহয় এখানে বর জুটছিল না তাই সুব্রত ওকে নিয়ে গিয়েছে। মার্কিন গন্ধ মাখিয়ে পাত্রস্থ করবে।
শুনেছি মেয়েটা লেখাপড়ায় ভাল।
তা হতে পারে। অরু তো ওকে দু’চক্ষে দেখতে পারত না।
কেন?
বলত খুব ন্যাকা টাইপের মেয়ে, ভাবুক ভাবুক ভাব করে থাকে। আসলে ভিজে বেড়াল।
আপনি নিম্নমধ্যবিত্তদের খুব ঘেন্না করেন, না?
এবার সতুবাবু তটস্থ হয়ে হেসে ফেললেন, আরে না মশাই, ঘেন্না করব কেন? সমাজের নানা স্তর তো থাকবেই, নইলে সমাজ বলেছে কেন? আসলে কালচার ক্রস হলেই প্রবলেম দেখা দেয়। অরুর ক্ষেত্রে যা ঘটেছে। মানুষকে তো ঘেন্না করার কিছু নেই।
শুনে স্বস্তি পেলাম।
৩. ইউ হেট উইমেন
ইউ হেট উইমেন।
দ্যাটস নট ট্রু।
আই নো, ইউ হেট গার্লস। অল গার্লস।
তা নয়। বলতে পারেন আমি নিস্পৃহ।
ইউ মিন প্যাসিভ।
অনেকটা তাই। আমি খেটে-খাওয়া মানুষ, নন-রোমান্টিক।
খেটে-খাওয়া মানুষেরা বুঝি রোমান্টিক হতে পারে না?
তা পারে। কিন্তু আমি বোধহয় মনের দিক দিয়ে শুষ্ক।
আসল কথাটা স্বীকার করলেই তো হয়, ইউ আর অ্যান্টি ফেমিনিন।
অতবড় কথাটা স্বীকার করি কী করে?
কখনও প্রেমে পড়েছেন?
প্রেমে পড়তে দিল কই মেয়েরা? তার আগেই যে মেয়েরা আমাকে ব্যবহার করে ফেলল। ব্যবহৃত হয়ে হয়ে প্রেমটাই গেল হারিয়ে।
ব্যবহার মানে? সেজুয়ালি?
তা ছাড়া আর কী?
আপনি একটু শেমলেস, খোলাখুলি কেউ ওসব বলে?
ট্রুথফুল হতে গেলে বোধহয় একটু শেমলেস হতেই হয়। না?
আপনি বাজে লোক।
অনেকে তাই বলে বটে।
আপনার নিজের কী ধারণা?
বোধহয় খুব ভাল লোক নই।
এটা বিনয় নয় তো?
না-না, আমার ডিফেক্টগুলো সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল।
আর কী কী ডিফেক্ট আছে আপনার?
লম্বা লিস্ট হয়ে যাবে ম্যাডাম। দোষগুলো না দেখলেই হয়।
এই তো বললেন আপনি ট্রুথফুল, কীরকম সততা আপনার?
অন্তত ডিজঅনেস্ট নই। কিন্তু ম্যাডাম, এই যে রোজ রাত বারোটায় আপনি আমাকে ফোন করে এসব খবর নেন এর পিছনে মতলবটা কী?
অ্যাসেস করা।
নিজের পরিচয়টাও আজ অবধি দেননি।
একটা নাম তো! যা হোক একটা ভেবে নিন না।
আপনি তা হলে কিছুতেই নিজের নাম পরিচয় দেবেন না?
ওটা ইররেলেভ্যান্ট।
আপনি পুলিশের লোক নন তো!
হলেই বা ক্ষতি কী?
না, ক্ষতি আর কী? যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েই গেছে।
কী ক্ষতি হয়েছে শুনি?
পুলিশ আমাকে মারধর করেছে, অপমানজনক গালাগাল দিয়েছে, তার ওপর মার্ডারের চার্জ চাপিয়ে দিয়েছে।
আপনি কি বলতে চান মিসেস বকশিকে আপনি খুন করেননি?
বললেই বা বিশ্বাস করছে কে বলুন।
কেউ না করলে জামিন পেলেন কী করে?
শবর দাশগুপ্ত নামে এক ভদ্রগোছের গোয়েন্দার দাক্ষিণ্যে। শেষ রক্ষা হবে কিনা জানি না। জামিন তো আর অ্যাকুইটাল নয়।
শবর দাশগুপ্ত খুব ইন্টেলিজেন্ট গোয়েন্দা।
হলেই বা। শবর দাশগুপ্ত একা কী করবে? গোটা পুলিশ ফোর্স তো আমার বিরুদ্ধে।
মিসেস বকশি কি আপনাকে ভালবাসতেন?
উনি তো সেরকমই বলতেন।
তার মানে আপনি ওঁর ভালবাসাকে বিশ্বাস করতেন না?
না।
ওমা! কেন? ভালবাসাকে কি বিশ্বাস না করা যায়?
ভালবাসা অনেক সময়েই কতগুলো আবেগ বা স্বার্থকে নিয়ে তৈরি হয়। স্বার্থ আহত হলে বা আবেগ উবে গেলে ভালবাসাও হাওয়া। বুঝলেন ম্যাডাম?
আপনি ভীষণ বাজে লোক। বোধহয় একটু পাষণ্ডও, তাই না?
কী জানি ম্যাডাম। নিজের সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা নেই। বেঁচে থাকার জন্য আমাকে নানা কাজ করতে হয়। কাজ নিয়েই সময় কেটে যায়। নিজেকে নিয়ে খুব একটা ভাবি না।