তাই নাকি?
আপনার মধ্যে একটু বুস লি-রও টাচ আছে।
ধন্যবাদ। এখন চলল। আরও দুটোকে ম্যানেজ করতে হবে। তাদের মধ্যে একটা আস্ত একখানা গরিলা।
আপনি আগে চলুন স্যার। একটা কথা। দুটো সাব-মেশিনগানের একটা কি আমি নিতে পারি?
ভয় পাচ্ছ ইন্দ্রজিৎ?
স্যার, আপনাকে সম্মান দিচ্ছি। সাব-মেশিনগান তুমি স্পর্শ করবে না। ওসব ভদ্রলোকের অস্ত্র নয়। এসো। ববি ধীরে ধীরে এগোলেন। দেয়াল ঘেঁষে।
যে লোকটার চেহারা সত্যিই গরিলার মতো, সে দু’খানা থামের মত পা দু’দিকে ছড়িয়ে প্রস্তরমূর্তির মতো দাঁড়ানো।
ববি হঠাৎ অনুচ্চ একটি শিস দিলেন। লোকটা বিদ্যুৎবেগে ফিরে দাঁড়াল। তারপর অবিকল একই দ্রুততায় তুলল তার অস্ত্র।
ববির অস্ত্র নেই কিন্তু তিনি নিজেই এক অস্ত্র। প্রথম একখানা আধলা ইট মারলেন ববি। তারপর শরীরটিকে কুণ্ডলীকৃত স্প্রিং-এর মতোই তিনি পাক খাইয়ে ছুড়ে দিলেন। এবং সোজা গিয়ে পড়লেন লোকটার বিশাল বুকের ওপর।
জীবনে এরকম অসম লড়াই দেখেনি ইন্দ্রজিৎ। বেশ লিলিপুটের সঙ্গে বডিংন্যাগের লড়াই। কিন্তু কে দানব এবং কে বামন, তা লড়াই দেখে বোঝা যাচ্ছিল না।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দেখা গেল, ববি লোকটার ঘাড় এক হাতে ধরে অন্য হাতে তাকে ঠেলে বৃত্তাকারে দৌড় করাচ্ছেন নিজের চারধারে। এ দৃশ্য পঞ্চাশ টাকা টিকিট কেটেও দেখা যাবে না। ইন্দ্রজিৎ প্রাণভরে দেখতে লাগল।
তারপর ববি লোকটাকে হঠাৎ ছেড়ে দিলেন। লোকটা কেমন যেন টলতে লাগল। ববি এরপর লড়াইটা শেষ করলেন থুতনিতে খুব সযত্ন-রচিত একখানা ঘুসি মেরে। দানবটা ভূমিশয্যা নেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে ছিল। ঘুসিখানা খেয়ে কৃতজ্ঞ চিত্তে উপুড় হয়ে আউট হল।
ববি ইন্দ্রজিতের দিকে চেয়ে বললেন, ছাদে আর একজন আছে। কিন্তু আপাতত তাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। নাউ, এন্টার দা ড্রাগন।
এ বাড়িতে ধনসম্পদ লুকিয়ে রাখার জন্য একটা গর্ভগৃহ ছিলই। সেই পাতাল-ঘরটিকে একটি সুপ্রসর মনিটারিং কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন রবীশ। অত্যন্ত সুরক্ষিত, অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি ঘর। অন্তত পঞ্চাশটা টার্মিনাল। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির একটি জটিল ধাঁধা।
টার্মিনালগুলির সামনে বসে আছে লোকটা। একটার পর একটা চাবি টিপছে, নব ঘোরাচ্ছে, আর ভিডিয়োতে ভেসে উঠছে নানা ছবি। শোনা যাচ্ছে অস্পষ্ট কিছু কণ্ঠস্বর। নানা রঙের প্যাটার্ন ফুটে উঠছে ভিডিয়ো ইউনিটগুলিতে। অকস্মাৎ দৃশ্যমান হল একটা বিপুলায়তন গিরিখাত। দ্রুত সরে গেল। দেখা গেল অস্পষ্ট একটা ভূখণ্ড। লোকটা একটা চাবি টিপতেই ছবিটা স্থির হল। ফের একটা কলকাঠি নাড়তেই ছবিটা দ্রুত জুম করে এগিয়ে এল। তারপর অত্যন্ত খুঁটিনাটি সব জিনিস দেখা যেতে লাগল। একটা মস্ত গম্বুজওয়ালা বাড়ি, চারদিকে শস্যক্ষেত্র।
লোকটা ফিরে তাকাল লীনার দিকে। তারপর গভীর বিস্ময়ে বলে উঠল, মাই গড!
লীনা সভয়ে চেয়ে রইল লোকটার দিকে।
লোকটার চোখে পাগলের মতো দৃষ্টি। সম্পূর্ণ অবিশ্বাসে মাথা নেড়ে সে বলল, দে হ্যাভ পেনিট্রেটেড দা স্যাটেলাইটস!
লীনা এর জবাবে কী বলতে পারে? বিশেষত তাকে তো কোনও প্রশ্নও করা হয়নি।
লোকটা স্বগতোক্তির মতো বলতে লাগল, মার্কিন এবং রুশ স্যাটেলাইটগুলো যা দেখছে তার সবই হুবহু ফুটে উঠছে টার্মিনালে! এ কি বিশ্বাসযোগ্য? মিস লীনা, ববি রায়ের আর বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। আই প্রোনাউন্স হিম গিল্টি অফ ইন্টারন্যাশনাল এসপিয়োনেজ, ডাবল এজেন্টিং অ্যান্ড ব্রিচ অফ ফেইথ। হিজ ওনলি পানিশমেন্ট ইজ ডেথ…
জল্লাদের কাজটা কি তুমিই করবে?
ঘরে বজ্রপাত হলেও এর চেয়ে বেশি চমকাত না লীনা। ইস্পাতের দরজাটা আধো খোলা। দরজায় ববি। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র।
লোকটা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তারপর ঘুরে মুখোমুখি তাকাল ববির দিকে।
ববি রায়।
হ্যাঁ।
লোকটা মাথা নেড়ে বলল, তুমি ববি রায় নও। আমি হয়তো দুঃস্বপ্ন দেখছি।
দেখছ। ববি রায় তো দুঃস্বপ্নই। তুমি একটু আগেই আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছ, আমি সেটা শুনেছি। তোমার পিছনে কারা আছে এবং তুমিই বা কে?
লোকটা মুখে কোনও জবাব দিল না। কিন্তু তার ডান হাতখানা আকস্মিকভাবে ওপরে উঠল এবং একটি বিদ্যুৎশিখার মতো কিছু ছুটে গেল হাত থেকে।
ববি প্রিং-এর পুতুলের মতো মেঝেয় বসে পড়ে আবার উঠে দাঁড়ালেন। ঠিক এরকমভাবে কোনও মানুষের শরীর যে ক্রিয়া করতে পারে, তা জানা ছিল না লীনার। লোকটা কি আসলে মানুষ নয়? রোবট?
ফ্লাইং নাইফটা স্টিলের দরজায় লেগে খটাস করে মেঝেয় পড়ল।
ববি অত্যন্ত শান্ত গলায় বললেন, যাকে মারার জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার পুরস্কার দেওয়া হয়, তাকে মারতে পারাটাও কঠিন কাজ।
লোকটা সম্পূর্ণ ভূতগ্রস্তের মতো বরি দিকে চেয়ে রইল। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি জানতাম তুমি বিপজ্জনক। পাঁচ ফুট সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি হাইটের ববি রায় যে ধুরন্ধর লোক তা আমাকে জানানো হয়েছে। মিস্টার রায়, বাইরে আমার চারজন সশস্ত্র পাহারাদার ছিল, তাদের চোখ তুমি এড়ালে কী করে?
ববি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, চোখ এড়াব সেরকম কপাল করে কি আমি জন্মেছি? আমি ততটা ভাগ্যবান নই। চারজনের মধ্যে তিনজনের সঙ্গেই আমার দেখা হয়েছে।
লোকটা হাঁ করে চেয়ে রইল ববির দিকে। তারপর বলল, কিন্তু জোয়েল? ওই দানব যে হেভিওয়েট বক্সার!