লোকটা ঝকঝকে দাঁত আর গোলাপি মাড়ি বের করে হেসে বলল, আই অ্যাম এ হোমোসেক্সয়াল। আই ডোন্ট বদার ফর গার্লস। বাট দেয়ার আর আদারস হু উইল লাইক ইউ ইন বেড… কাম অন…
প্রায় হেঁচড়ে লীনাকে সিঁড়ির ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে একটা ঘরে দাড় করিয়ে দিল লোকটা।
ছোট একখানা ঘর। ঘরে বিশেষ কোনও আয়োজনও নেই। শুধু একখানা কাঠের সস্তা টেবিল এবং তার দু’ধারে মুখোমুখি দুটো চেয়ার। ওপাশের চেয়ারে একজন লোক বসে আছে। এই পরিবেশে লোকটা নিতান্তই বেমানান। তার কারণ লোকটার চেহারা দার্শনিকের মতো। গায়ের ফরসা সাহেবি রং রোদে-জলে তামাটে মেরে গেছে। মাথার চুল পাতলা। চোখের নীল তারা দুটির ভিতরে এক সুদুর অন্যমনস্কতা রয়েছে। লম্বা মুখ। শরীরটা মেদহীন এবং একটু রোগাই। বয়স চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যেই।
উঠে দাঁড়িয়ে লোকটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইংরিজিতে বলল, গ্ল্যাড টু সি ইউ, মিস। প্লিজ বি সিটেড।
এই পর্যন্ত চমৎকার। লীনা লোকটার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করবে কি না তা নিয়ে একটু দ্বিধায় পড়ল। সে হাত বাড়াল। তবে চেয়ারে বসে ইংরিজিতে বলল, তোমরা কী চাও? কেন আমাকে ধরে এনেছ?
লোকটা একটু চিন্তিতভাবে লীনার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আর ইউ ইন লাভ উইথ ববি রায়?
এ কথায় কেন যেন হঠাৎ কঁ করে উঠল লীনার মুখ নাক কান। সে ঝামরে উঠে বলল, না, কখনও নয়। আই হেট হিম।
লোকটা তবু চিন্তিতভাবে চেয়ে রইল তার দিকে। তারপর আনমনে একটু মাথা নেড়ে অত্যন্ত ভদ্র, নরম এবং প্রায় বিষণ্ণ গলায় কবিতা পাঠের মতো করে ইংরিজিতে বলল, ববি রায় অত্যন্ত, আবার বলছি, অত্যন্ত বিপজ্জনক লোক। সব মেয়েরই উচিত তার সংস্রব থেকে দূরে থাকা এবং তার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া।
কিন্তু কেন?
ববিই কি আপনাকে এই বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়নি?
দিয়েছে। লোকটা পাষণ্ড।
ঠিক এই কথাটাই আমি বলতে চাইছিলাম। শুধু তাই নয়, ববি একজন চোর, খুনি ও আন্তর্জাতিক গুন্ডা। ববি চোরাই চালানদারদের সর্দার। আমি জানি, ববি একজন বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক্স এক্সপার্টও বটে। কিন্তু সেসব বিদ্যা সে লাগায় গোয়েন্দাগিরিতে এবং খারাপ কাজে। সে তার মস্তিষ্ক বিক্রি করে বড়লোক হতে চায়। পৃথিবীতে এমন রাষ্ট্র আছে যারা ববিকে মারার জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার পুরস্কার দিতে চায়। ববিকে বিশ্বাস করা বুদ্ধিমানের কাজ নয় মিস ভট্টা… ভট্টা…
লীনা বলল, লীনা উইল ড়ু।
লোকটা হেসে বলল, লীনা, ববি যে সিক্রেটটা তার কম্পিউটারে লুকিয়ে রেখেছিল সেটা তুমিই কিল করেছ। কিন্তু তাতে আমাদের দরকার নেই। সিক্রেটটা তুমি জানো। তুমি জানো নীল মঞ্জিলটা ঠিক কোথায়। যদি দয়া করে ঠিকানাটা বলে দাও, তা হলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
সেখানে কী আছে?
লোকটা গম্ভীর বিষণ্ণ দৃষ্টিতে লীনার দিকে আরও কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, আমরা তাও সঠিক জানি না। কিন্তু ববি রায়কে টার্মিনেট করার একটা চুক্তি আমরা নিয়েছি।
টার্মিনেট!–বলে লীনা লোকটার দিকে চেয়ে রইল। তার বুকে তো কই সেতারের ঝংকার বেজে উঠল না। বরং ববির নাতিদীর্ঘ ছিপছিপে চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। আনমনা, ব্যস্তবাগীশ ববি, নারীবিদ্বেষী ববি, ঠোঁটকাটা ববি। তাকে এরা মেরে ফেলবে?
লোকটা খুব মনোযোগ দিয়ে লীনার মুখের ভাব পাঠ করে নিচ্ছিল। মৃদু হেসে বলল, অবশ্য সেটা আজই হবে। ববি কী করেছে জানো? বোম্বেতে সে আমাদের অন্তত পাঁচ জন লোককে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আমাদের সবরকম প্রতিরোধ ভেঙে পালিয়েছে। বোম্বে এয়ারপোর্টে আমার এক বন্ধুকে আজ সকালেই সে এমন মার মেরেছে যে, লোকটা মারা গেছে সেরিব্রাল হেমারেজে। ববি এখনও পলাতক। আমরা তাকে ভীষণভাবে চাই মিস লীনা। কিন্তু ববির সঙ্গে পরে আমাদের বকেয়া চুকিয়ে নেব। তার আগে তার সাধের নীল মঞ্জিলটা আমরা ধবংস করে দিতে চাই।
আমি আবার জিজ্ঞেস করছি, নীল মঞ্জিলে কী আছে?
লোকটা আবার একটা শ্বাস ফেলে বলল, ববি সেখানে পৃথিবীর মহত্তম সর্বনাশের আয়োজন করছে। শোনো মিস লীনা, সব টেকনিক্যাল জারগন তুমি বুঝবে না। তোমাকে শুধু জানাতে চাই যে, ববি আজ সকালে বোম্বে টু ক্যালকাটা ফ্লাইটটা অ্যাভেল করেছে। আমাদের লোক চব্বিশ ঘণ্টা ববির বাড়ির ওপর নজর রাখছিল। মাত্র আধঘণ্টা আগে সে আমাদের টেলিফোনে জানিয়েছে যে, ববি তার বাড়িতে পৌঁছে গেছে। আমাদের ধারণা সে কিছুক্ষণের মধ্যেই নীল মঞ্জিলে যাবে। আর সেখানেই আমরা আজ ববি রায়কে পৃথিবী থেকে মুছে দেব।
তা হলে তোমরা ববি রায়কেই কেন ফলো করছ না?
তার কারণ, সেখানে আমাদের মাত্র একজন লোক মোতায়েন আছে। তার পক্ষে ববি রায়ের সঙ্গে পাল্লা টানা অসম্ভব। হয় ববি তাকে খুন করবে, না হলে চোখে ধুলো দেবে। ববিকে আমরা খুব ভাল চিনি, মিস লীনা। তা ছাড়া আমরা ববির আগেই নীল মঞ্জিলে পৌছোতে চাই।
লীনা ঠোঁট কামড়াল। ববি কলকাতায়। সেই ফ্যাসফ্যাসে ভুতুড়ে গলা আজ ভোর রাতেই তো টেলিফোনে শুনেছিল লীনা। লোকটা ছিল নার্সিং হোমে। দারুণ রকমের জখম। তা হলে কোন মন্ত্রবলে লোকটা পৌঁছে গেল কলকাতায়?
মিস লীনা, আমাদের হাতে কিন্তু বিশেষ সময় নেই।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল লীনা। আর যাই হোক, এদের হাতে নোকটাকে মরতে দেওয়া যায় না।
লীনা মাথা নেড়ে বলল, বলব না।
মিস লীনা, তুমি ববি রায়ের প্রেমে পড়োনি তো? তোমাকে দেখে তত বোকা কিন্তু মনে হয় না।