দৈত্যটা একটা বড় শ্বাস ফেলে বলল, কোনও চালাকি করলে তুমি খুব বিপদে পড়বে।
ববি মুখখানা করুণ করে বললেন, দি অডস আর ভেরি মাচ এগেইনস্ট মি।
তুমি কাল রাতে আমার পকেট থেকে—
ববি মাথা নেড়ে বললেন, জানি, জানি, আমি টাকাটাও ফেরত দিতে চাই।
দৈত্যটা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, চলো।
এ সময়টায় ইউরিন্যাল ফাঁকাই থাকে। তিনজন যখন ঢুকল তখন মাত্র একজন উটকো লোক প্রাতঃকৃত্য সারছিল। সে বেরিয়ে যেতেই দৈত্যটা হঠাৎ প্রকাণ্ড থাবায় ববির বাঁ কাঁধ ধরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, এবার বলল বাছাধন!
দ্বিতীয়জনের হাতে যেন জাদুবলে দেখা দিল একটা রিভলভার।
ববি রায় অত্যন্ত খুশির হাসি হাসলেন। এরকমই তো চাই। ঠিক এইরকমই তো চাই।
দৈত্যকে হাতে রেখে ববি প্রথম রিভলভারওয়ালার ঠিকানা নিলেন, তার বাঁ পা নব্বই ডিগ্রি উঠে গেল সমকোণে এবং শরীরকে একটি তৈলাক্ত দণ্ডের উপর ঘুরিয়ে অপ্রত্যাশিত ক্যারাটে কিকটি সংযুক্ত করে দিলেন আততায়ীর মাথায়। এত দ্রুত যে কিছু ঘটতে পারে তা লোকটা কল্পনাও করেনি কখনও। তার রিভলভার গিয়ে সিলিং-এ ধাক্কা খেয়ে খটাস করে মেঝেয় পড়ল এবং তারও আগে লোকটা নিজের ভগ্ন্যুপ হয়ে ঝরে পড়ল মেঝেয়।
দৈত্যটা এই দৃশ্য দেখতে দেখতে ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
ববি তাকে আদেশ করলেন, লোকটাকে তুলে পায়খানার মধ্যে ভরে দাও। কুইক…
কিন্তু দৈত্য তখনও এই অশরীরী কাণ্ডটাকে মাথায় নিতে পারেনি। তাই অবাক হয়ে ববির দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া সে আর কিছুই করতে পারল না।
কিন্তু নষ্ট করার মতো সময় ববির হাতে নেই। তিনি খুবই দ্রুত এক পা পিছিয়ে গেলেন। তারপর ওয়ালজ নাচের মুদ্রায় প্রায় শত মাইল বেগে তিন ফুট এগিয়ে গিয়ে ঘুসিটা চালালেন দৈত্যের থুতনিতে।
ভূমিকম্প এবং মহীরূহ পতনের শব্দ সৃষ্টি করে দৈত্য পড়ে গেল।
ববি তার টিকিটটা কুড়িয়ে নিলেন। আর দু’জনকে হেঁচড়ে নিয়ে দুটি ছোট ঘরে ভরে দিলেন।
ভাগ্য ভালই ববির। যে মিনিট তিনেক সময় ব্যয় হল তার মধ্যে কেউ ইউরিন্যালে ঢোকেনি।
রিভলভারটা ববি তুলে নিলেন বটে, কিন্তু পকেটে ভরলেন না। আর একটি ছোট ঘরে সেটি কমোডের মধ্যে নিক্ষেপ করে বেরিয়ে এসে লাইনে দাঁড়ালেন।
যে ওজনের মার দিয়েছেন দু’জনকে তাতে ঘণ্টা দেড়-দুইয়ের আগে চেতনা ফেরার কথা নয়। অবশ্য কপাল খারাপ হলে কত কী তো ঘটতে পারে।
ঘটল না অবশ্য। এম্বাকেশন কার্ড নিয়ে ববি রায় গিয়ে এক কাপ কফি খেলেন। ইউরিন্যালটা একবার দেখে এলেন। দুটি ছোট ঘর এখনও বন্ধ, কোনও অঘটন ঘটেনি।
একটু বাদেই সিকিউরিটি চেক-এর ঘোষণা শুনতে পেলেন ববি। তার ঢোলা পোশাক এবং কামানো চিবুক বোধহয় সিকিউরিটির লোকেরা বিশেষ পছন্দ করল না। কিন্তু ববির পকেটে টাকা আর রুমাল ছাড়া কিছু নেই দেখে ছেড়ে দিল।
প্লেন আকাশে উড়বার পর ববি স্বস্তি বোধ করলেন। ক্ষুধার্তের মতো খেলেন ব্রেকফাস্ট এবং নাগপুরের আগেই ঘুমিয়ে পড়লেন।
কলকাতায় যখন প্লেন নামল তখন সাড়ে দশটা বেজে গেছে। ট্যাক্সি ধরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সোয়া এগারোটা। কত কী ঘটে যেতে পারে এব মধ্যে, কত কী…।
ববি লীনার নম্বর ডায়াল করলেন। বাড়ি নেই।
ববি তাড়াহুড়ো করলেন না। আগে দাড়ি কামালেন, দাঁত মাজলেন, তারপর জীবাণুনাশক মিশিয়ে গরম জলে স্নান করলেন। তটস্থ বাবুর্চি চমৎকার ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দিল। অম্লানবদনে ববি দ্বিতীয়বার প্রাতরাশ সারলেন। সারাদিন খাওয়া হয় কি না হয় কে জানে!
দু’-একটা ছোটখাটো জিনিস পকেটে আর হাতব্যাগে পুরে নিলেন ববি। তারপর তোক্সওয়াগনটা বের করলেন গ্যারাজ থেকে।
এমন সময় একটা অ্যাম্বাসাডার এসে বাড়ির সামনে থামল এবং অতিশয় উত্তেজিত ভঙ্গিতে গাড়ি থেকে নেমে এল ইন্দ্রজিৎ। তার দুটো চোখ বড় বড়, মুখখানা লাল।
স্যার!
বলো ইন্দ্রজিৎ।
আপনি এসে গেছেন! বাঁচালেন। ব্যাড নিউজ স্যার, ভেরি ব্যাড নিউজ।
ববি চোখ ছোট করে ইন্দ্রজিতের দিকে চেয়ে বললেন, ইজ শি কিল্ড?
কোনও সন্দেহ নেই।
কী হয়েছে সংক্ষেপে বলল।
আপনার ফোন পেয়েই আমি আমার এক চেনা গ্যারাজ থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করি। পার ডে আড়াইশো টাকা প্লাস তেল আর মবিল…
ওটা বাদ দাও, তারপর বলো।
মিস ভট্টাচার্যের বাড়ির সামনে ঠিক সাতটায় হাজির হয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। উইদাউট ব্রেকফাস্ট অ্যান্ড উইদাউট ইভন এ প্রপার কাপ অফ টি…
কাট দি ব্রেকফাস্ট।
ওঃ আপনি তো আবার অন্যের খাওয়ার ব্যাপারটা পছন্দ করেন না। হ্যাঁ, বলছিলাম, ঠিক ন’টায় ওই ছেলেটি আসে, দোলন। মিস ভট্টাচার্য আর দোলন একটা ফিয়াট নিয়ে বেরোয় ন’টা চল্লিশ নাগাদ। এবং একটা পন্টিয়াক গাড়ি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওদের ফলো করতে শুরু করে।
তুমি কী করলে?
আমিও পন্টিয়াকটাকে ফলো করতে থাকি তবে একটু ডিসট্যান্স রেখে। আপনি তো জানেনই স্যার যে আমার রিভলভার নেই।
তারপর কী হল?
গড়িয়া ছাড়িয়ে আরও কয়েক মাইল যাওয়ার পর মিস ভট্টাচার্য কেন কে জানে, গাড়িটা হঠাৎ একটা কাঁচা রাস্তায় নামিয়ে দিলেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই পন্টিয়াক থেকে গুলি ছুটল। পিছনের একটা টায়ার ফেঁসে গিয়েছিল। আর লীনা–কী বলব স্যার–ঝাঁসীর রানি, রানি ভবানী, জোয়ান অব আর্ক, দেবী চৌধুরানি ছেঁকে তৈরি মেয়ে স্যার।
কী করল সে?
গাড়ি থেকে নেমে এসে পিস্তল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে গুলি চালাতে লাগল।
মাই গড।
একটু দূরে ছিলাম তাই ঠিক বলতে পারব না ব্যাপারটা কী হয়েছিল। তবে একটু বাদেই দেখলাম গুন্ডাদের গুলিতে মেয়েটা পড়ে গেল…