এ ছাড়া আমার কাছে কিছু নেই। আপনি দেখতে পারেন খুঁজে।
পুরুষমানুষের বডি সার্চ করা মেয়েদের পক্ষে শোভন নয়।
তা অবশ্য ঠিক। তবে আমাকে বিশ্বাস করলে ঠকবেন না।
লীনা বিশ্বাস করল না। ইন্দ্রজিতের কার্ডে ছাপা ফোন নম্বরে ডায়াল করল।
ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাপ্লায়ার্স।
লীনা শুনতে পেল একটা বেশ ভিড়াক্রান্ত অফিসের গণ্ডগোল ভেসে আসছে ফোনে। সে একটু উঁচু গলাতেই জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, মিস্টার ইন্দ্রজিৎ সেনকে একটু ডেকে দিতে পারেন?
ধরুন, দেখছি।
লীনা ফোন ধরে রইল।
একটু বাদেই গলাটা বলল, না এখনও আসেনি। কিছু বলতে হবে?
না, ধন্যবাদ। আপনাদের অফিসটা কত নম্বর ধর্মতলায়?
ত্রিশ নম্বর।
ধন্যবাদ।
লীনা ফোনটা রেখে দিল।
ইন্দ্রজিৎ তার দিকে চোরের মতো চেয়ে ছিল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, বিশ্বাস করলেন?
না। ওই ফোন নম্বরে হয়তো আপনার লোকই বসে আছে। অথবা ইন্দ্রজিৎ সেনের নাম ভাঁড়িয়ে আপনি অন্য কেউ হতে পারেন।
ছেলেটা বুঝদারের মতো মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, তা তো হতেই পারে। হয়ও।
লীনা মৃদু একটু হেসে বলল, তা হলে আমার এখন কী করা উচিত?
উচিত পুলিশে দেওয়া। কিন্তু আমি তো কিছুই লুকোইনি। ইচ্ছে করলে আপনি আমার সঙ্গে এখন আমার অফিসে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। সেখানে অন্তত একশোলোক আমাকে জেনুইন ইন্দ্রজিৎ সেন বলে আইডেনটিফাই করতে পারবে।
নিতান্তই ছা-পোষা চেহারার এই লোকটাকে আর বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে ইচ্ছে হল না লীনার। তবে সে একে একেবারে ছেড়েও দেবে না। লীনা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ঠিক আছে। আমি পরে খোঁজ নেব। আপনি আসুন।
লোকটা দরজা খুলে বেরিয়ে যেতেই লীনা সিকিউরিটিকে ফোন করল, ববি রায়ের সেক্রেটারি বলছি। জিনস আর সাদা কামিজ পরা একজন বছর পঁচিশের লোক এইমাত্র বেরিয়ে গেল। তাকে আটকান। সার্চ হিম, ক্রস একজামিন হিম প্রপারলি। আইডেনটিফাই করুন। ভেরি আর্জেন্ট।
লীনা উঠে দরজাটা লক করল। তারপর সুইচ টিপে ভিডিয়ো ইউনিটটা বের করে আনল গুপ্ত চেম্বার থেকে। তারপর কোড দিল, বয়ফ্রেন্ড।
পরদায় ফুটে উঠল, নো অ্যাকসেস। ট্রাই সেকেন্ড কোড।
লীনা চাবি টিপল, বার্থ ডে।
পরদায় ফুটল, নো অ্যাকসেস। ট্রাই থার্ড কোড।
লীনা আবার কোড দিল, আই লাভ ইউ।
পরদায় ফুটে উঠল, কনগ্রাচুলেশনস, ইউ হ্যাভ ডান ইট।
এর মানে কী কিছুই বুঝতে পারল না লীনা। দাঁতে দাঁত চেপে রাগে সে ফুঁসতে লাগল। ববি রায় কোনও প্র্যাকটিক্যাল জোক করে গেছেন কি?
নো অ্যাকসেস! লীনা টপ করে লেখাটা মুছে চাবি টিপল, নো অ্যাকসেস।
পরদায় ফুটে উঠল, দ্যাটস ক্লেভার অফ ইউ মিসেস ভট্টাচারিয়া!
লীনা দু’হাতে কপাল চেপে ধরে বলল, ও গড। লোকটা কী ভীষণ পাজি।
স্কাউন্ড্রেল! স্কাউন্ড্রেল!
ভিডিয়ো ইউনিটটা আবার যথাস্থানে নামিয়ে দিয়ে লীনা ববি রায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজের চেম্বারে বসল। ভাবতে লাগল। মাথাটা গরম। কান ঝাঁ ঝা করছে।
ফোনটা বাজতেই তুলে নিল লীনা, হ্যালো।
সিকিউরিটি বলছি। লোকটার নাম ইন্দ্রজিৎ সেন। সার্চ করে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। বাড়ি পাইকপাড়ায়, অফিস ধর্মতলায়। লোকটার বিরুদ্ধে কোনও স্পেসিফিক চার্জ থাকলে বলুন, পুলিশে হ্যান্ডওভার করে দেব।
নেই। ওকে ছেড়ে দিন।
লীনা কিছুক্ষণ ভূতগ্রস্তের মতো বসে রইল। তারপর উঠে আবার ববি রায়ের ঘরে ঢুকল। দরজা লক করে ভিডিয়ো ইউনিট নিয়ে বসে গেল। বয়ফ্রেন্ড। বার্থ ডে। আই লাভ ইউ। নো অ্যাকসেস।
পরপর একই উত্তর দিয়ে গেল যন্ত্র।
শেষ উত্তরটার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে রইল লীনা, দ্যাটস ক্লেভার অফ ইউ মিসেস ভট্টাচারিয়া।
একটু বিদ্রুপ আর তাচ্ছিল্য মেশানো মন্তব্যটা বিছের হুলের মতো বিধে রইল লীনার মনের মধ্যে। হামবাগ, ইনসোলেন্ট, মেগালোম্যানিয়াক।
বেশ কিছু চিঠিপত্র টাইপ এবং কয়েকটা মেসেজ পাঠানোর ছিল লীনার। বসে বসে চুপচাপ কাজ করে গেল। টিফিন খেল। এরই ফাঁকে একবার অ্যাকাউন্টসে ফোন করল। যে-কোনও অফিসারের গতিবিধি অ্যাকাউন্টসই দিতে পারে। ওদের কাছে সকলের টিকি বাঁধা।
মিস্টার রায় কি কলকাতায় নেই? উনি আমার জন্য কোনও মেসেজ রেখে যাননি।
হ্যাঁ, উনি আজ ভোরের ফ্লাইটে বম্বে গেছেন। তারপর ইউরোপে যাচ্ছেন আজ রাতে।
ইউরোপে কোথায়?
প্রথমে প্যারিস, তারপর আরও অনেক জায়গায়।
ধনাবাদ।
লীনা আরও কিছুক্ষণ কাজ করল। এক ফাঁকে ক্যাশ-কাউন্টার থেকে বেতন নিয়ে এল।
পাঁচটা বাজতে যখন পাঁচ মিনিট তখন রিসেপশন থেকে ফোন এল, দোলন এসেছে। অপেক্ষা করছে।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল লীনা। ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে নিয়ে উঠে পড়ল।
বেরোতে যাবে, ঠিক সেই সময়ে মারাত্মক ফোনটা এল।
হ্যাল্লো।
হ্যালো, আমি মিস লীনা ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
আমিই লীনা। বলুন।
আপনি ইন্দ্রজিৎ সেনকে চেনেন?
কে ইন্দ্রজিৎ?
প্রাইভেট ডিটেকটিভ ইন্দ্রজিৎ সেন?
ওঃ হ্যাঁ। স্মল টাইম প্রাইভেট আই। কী ব্যাপার?
ব্যাপারটা সিরিয়াস। আমি ওর পাশের অফিসে কাজ করি। ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাপ্লায়ার্স। আমি ওর বন্ধু। আজ দুপুরে অফিসে এসে ও আমাকে বলল, ওর যদি কিছু হয় তা হলে যেন আপনাকে একটা খবর দিই।
লীনা একটু শিহরিত হল, কী হয়েছে?
ইন্দ্র মারা গেছে।
হ্যাঁ।
দুপুরে কেউ এসে স্ট্যাব করে গেছে। দরজার তলা দিয়ে করিডোরে রক্ত গড়িয়ে আসায় আমরা টের পাই।
লীনার হাত কাঁপছিল। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কোনওক্রমে জিজ্ঞেস করল, সত্যিই বেঁচে নেই?