কে?
কেন সেটা আবার জিজ্ঞেস করছেন? ব্যাবসা-ব্যাবসা করে স্বার্থপর লোকটা মেয়েটার দিকে একটু নজরও রাখল না! ও যদি মানুষ হত তা হলে মেয়েটার এরকম পরিণতি হত বলে ভাবেন?
আপনি একটু শান্ত হন।
শান্ত হব? কী ভেবেছেন আপনারা? খুনির ফাঁসি হোক, একশোবার হোক, কিন্তু যার অবহেলার ফলে আমার ফুলের মতো মেয়েটা মরল সে কেন রেহাই পাবে?
ঠিক কথা। সে প্রশ্ন আপনাকে আমারও করতে ইচ্ছে করছে।
তার মানে?
আপনি যখন শচীনন্দনবাবুকে ছেড়ে চলে যান। তখন রিঙ্কু মাইনর। আপনি ইচ্ছে করলেই তো মেয়েকে নিয়ে যেতে পারতেন। নেননি কেন?
নিইনি বলেই মেয়েটাকে অবহেলা করা হবে? শুধু আমারই তো মেয়ে নয়, ওরও তো!
এটা আমার প্রশ্নের জবাব হল না। আমি জানতে চাই, আপনি মেয়েকে নেননি কেন?
মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে শ্যামলী বলল, আমার অসুবিধে ছিল।
কীরকম অসুবিধে?
এ প্রশ্নের জবাব কি দিতেই হবে?
না দিলেও কিছু করার নেই। ইচ্ছে না হলে বলবেন না।
আমার সেকেন্ড হাজব্যান্ড রাজি ছিল না।
আপনি কানপুরে থাকেন?
হ্যাঁ।
অত দূর থেকে মেয়ের খবর কীভাবে নিতেন?
চিঠি লিখে।
শচীনন্দনবাবুকে চিঠি লিখতেন?
না।
তা হলে?
পাড়া-প্রতিবেশীদের লিখতাম।
পাটিকুলারলি কাকে?
সে আছে। রিঙ্কু একটু বড় হওয়ার পর ওকেই লিখতাম।
রিঙ্কু জবাব দিত?
হ্যাঁ।
সে কি আপনার জন্য ফিল করত?
নিশ্চয়ই।
আপনার ডিভোর্স কতদিন হয়েছে?
আট বছর।
রিঙ্কুকে আপনি কত বছর দেখেননি?
চার বছর আগে এসে দেখে গেছি।
চার বছর লম্বা সময়। মেয়েকে দেখতে ইচ্ছে হত না?
হবে না। সবসময়ে তো। ওর কথা ভাবতাম। কিন্তু ওখানে আমার নিজস্ব একটা ব্যাবসা আছে।
কীসের ব্যাবসা?
বাচ্চাদের ড্রেস তৈরির ব্যাবসা।
টাকা কে দিয়েছিল?
সুজিত-মানে আমার হাজব্যান্ড।
উনি কি আপনার আগের চেনা?
হ্যাঁ। ছেলেবেলা থেকে।
ওকেই আগে বিয়ে করলেন না কেন?
সেটা দিয়ে এই তদন্তে কী দরকার?
কখন কোনটা কাজে লাগে তার ঠিক কী?
বিয়ে করিনি বাধা ছিল বলে।
কীসের বাধা?
আমার বাবা রাজি ছিলেন না।
কেন, জাতের বাধা ছিল?
না।
তবে?
সুজিতকে আমার বাবা পছন্দ করতেন না।
আপনার বাবা বেঁচে আছেন?
না।
ঠিক আছে, আমি আপনার আর সময় নষ্ট করব না।
লোকটার ফাঁসি কবে হবে?
কার ফাঁসি?
ওই লোকটার। যে আমার মেয়েকে খুন করেছে!
ফাঁসি দেওয়ার মালিক আমি নই।
ওকে আমার হাতে ছেড়ে দেবেন?
কেন?
আইনের ফাঁক দিয়ে হয়তো বেরিয়ে যাবে। তার চেয়ে আমার হাতে ছেড়ে দিন।
কী করবেন?
খুন করব।
শবর হাসল, লোকটাকে কেউই পছন্দ করে না দেখছি।
পছন্দ করার কথা নাকি? রেপ আর খুন দুটোর জন্য তো আর দু’বার ফাঁসি হবে না। আমার হাতে ছেড়ে দিলে আমি আগে একটা একটা করে ওর চোখ ওপড়াব, জিব টেনে ছিঁড়ব, পুরুষাঙ্গ কাটব…
দাঁড়ান, অতি উত্তেজিত হবেন না। অপরাধ এখনও প্রমাণ হয়নি।
সেটা আপনাদের ইন এফিসিয়েন্সির জন্য হয়নি। অত বড় একটা অন্যায় করল আর আপনারা এখনও প্ৰমাণই করতে পারলেন না।
আমরা অযোগ্য হতেই পারি। কিন্তু তবু এসব ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা ভাল নয়।
সেইজন্যই তো বলছি, ওকে না হয় জামিনেই ছেড়ে দিন কয়েকদিনের জন্য।
ওকে মারলে আমাদের যে আপনাকে ধরতে হবে।
ধরবেন। মরতেও রাজি।
আপনি অযথা রেগে যাচ্ছেন।
অযথা? আপনার মেয়ে আছে?
থাকার কথা নয়। আমি বিয়ে করিনি।
তা হলে বুঝবেন কী করে?
মেয়ের বাবা নাই বলে কি আপনাদের দুঃখের কারণটা বুঝতে পারব না?
ওর গ্যারেজটায় আমি আগুন লাগাব।
শবর শুধু হাসল।
শ্যামলী বলল, আচ্ছা, ওর সঙ্গে লক আপ-এ গিয়ে দেখা করতে দেবেন?
দেখা করতে চান?
খুব চাই। দরকার হলে ঘুষ দেব।
ঘুষ দিতে হবে না। তবে আমি চেষ্টা করব।
সত্যি করবেন?
করব।
থ্যাঙ্ক ইউ।
৩. ছবিটা কার
ছবিটা কার মিস্টার দাশগুপ্ত?
রিঙ্কু নামে একটা মেয়ের।
ও, সেই বারাসাতের মার্ডার কেসটা না?
হ্যাঁ, ছবিটা কেমন দেখছেন?
মেয়েটা তো দেখতে স্মার্ট অ্যান্ড লাভলি।
আর কিছু? একটু দুষ্ট ছিল বোধহয়?
হ্যাঁ, তা ছিল।
আচ্ছা দাশগুপ্ত, এটা তো রাজ্য পুলিশের ব্যাপার, আপনি কেন ওদের কেসে ফেঁসে যাচ্ছেন? ইউ আর গোয়িং আউট অব ইয়োর বাউন্ডস টু হেলপ দেম, তাই না?
শবর একটু হাসল, হ্যাঁ মিস্টার ঘোষাল, ব্যাপারটা তাই।
এই এক্সট্রা দায়িত্ব নিলেন কেন? মেয়েটা কি আপনার চেনা?
না মশাই, আমি ফ্যাক খাটছি। বলতে পারেন।
কিন্তু কেন?
রজাতদার জন্য।
রজাতদা মানে? ডিআইজি রাজত গুপ্ত?
হ্যাঁ।
আপনাদের বদ্যিতে বদ্যিতে বেশ ভাব, তাই না?
শবর হাসল, ঠিকই বলেছেন। বদ্যিরা অপেক্ষাকৃত স্মল কমিউনিটি, আর একটু বোধহয় ক্ল্যানিশও।
রজতবাবু নিশ্চয়ই আপনার আত্মীয় হন?
দূর সম্পর্কের।
ওই তো, বদ্যিরা সবাই সবার আত্মীয়, আর এ মেয়েটা কি রজতবাবুর কেউ হয়?
না।
তা হলে ওঁর ইন্টারেস্ট কীসের?
ইন্টারেস্ট কেন তা আমি জানি না। আই ওয়াজ আসকড টু হেলপি।
সবই জানেন মশাই, বলবেন না।
শবর হাসল।
ছবিটা স্টাডি করছেন কেন?
ছবি অনেক সময় অনেক কথা বলে।
কেসটা কি খুব জটিল? মার্ডারারকে তো ধরেছেন।
আমি ধরিনি। লোকাল পুলিশ ধরেছে। সময়মতো না ধরলে লোকটা গণপিটুনিতেই খুন হয়ে যেত।
লোকে আজকাল বড্ড বেশি আইন হাতে নিচ্ছে।
হ্যাঁ। তার জন্য ওভার অল পরিবেশটাই দায়ী। লোকে পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়েছে। আইনের ওপর বিশ্বাস নেই, দেশে চোর ডাকাত খুনিও তো বাড়ছে।
হুঁ। লোকটার এগেনস্টে কেস দেওয়া হয়েছে?
না, তবে কেস জোরালো। প্রমাণ হয়ে যাবে।