বিরক্ত কীসের? আপনারা আইনের রক্ষক, আপনাদের একটু সাহায্য করব এ তো সৌভাগ্য।
শবর সনাতনবাবুর মুখোমুখি চেয়ারে বসল।
একটু চা বা কফি?
না, ধন্যবাদ।
ঠান্ডা কিছু খাবেন?
না, না, ব্যস্ত হবেন না, আই অ্যাম অলরাইট।
তারপর বলুন।
ভজনবাবুর সঙ্গে আপনার কেমন পরিচয়?
খুব একটা নয় মশাই। যৎসামান্য। বাড়ির উলটোদিকে একটা গ্যারেজ থাকায় খুবই ডিস্টার্বড হতে হয়। দিনরাত দুমদাম শব্দ হচ্ছে, কলকবজ চলছে, মিস্ত্রিদের হল্লাও আছে।
আপনি কি গ্যারেজটা তুলে দেওয়ার জন্য একটা মামলা করেছিলেন?
ঠিক মামলা নয়। আমার স্ত্রী হার্টের রুগি, জোরালো শব্দ তার পক্ষে ক্ষতিকারক। সেটা জানিয়ে পুলিশে একটা রিপোর্ট করি। ভজনবাবুকে একটা উকিলের চিঠিও দিই।
তার আগে কি ভজনবাবুর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছিল?
হয়েছিল।
কীরকম কথা?
প্ৰথমে তো লোকটাকে ভালমানুষ বলেই মনে হয়েছিল। আমি ওঁকে মাঝে মাঝে বলতাম। লোকালিটির মধ্যে গ্যারেজ থাকায় পাড়ার লোকের অসুবিধে হচ্ছে, উনি যেন হাইওয়ের দিকে গ্যারেজটা সরিয়ে নেন।
উনি কী বলতেন?
উচ্চবাচ্য করতেন না। চুপচাপ শুনতেন।
তারপরই ঝগড়া লাগে?
ঝগড়া ঠিক ওর সঙ্গে হয়নি।
তবে কার সঙ্গে?
ভজনবাবুর একজন কর্মচারী আছে, তার নাম রাখাল।
খুব লম্বাচওড়া?
হ্যাঁ সে-ই। ও হচ্ছে ঘাটপুকুরের মস্তান।
ঝগড়া হল কেন?
একদিন দুপুরে ওরা একটা গাড়ির বডি তৈরি করছিল। সে সাংঘাতিক দুমদাম শব্দ। আমার স্ত্রী দুপুরে ঘুমোতে পারেননি, শব্দে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি অফিস থেকে ফিরে ঘটনা শুনে গ্যারেজে যাই। তখন রাখালের সঙ্গে কথা হয়।
কী কথা হল?
আমি বললাম, এরকম চলবে না। রাখালও তেড়া তেড়া জবাব দিচ্ছিল। তারপর ঝগড়ার মতো হল।
তখন কি ভজনবাবু গ্যারেজে ছিলেন?
না।
ঝগড়াটা কতদূর গড়িয়েছিল?
আমরা ভদ্রলোক, ছোটলোকদের সঙ্গে কি ঝগড়ায় পারি? রাখাল আমাকে দেখে নেবে। বলে শাসিয়েছিল।
আপনি কী করলেন?
পাড়ার নাগরিক কমিটিকে জানালাম। তারা পরদিন গিয়ে ভজনবাবুকে ধরল।
ফলাফল কী হয়েছিল?
ভজনবাবু রাখালকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। রাখাল ক্ষমাও চাইল। কিন্তু গ্যারেজের শব্দটার যে সমস্যা ছিল তার তো সমাধান হল না। ভজনবাবু বললেন, আপনারা একটা টাইম বেঁধে দিন, আমরা সেই সময়েই গাড়ির বডির কাজ করব, অন্য সময়ে করব। ब्न्म
তা হলে তিনি কো-অপারেট করতেই চেয়েছিলেন।
তা বলতে পারেন। তবে ওটা আই ওয়াশ। গ্যারেজে শব্দ তো সারাদিনই হত। বডির কােজই তো শুধু নয়।
আপনার একটি মেয়ে, তাই না?
হ্যাঁ। তার বিয়ে হয়ে গেছে।
আপনার জামাই কন্ট্রাক্টর তো!
সবই তো জানেন তা হলে।
জানি। জানাটাই আমাদের কাজ।
সনাতনবাবু, আপ্যায়িতের হাসি হেসে বললেন, আপনারা জানবেন না তো কে জানবো?
আপনার জামাই বিজয়বাবু চাঁপাডালির মোড়ের কাছে থাকে।
আজ্ঞে হ্যাঁ।
আপনি চান। আপনার মেয়ে-জামাই আপনার কাছাকাছি কোথাও এসে থাকুক, যাতে বিপদে আপদে তারা আপনাদের দেখাশোনা করতে পারে।
কী আশ্চর্য! হ্যাঁ, তাই। আপনি সত্যিই
দাঁড়ান, কথাটা শেষ করার পর আপনার হয়তো ততটা ভাল লাগবে না।
আরে বলুন না। ভাল না লাগার কী আছে?
আপনি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য এ পাড়ায় একটু বড় একটা প্লট খুঁজছেন, তাই তো!
হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই।
আপনার জামাই ভজনবাবুর গ্যারেজের জমিটাই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছিল। কিন্তু ভজনবাবু জমি বিক্রি করতে রাজি হননি।
আমার জামাই ওকে দুনো টাকা অফার করেছে। তাও রাজি হয়নি। এতে কোনও অপরাধ হয়নি তো!
আরে না। অপরাধ কীসের? তবে ভজনবাবুর গ্যারেজটা তুলে দিতে পারলে আপনার অনেক সুবিধে।
সনাতন চুপ।
এবার ঘটনার দিনের কথা।
বলুন না। কী বলতে হবে। পুলিশকে একদফা বলেছি।
সেদিন রাতে রিঙ্কু খুন হয়।
হ্যাঁ মশাই। কী নৃশংস ব্যাপার। ফুটফুটে মেয়েটা পাড়া দাপিয়ে বেড়াত। তাকে কেউ ওভাবে খুন করে? লোকটার ফাঁসি নয় মশাই, শূলে চড়ানো উচিত ওকে।
সে তো বুঝলাম। কিন্তু শূলে চড়াতে গেলে কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণের দরকার।
সোজা কেস মশাই। আমরা সবাই জানি।
কী জানেন?
খুন। আর রেপ ওই ভজনই করেছে।
কীভাবে জানলেন?
রিঙ্কুর তো যাতায়াত ছিলই ওর কাছে। সেদিন সন্ধে থেকে আটকে রেখেছিল ঘরে। তারপর রেপ করার পর মেরে ফেলে।
কী করে বুঝলেন? কোনও চিৎকার শুনেছেন?
চিৎকার! না, সেরকম কিছু শুনিনি।
এ জায়গাটা খুব নির্জন। রাতে আরও নির্জন। সামান্য শব্দ হলেও শোনার কথা।
তা ঠিক। তবে আমার ঘরে অনেক রাত অবধি টিভি চলে। আমার শাশুড়ি ইনসোমানিয়ার রুগি। তিনি সন্ধেরাত্তির থেকেই টিভি ছেড়ে বসে থাকেন। টিভির শব্দে
বুঝেছি। রিঙ্কুকে আপনি সেদিন গ্যারেজে ঢুকতে দেখেছেন?
না, দেখিনি। তবে সাইকেলটা দেখেছি।
সেটা জানি। রিঙ্কু কি খুব ঘনঘন গ্যারেজে আসত?
খুব ঘনঘন। রোজই আসত।
আপনার কি ধারণা মেয়েটা ভজনবাবুর সঙ্গে ইনভলভূড ছিল?
মেয়েটা একটু ফস্টিনস্টি করার মতো ছিল। আর ভজনবাবু তো অতি বাজে লোক। শুনেছি। ওর চরিত্রদোষ আছে বলে বউয়ের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
ভজনবাবুর সঙ্গে রিঙ্কুর ঘনিষ্ঠতা কীরকম ছিল জানেন?
গাড়ি চালাতে শেখাত, ঢলাঢ়লিও করত, গ্যারেজে বসে আডডা মারত। তাই নিয়ে অশান্তিও হয়েছে।
কীরকম অশান্তি?
পাড়ার ছেলেরা ভজনবাবুর ওপর কয়েকবারই চড়াও হয়েছে।
কেন?
রিঙ্কুর সঙ্গে ওর। খারাপ সম্পর্ক বলে।
রিঙ্কুর বাবা কি কখনও ভজনবাবুকে কিছু বলেছে?