হ্যাঁ, খুবই সাংঘাতিক লোক। আর এই কথাটাই আপনাকে আদালতে দাড়িয়ে বলতে হবে।
আমাকে না হলেও তো হয়। রতনই তো সাক্ষী আছে।
রতন আমাদের খুব ইস্পার্ট্যান্ট সাক্ষী। কিন্তু তার একটা কথা গোলমেলে।
কোন কথাটা?
যে-মেয়েটার কণ্ঠস্বর সে ভজনবাবুর ঘরের ভিতর শুনতে পেয়েছিল সেটা রিঙ্কুর কি না এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়।
ওটা তো সামান্য ব্যাপার। ঘরের দরজা বন্ধ ছিল, হয়তো তাই গলাটা ভাল শুনতে পায়নি।
সেটা খুব সম্ভব।
ভজনের সঙ্গে রিঙ্কুর কী কথা হচ্ছিল?
শবর একটু হেসে বলে, শুনতে চান? এসব টপ সিক্রেট কি আপনার শোনা উচিত?
উচিত না হলে বলবেন না।
আরে রাগ করছেন কেন? রতন শুনতে পায় মেয়েটা বেশ চিৎকার করেই বলছে, কেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না? আপনাকে করতেই হবে। জবাবে ভজনবাবু বেশ উত্তেজিত গলায় বলছিলেন, এসব কী বলছি পাগলের মতো? তোমাকে আমি ওভাবে কখনও ভাবিইনি! তুমি বাড়ি যাও, আমাকে এভাবে বিরক্ত কোরো না। জবাবে মেয়েটা বলছিল, আপনি একটা কাপুরুষ, নপুংসক, আপনার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই, ইত্যাদি। ডিটেলস পুলিশের খাতায় লেখা আছে।
ও বাবা! রিঙ্কু আবার ওকে বিয়েও করতে চেয়েছিল?
চাইতেই পারে। ভজনবাবুর বয়স বোধহয় আঠাশ-উনত্রিশ, তাই না?
ওরকমই।
বয়সের একটু তফাত হত, কিন্তু বিয়ে হতেই পারে।
তা পারে, বিয়েই না হয় করত, মারাল কেন?
সেটাই প্রশ্ন। আপনি বলতে পারেন কেন মারল?
না। কিন্তু ভজন কী বলছে?
ওঁর মুখ থেকে খুব বেশি কথা বের করা যায়নি। উনি বলছেন, সেইদিন সন্ধেবোলা ওঁর ঘরে যে-মেয়েটি ছিল সে রিঙ্কু নয়।
তবে কে?
তা উনি বলতে রাজি নন।
বলবে কী করে? সত্যি কথা বললে তো প্ৰমাণই হয়ে গেল।
আমাদেরও সন্দেহ মেয়েটা রিঙ্কুই।
এখনও সন্দেহ?
নিরঙ্কুশভাবে প্রমাণিত না হলে সন্দেহ কথাটাই ব্যবহার করা ভাল।
সে আপনারা করুন। আমি জানি মেয়েটা রিঙ্কুই।
শবর একটু হাসল, তারপর বলল, ভজনবাবুকে ফাঁসিতে লটকানোর জন্য আপনি যে একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দেখছি।
হব না! একটা মেয়েকে রেপ করে যে খুন করেছে তার কি ফাঁসি হওয়া উচিত নয়?
ফাঁসি বা যাবজ্জীবন যাইহোক, সব সন্দেহের সম্পূর্ণ নিরসন না করতে পারলে জজ তো আর সেই হুকুম দেবেন না।
আপনি রিঙ্কুর সাইকেলের কথাটা কি ভুলে যাচ্ছেন?
না, আমি কিছুই ভুলি না, রিফুর সাইকেলটাও একটা মস্ত এভিডেন্স। কিন্তু ভজনবাবু বলছেন, সাইকেলটা যে ওখানে ছিল তা তিনি জানতেন না। সে ব্যাপারে কিছু বলতেও পারেন না।
বেশ কথা তো!
হ্যাঁ। পুলিশ কেস সাজালে ভজনবাবু যে বিপদে পড়বেন তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু কেস সাজানোর ব্যাপারে আমাদের ফুল প্রফ হওয়া দরকার।
ফুল প্রফ হওয়ার জন্য আর কী কী দরকার?
ভাল হত। একজন আই উইটনেস পেলে।
গ্যারেজের উলটোদিকে যে-লোকটা থাকে সে কিছু দেখেনি?
না। আরও একটা কথা।
কী কথা?
পুলিশের কুকুর কিন্তু ভজনবাবুর গ্যারেজের দিকে যায়নি।
তাই বুঝি?
হ্যাঁ, তবে বর্ষাকাল তো এবং সেদিন রাত্রেও বৃষ্টি হয়েছিল। কাজেই গন্ধের ট্রেলটা মুছে যেতেই পারে।
সে তো পারেই। আমার যেন মনে হচ্ছে আপনি ঘটনাটা সম্পর্কে তেমন নিশ্চিত নন।
আমাকে বলতে পারেন সন্দেহা-পিচাশ।
তাই দেখছি, পুলিশ কি এইরকমই?
না। আমি এইরকম।
তা হলে আপনি ক্রিমিনালদের ধরবেন কী করে?
সবসময়ে যে ক্রিমিনালদের ধরা যায় এমন নয়, অনেক ফাঁকফোকর দিয়ে তারা রেহাই পেয়ে যায়। ওই ফাঁকফোকারগুলোই ভরাট করার চেষ্টা করছি।
আমার তো মনে হচ্ছে, ওটা ওপেন অ্যান্ড শাট কেস।
শবর মৃদু হেসে বলল, হলে তো ভালই হত। এবার একটা কথা জিজ্ঞেস করছি, একটু ভেবে জবাব দেবেন।
নিশ্চয়ই। আমি তো এতক্ষণ কো-অপারেটই করেছি।
হ্যাঁ। আপনি নার্ভাস হননি।
এবার প্রশ্ন করুন।
ফুলশয্যার রাতে ভজনবাবুর যে পরিচয় আপনি পেয়েছিলেন তা খুবই খারাপ এবং ভয়ংকর।
হ্যাঁ।
কিন্তু তারপরও আপনি আরও সাতদিন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন।
হ্যাঁ।
আপনি কি ভজনবাবুর ঘরেই রাতে থাকতেন? আই মিন, একসঙ্গে?
পাগল নাকি? আমি ওর ঘরে শুতাম। কিন্তু ও চলে যেত ওর ভাই পুজনের ঘরে। বাড়ির লোকেরাই এই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
এই সাতদিনের কথা কিছু মনে আছে?
কেন থাকবে না? মাত্র তো দেড়-পৌনে দুই বছরের ঘটনা।
সেই অভিজ্ঞতোটা কীরকম? মানে রিগার্ডিং ভজনবাবু।
ও কিন্তু কখনও আমার কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করেনি, এমনকী লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতও না।
ওই সাতদিনে আপনার সঙ্গে ভজনবাবুর কথা হত কি?
না। আমার কাছাকাছি আসত না।
আপনি এই সাতদিন শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন কেন? মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে?
না। প্রবলেমটা মানিয়ে নেওয়ার মতো ছিল না। সাতদিন ছিলাম, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অনুরোধে। ওর ভাই পূজন। আর বোন দেবারতি আমাকে খুবই ভালবাসত। শ্বশুরমশাই অসুস্থ মানুষ, শয্যাশায়ী ছিলেন। কিন্তু শাশুড়ি খারাপ ছিলেন না। খুব ভালমানুষ গোছের।
এই সাতদিনে ভজনবাবুর বিশেষ কোনও গুণ বা বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েছে কি?
না।
ভাল করে ভেবে দেখুন। দেয়ার মে বি এ ভাইটাল ফ্যাক্ট।
কিছু মনে পড়ছে না তেমন। তবে
তবে কী? থামলেন কেন?
ও সকালবেলা রোজ পাড়ার কুকুরদের পাউরুটি খাওয়াত।
বাঃ, এই তো একটা কথা জানা গেল। আর কী?
নাঃ, আর কিছু নয়।
২. নমস্কার সনাতনবাবু
নমস্কার সনাতনবাবু।
আরে, আসুন, আসুন। নমস্কার, নমস্কার।
একটু বিরক্ত করতে এলাম।