পারছি। সন্ধেবেলা গ্যারেজে সাইকেলটা দাঁড় করানো ছিল।
হ্যাঁ।
তা হলে তো প্ৰমাণই হয়ে গেল যে, রিঙ্কু ভিতরে ছিল।
আপাতদৃষ্টিতে তাই।
আবার আপাতদৃষ্টি কেন?
পুলিশের মনটা বড্ড খুঁতখুতে। এই যে ধরুন না। আমার মোটরবাইকটা এখন আপনাদের বাড়ির সামনে দাঁড় করানো আছে, আর আমি ভিতরে বসে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। মোটরবাইকটা যে চেনে সে ওটা দেখে বলতেই পারে যে, শবর দাশগুপ্ত এখন বিভাবরী ভট্টাচার্যের বাড়িতে বসে আছে। কিন্তু এমন তো হতেই পারে যে, মোটরবাইকটা আর কেউ টেনে এনে রেখেছে বা আমিই ওটা রেখে দিয়ে বাসে উঠে বাড়ি চলে গেছি। সুতরাং এটাকে ফুল প্রািফ বলে ধরা যায় না।
আপনারা সোজা জিনিসটাকে প্যাচালো করতে ভালবাসেন।
তা নয়। আসলে দুনিয়ায় সহজ সরলভাবে কিছুই ঘটে না। তা যদি ঘটত তা হলে আমাদের কত পরিশ্রম বেঁচে যেত বলুন।
তা বটে। একটু চা খাবেন? অনেকক্ষণ এক নাগাড়ে কথা বলছেন।
কফি হলে হত। বেশিরভাগ বাড়িতেই চা-টা ভাল হয় না।
আপনি ভীষণ ঠোঁটকাটা তো!
খারাপ চা খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ঠোঁটকাটা হতে হয়েছে।
আচ্ছা, কফিই করে আনছি।
আনুন।
বিভাবরী উঠে যাওয়ার পর শবর ঘরটা আবার দেখল। সচ্ছল পরিবারের বৈঠকখানা যেমন হয় তেমনই সাজানো। সোফাসেট, সেন্টার টেবিল, নিচু বুক কেস, দেয়ালে কিছু ওয়াল ডেকোরেশন। বুক কেসের ওপর কাঠের তৈরি বাঁকুড়ার ঘোড়া। তার পাশে দুটো স্টিল ফ্রেমের ছবি। একটা ছবি বিভাবরীর মা আর বাবার। অন্যটা বোধহয় কম বয়সে বিভাবরী আর তার দাদার।
বিভাবরী কফি এনে বলল, শুধু দুধের কফি। চলবে তো!
শবর একটা চুমুক দিয়ে বলল, বাঃ।। চিনিটা খুব পারফেক্ট হয়েছে তো। চিনিতেই গণ্ডগোলটা বেশি হয়।
বিভাবরী একটু হেসে বলল, রিঙ্কুর সাইকেলের গল্প কিন্তু এখনও শেষ হয়নি।
শবর বিভাবরীর দিকে তাকাল। মেয়েটির চেহারা খুবই ভাল। খুব লম্বা নয়, তেমন ফরাসাও বলা যায় না, কিন্তু মুখখানা খুব ঢলঢলে। চোখ দু’খানা টানা এবং দৃষ্টিটা মায়ায় মাখানো। অ্যাট্রাকটিভ। হ্যাঁ ভেরি অ্যাট্রাকটিভ।
কী দেখছেন?
ভাবছি আপনার মতো একজন সুন্দরী মহিলার ভাগ্যটা সুন্দর হল না কেন। কী যেন কথায় আছে, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর–না। কী যেন!
বিভাবরী একটু লজ্জার হাসি হেসে বলল, আমি সুন্দরী হলে বলতে হয় আপনি সুন্দরী কথাটার মানেই জানেন না।
তা হতে পারে। তবে যা চোখের পক্ষে স্নিগ্ধকর, তাই আমার সুন্দর বলে মনে হয়। যাকগে।
হ্যাঁ, খুব আনইজি সাবজেক্ট।
যা বলছিলাম। রিঙ্কুর সাইকেল। গ্যারেজে রিঙ্কুর সাইকেলটা সন্ধে থেকেই ছিল। বা তারও আগে থেকে। অন্তত সন্ধে থেকে যে ছিলই তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
রিঙ্কুকে কেউ গ্যারেজে ঢুকতে দেখেনি?
খুব ভাল প্রশ্ন। না, আমরা এখনও পর্যন্ত কোনও প্রত্যক্ষদশীকে পাইনি যে রিঙ্কুকে গ্যারেজে ঢুকতে দেখেছে। জায়গাটা একটু নির্জন। উলটোদিকে মল্লিকবাবুর বাড়ি, আশেপাশে আর বাড়ি নেই। একাধারে ডোবা, অন্য ধারে একটা বাড়ির ভিত হয়ে পড়ে আছে। লোকজন বিশেষ চলাচল করে না। ভজনবাবুর গ্যারেজেই যা লোকের যাতায়াত। সেদিন রবিবার গ্যারেজ বন্ধ থাকায় লোকজনও ছিল না।
রতন না। কী যেন নাম–সে কী বলে?
রতন ডিউটিতে এসেছিল রাত ন’টা নাগাদ।
সে সাইকেলটা দেখেনি?
দেখেছে। তবে রিঙ্কু ভিতরে ছিল কি না সে জানে না।
কেন, তার তো খোঁজ করা উচিত ছিল।
সে যা বলেছে তা মোটামুটি এরকম, সে রাত ন’টার কিছু পরে গার্ড দিতে আসে। ফটক খোলাইছিল। একটা বাতি মাত্ৰ জ্বলছিল বলে জায়গাটায় আলো আঁধারি ছিল। সে ফটকের কাছে একটা পুরনো গাড়িতে বসে ছিল। বেশ কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ সাইকেলটা তার নজরে পড়ে। ওদিকে ভজনবাবুর ঘরের দরজা তখন বন্ধ। তার ধারণা হয়েছিল রিঙ্কু ভজনবাবুর ঘরে বসে গল্পটল্প করছে।
ইস লোকটা যদি তখন গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিত তা হলে বোধহয় মেয়েটা বেঁচে যেত।
ধাক্কা না দিলেও সে পা টিপে টিপে দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়েছিল।
ওঃ। তারপর?
সে শুনতে পায়, ভিতরে একটি মেয়ে বা মহিলার সঙ্গে ভজনবাবুর কথা হচ্ছে। কথা বা তর্কাতর্কি।
তর্কাতর্কি?
হ্যাঁ। অন্তত রতন তাই বলছে।
মেয়েটার গলা তো নিশ্চয়ই তার চেনা।
না চেনার কথা নয়। তবে সেটা যে রিঙ্কুরই গলা এটা সে হলফ করে বলতে পারছে না।
এর পরও কি কোনও সন্দেহ আছে। শবরবাবু?
না, সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু সন্দেহ তো প্ৰমাণ নয়।
সারকামস্টিয়াল এভিডেন্স বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।
আছে। আর সেটাই আমাদের তুরুপের তাস।
রতন মেয়েটাকে দেখেনি, ভাল কথা। কিন্তু রেপ এবং খুনের পর লাশটা যখন মাঠে নিয়ে ফেলা হল, তখন তো তার চোখ বুজে থাকার কথা নয়।
বলছি ম্যাডাম। কথাটা খুবই সত্যি। রতন জানিয়েছে, রাত দশটার কিছু পরে ভজনবাবু দরজা খুলে বেরিয়ে তাকে ডাকেন। রতন খুব কাছাকাছি যাওয়ার আগেই ভজনবাবু তাকে কোকাকোলার ক্যান আনতে পাঠান। ধারে কাছে কোৰ কোলার ক্যান পাওয়া যায় না। তাকে বেশ কিছুটা দুরে যেতে হয়েছিল। প্রায় চল্লিশ মনিট পরে সে ফিরে এসে ভজনবাবুর দরজায় নক করে। ভজনবাবু দরজা খুলে ক্যানগুলো নেন। তখন ঘরে কেউ धिक्ल ना।
তার মানে কী দাঁড়াল?
দুইয়ে দুইয়ে যোগ করলে চারই হয় ম্যাডাম। ধরে নেওয়া যেতে পারে যে ওই চল্লিশ মিনিটের মধ্যে খুন এবং গুম দুটোই হয়েছিল।
উঃ মাগো! কী সাংঘাতিক লোক।