মানুষের ভিতরে একটা পশু তো থাকেই। আর সেই পশুটাকে ধরার জন্যই আপনার সাহায্য প্রয়োজন।
পশুটা কি ওই ভজন?
তাই মনে হচ্ছে।
আপনাদের হাতে প্ৰমাণ নেই?
একেবারে প্রমাণ ছাড়া তো ভজনকে ধরা হয়নি।
প্ৰমাণই যদি থাকে তা হলে ওকে শাস্তি দিলেই তো হয়। আমার সাহায্যে কী দরকার?
প্ৰমাণ আছে, আবার নেইও।
সে আবার কী?
ভজনবাবুর গ্যারেজটা একটু নির্জন জায়গায়। প্ৰায় এক বিঘা জমি নিয়ে গ্যারেজ। অনেক সফিস্টিকেটেড যন্ত্রপাতি আছে। ডিজাইনার গাড়ি তৈরি করার জন্য ভজনবাবু কিছু অর্ডার পাচ্ছিলেন। দেশি-বিদেশি গাড়ির মোটর নিয়েও বোধহয় এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন। গ্যারেজটা আরও বড় করার জন্য পাশের মাঠটা কেনারাও চেষ্টা করছিলেন।
আমি এতসব জানি না। তবে পুজন বলেছিল ওর গ্যারেজ বড় হচ্ছে।
হ্যাঁ, বেশ বড় গ্যারেজ।
ওর কি অনেক টাকা?
হ্যাঁ। আপনার সঙ্গে ওরা ছাড়াছাড়ি তো দেড় বছরের?
এক বছর আট মাস।
গত দেড় বছরের মধ্যেই ভজনবাবু অনেক টাকা করেছেন। আর বোধহয় সেই কারণেই লোকটার পিছনে ওখানকার ক্লাব এবং মস্তানেরা লেগে গিয়েছিল। তারা টাকা চাইত, উনি দিতেন না।
এসব আমার জানা ছিল না।
আপনার জানার কথা নয়। তবে মাস ছয়েক আগে ভজনববুর ওপর হামলা হয় এবং উনি কয়েকটা গুন্ডা ছেলের হাতে মার খান!
হ্যাঁ, এরকম একটা কী যেন পূজনের কাছে শুনেছিলাম। বেশি মাথা ঘামাইনি।
ভজনবাবু লোকটি খুব বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাবসাদার নন। তা যদি হতেন তা হলে গুন্ডা মস্তানদের কিছু চান্দা দিয়ে হাতে রাখতে পারতেন। সে পথে না গিয়ে উনি কনফ্রন্টেশনের পন্থা নিয়েছিলেন। এমনিতে নিরীহ হলেও বেশ একগুয়ে আর জেদি। তাই না?
তা তো বটেই।
যাইহোক, এই ঘটনার পর গ্যারেজটা প্রায় উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়। ভজনবাবু আপসরিফা করতে রাজি হননি, টাকাও দেননি। উনি পুলিশকেও হাত করার চেষ্টা করেননি বলে প্রোটেকশনও পাননি।
এতসব জেনে আমার কী হবে?
লোকটার চারিত্রিক আউটলাইনটা আপনার সম্পূৰ্ণ জানা নেই বলেই বলছি।
তা হলে বলুন।
লোকটা বিপদের ঝুকি নিয়েই ওখানে গ্যারেজ চালাতে লাগলেন। ভজনবাবু একটা রিভলভার কিনেছিলেন। লাইসেন্সও ছিল। আর ওঁর গ্যারেজের কর্মচারীরা–কী জানি কেন–ওঁর খুবই অনুগত। তারাও ওঁকে প্রোটেকশন দিতে লাগল। ফলে গ্যারেজের সঙ্গে লোকালিটির একটা শক্ৰতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। গ্যারাজে। বার কয়েক বোমা পড়েছে, আগুন দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, জনসাধারণকে খেপিয়ে তুলে অবরোধের চেষ্টাও হয়েছে, তার চেয়ে বড় কথা পলিটিক্যাল প্ৰেশারও ওর বিরুদ্ধে ছিল। জনসাধারণের অভিযোগ ওই গ্যারেজে চোলাই তৈরি হয়, সমাজবিরোধী কাজ হয় ইত্যাদি।
সত্যিই হত নাকি?
বোধহয় না।
তা হলে আপনি কী বলতে চাইছেন?
বলতে চাইছি ভজনবাবুর শত্রুর অভাব নেই।
সে তো হতেই পারে।
আর শক্ৰতা ছিল বলেই ভজনবাবু ইদানীং গ্যারেজেই থাকা শুরু করেছিলেন। গ্যারেজের ভিতরদিকে ওঁর যে অফিসঘরটা আছে সেখানে চৌকি পেতে বিছানা করে নিয়েছিলেন। রান্নাবান্নাও নিজেই করে নিতেন। ওঁর জবানবন্দি অনুসারে গ্যারেজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওঁর গ্যারেজে থাকাটা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। লোকটাকে সাহসী বলতে হয়। কী বলেন?
আমি কী বলব বলুন। আপনার মনে হলে হতে পারে।
গ্যারেজে দু’জন কর্মচারী রাতে পাহারা দিত। আর ভজনবাবুতো সপ্তাহে চার-পাঁচ দিনই থাকতেন। যেদিন ঘটনােটা ঘটে সেদিনও ভজনবাবু গ্যারেজে ছিলেন।
গার্ডরাও ছিল তো!
দুঃখের বিষয় সেদিন দিবাকর নামে যে কৰ্মচারীটির গার্ড দেওয়ার কথা ছিল তার মায়ের অসুখ বলে সে আসেনি। ছিল রতন নামে দ্বিতীয় গার্ডটি।
মেয়েটির সঙ্গে কি ভজনের আলাপ ছিল?
ছিল। মেয়েটা প্রায়ই নাকি গ্যারেজে হানা দিত। সে ভজনবাবুকে গাড়ি চালানো শিখিয়ে দিতে বলত। এবং ভজনবাবু মাঝেমাঝে রিঙ্কুকে গাড়ি চালানো শেখাতেনও। শোনা যায়, রিঙ্কু ভাল গাড়ি চালাতে শিখে গিয়েছিল।
বাঃ, তা হলে আর সন্দেহ কী?
সন্দেহের অবকাশ বিশেষ নেই। কারণ ঘটনার দিন সন্ধেবেলা গ্যারেজের উলটোদিকের বাড়ির সনাতন মল্লিক দেখেছেন যে, রিঙ্কুর সাইকেলটা গ্যারেজের ফটকের কাছে দাঁড় করানো।
তা হলে তো মিলেই যাচ্ছে।
যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনাটা সন্ধেবেলা ঘটেনি। ঘটেছে একটু বেশি রাতে। অন্তত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তাই বলে।
আপনি বড্ড ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলেন শবরবাবু।
হ্যাঁ, ওইটে আমার দোষ। তবে আসল ঘটনা বের করার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডটা ভাল করে। বুঝিয়ে বলা দরকার মিসেস আচার্য।
আমাকে প্লিজ, মিসেস আচাৰ্য বলবেন না। আমার নাম বিভাবরী ভট্টাচাৰ্য।
জানি। ডিভোর্স করেননি বলে মিসেস আচাৰ্য বলে ফেলেছিলাম।
কোর্টের ডিভোর্স না হলেই কী? আমি মনে মনে তো কবেই। ওকে পরিত্যাগ করেছি।
তা বটে। ডিভোর্সের প্ল্যান আছে কি?
এসব শুনে মনে হচ্ছে, ডিভোর্সটা করে রাখলেই ভাল হত।
তা ঠিক। তবে ডিভোর্স হয়ে থাকলেও আমরা আপনাকে সাক্ষী মানতাম।
উঃ, কী যে মুশকিল!
সরি ম্যাডাম।
আপনি আমার প্রবলেমটা বুঝতে পারছেন তো শবরবাবু?
পারছি বিভাবেরী দেবী। কিন্তু প্রবলেমটা আমাদের সকলেরই। আপনি এক্সপোজারকে ভয় পাচ্ছেন, কোটিকাছারিতে যেতে অপছন্দ করছেন, কিন্তু আমাদের যে উপায় নেই।
ঠিক আছে বলুন।
রিকুর সাইকেলটা খুব দামি এবং রেসিং মডেলের। ওরকম দামি সাইকেল ওই অঞ্চলে কারও নেই। সুতরাং ওই লাল রঙের সাইকেলটা সহজেই চোখে পড়ত। বুঝতে পারছেন?