না!
খুনটা হয়েছে সাত দিন আগে। এর মধ্যে কেউ আসেনি?
পূজন মাঝে মাঝে আসে, কিন্তু ঘনঘন নয়। গত সাত দিনে কেউ আসেনি।
এবার একটা সেনসিটিভ প্রশ্ন।
বলুন।
লজ্জা পাবেন না তো!
লজ্জা পেলে জবাব দেব না।
ভেরি গুড।
প্রশ্নটা কী?
ভজনবাবু যে সেক্সচুয়াল ব্যাপারে স্যাডিস্ট গোছের মানুষ তা আপনার কথা থেকেই স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, যার সেক্সচুয়াল আর্জ এত বেশি সে তো নিশ্চয়ই প্রস কোয়ার্টারে যায়।
এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
সমস্যা হল এরকম মানুষেরা নিজেদের সামলে সংযত রাখতে পারে না।
প্রস কোয়ার্টারে গেলে হয়তো যায়। আমি কী করে জানব বলুন।
কোনও হিন্ট পাননি?
ন।
সমস্যা হল, পুলিশ এই অ্যাঙ্গেলটা ভাল করে দেখেছে, কিন্তু ওঁর প্রস কোয়ার্টারে যাওয়ার কোনও প্ৰমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
প্রস কোয়ার্টারে গেলে ভজনবাবুর বিরুদ্ধে কেসটা আরও শক্ত হত। উনি যে স্যাডিস্ট তা প্ৰমাণ করার সুযোগ থাকত।
আমি তো বলেইছি লোকটাকে ভাল করে চেনার কোনও সুযোগ আমার হয়নি। যে মেয়েটা খুন হয় সে কি প্রস?
না।
তা হলে এ প্রসঙ্গ কেন?
মেয়েটিকে খুন করার আগে ব্রুটালি রেপ করা হয়।
ওঃ।
ইজ ইট জাস্ট লাইক ভজনবাবু?
কী করে বলব বলুন। আমাকে তো খুন করেনি।
মারধর বা হাত মুচড়ে দেওয়া, গালাগাল করা, এসব?
আমাকে প্লিজ, এসব প্রশ্ন করবেন না। আমার পক্ষে ডিটেলস বলা সম্ভব নয়। রুচিতে বাধে।
সরি। কিন্তু এটা তো জানেন যে, এটা মার্ডার কেস।
হ্যাঁ। কিন্তু আমার পক্ষে এর বেশি বলা সম্ভব নয়।
কিন্তু কোর্টে যে আপনাকে এসব অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা হবে।
কোর্টে! কোর্টে কেন আমি যাব?
আপনাকে পুলিশ সাক্ষী হিসেবে ডাকবে।
সে আমি পারব না।
ভয় পাচ্ছেন?
ভয় নয়। এসব বিচ্ছিরি ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমি কিন্তু কিছু বলতে পারব না।
সে আপনার ইচ্ছে। কিন্তু আপনার সাক্ষ্যের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
কী নির্ভর করছে?
মোটিভ অফ মার্ডার।
আমার ওপর নির্ভর করবে কেন? আমার সঙ্গে লোকটার তো কোনও সম্পর্কই নেই।
সম্পর্ক যে নেই তার কারণটাই তো আমাদের দরকার। ভজনবাবু যে একজন স্যাডিস্ট সেটা প্রমাণ করতে পারলে পুলিশের কাজ সহজ হয়ে যায়।
প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দিন। খুন যদি ও করে থাকে তো সেটা পুলিশ প্রমাণ করুক। আমাকে নিয়ে টানাটানি কেন?
পুলিশ তার কাজ করবে। পুলিশকে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য। মেয়েটা কে?
ভাল প্রশ্ন। এ প্রশ্ন অনেক আগেই আপনি করতে পারতেন।
আপনি আমাকে এত প্রশ্ন করছেন যে, আমি প্রশ্ন করার সুযোগই পাচ্ছি না।
সরি ম্যাডাম। এসব ঘটনা ঘটলে লোককে বিরক্ত না করে উপায় থাকে না কিনা।
বুঝেছি। এবার বলুন মেয়েটা কে?
একজন টিনএজার। ষোলো-সতেরোর বেশি বয়স নয়। খুব চঞ্চল আর একটু ডানপিটে গোছের মেয়ে। ভজনবাবুর গ্যারেজের পর একটা খেলার মাঠ। মেয়েটার বাড়ি ওই মাঠটা পেরিয়ে। মেয়েটার নাম রিঙ্কু। খুব মড মেয়ে। তার বাবার চিংড়ি মাছের ব্যাবসা আছে। মোটামুটি পয়সাওলা লোক। মেয়েটা একটা সাইকেলে চড়ে পাড়ায় চক্কর দিয়ে বেড়াত। পোশাকও পরত। খুব উগ্র। কখনও শর্টস আর কামিজ। কখনও জিনস আর টি-শার্ট।
কেমন মেয়ে?
যেটুকু জানা যায়, বখাটে টাইপের মেয়ে। বাবা ডিভোর্সি। মা আবার কাকে বিয়ে করে বাইরে কোথাও থাকে। মেয়েটা বাবার কাছে থাকত।
একমাত্র মেয়ে?
হ্যাঁ। বোধহয় খুব আদরেরও দেখতেও খারাপ ছিল না। সাক্ষ্যপ্রমাণ বলছে, মেয়েটার বেশ অ্যাট্রাকটিভ চেহারা ছিল এবং যথারীতি পাড়া-বেপাড়ার ছেলেরা তার পিছনে ঘুরঘুর করত। রিঙ্কুর বদনাম ছিল, সে ছেলেদের সঙ্গে ফ্রিলি মেলামেশা করে। বাবার কোনও শাসন ছিল না। ভদ্রলোক নিজের কাজ নিয়ে হিমশিম খেতেন, মেয়ের দিকে নজর দেওয়ার সময় ছিল না।
বাড়িতে আর কেউ নেই?
রিঙ্কুর ঠাকুমা আর দাদু ও বাড়িতে থাকেন। তঁদের থাকা নিয়েই রিঙ্কুর মা আর বাবার মধ্যে বনিবনার অভাব দেখা দেয়। তারপর অশান্তি বেড়ে বেড়ে শেষ অবধি ডিভোর্স।
রিঙ্কুর বাবা আর বিয়ে করেননি?
না। তিনিও আপনার মতোই। বিয়ের অভিজ্ঞতা তিক্ত হয়েছিল বলে আর বিয়ে করেননি। তা বলে তার বিয়ের বয়স যায়নি। হি ইজ ওনলি ফর্টিফোর।
এবার আমার করণীয় কী বলুন। সাক্ষী দিতে হবে শুনে আমার ভীষণ ভয় করছে।
ভয় কীসের?
সাক্ষীটাক্ষি দিলে তো পাবলিসিটি হবে। পুরনো কথা উঠবে।
তা উঠবে।
সেইটেই ভয় পাচ্ছি। এ ঘটনার সঙ্গে তো আমার কোনও সম্পর্কই নেই। তবু কেন যে আপনারা আমাকে ইনভলভড করতে চাইছেন।
উপায় নেই বলে।
লোকটা কি এখন জেলে?
পুলিশ কাস্টডিতে। আপনি চাইলে ওর সঙ্গে দেখা করতে পারেন!
দেখা করব? সে কী কথা! আমি ওর সঙ্গে দেখা করব কেন?
লোকটা আপনার কাছে হয়তো কিছু বলতে পারে।
প্লিজ, আমাকে এসব কাজে জড়াবেন না। আমি ওরা ছায়াও মাড়াতে চাই না।
ম্যাডাম, কাজটা অপ্রীতিকর হলেও আমার কিছু কৌতূহল আছে।
আমি পারব না। মাপ করবেন।
আগে একটু শুনুন। দিন সাতেক আগে ঘটনাটা ঘটে। ভজনবাবুর মোটর গ্যারেজের পাশের মাঠে মেয়েটির ডেডবডি পাওয়া যায় সকালবেলা। মাঠটায় কিছু আগাছার জঙ্গল আছে, তার মধ্যে। মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় সারা রাত লোকজন এবং পুলিশও তাকে অনেক খুঁজেছিল। পায়নি।
শুনতেই আমার খারাপ লাগছে। ডেডবডি কথাটা শুনেই আমার মনটা কেমন করে উঠল। আহা, ওইটুকু একটা মেয়েকে মারে কেউ?