বলুন স্যার।
মার্ডারের আগের রাতে তুমি শুনেছিলে ভজনবাবু একজন মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন।
হ্যাঁ স্যার।
তুমি কি বলতে পারো দু’জনের মধ্যে কে কাকে আপনি করে বা তুমি করে বলছিল?
স্যার, পুলিশকে তো বলেছি।
ব্যাপারটা খুব ইস্পার্ট্যান্ট। ভাল করে ভেবে বলে।
এই রে! এত খুনখারাপি মারদাঙ্গায় মাথাটাই কেমন গুলিয়ে গেছে স্যার।
সেই জন্যেই বলছি ভাল করে ভেবে বলতে। অনেক সময়ে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর স্মৃতিটা পরিষ্কার হয়। যখন তুমি জবানবন্দি দিয়েছিলে তখন তুমি ঘাবড়ে যাওয়া অবস্থায় ছিলো।
ঠিক স্যার।
এবার শান্ত মাথায় ভেবে বলো।
দু’মিনিট সময় দেবেন। স্যার? চোখ বুজে একটু ভাবব।
দুই পাঁচ যত মিনিট খুশি সময় নাও। তবু আসল কথাটা বলো।
রতন দু’মিনিটের বেশি ভাবল না। চোখ খুলে এক গাল হেসে বলল, মনে পড়েছে স্যার। মেয়েটা বাবুকে তুমি করে বলছিল, বাবু আপনি করে বলছিল।
আরও ভেবে বলে।
না স্যার মনে পড়ে গেছে।
তুমি কিন্তু পুলিশের কাছে উলটোটাই বলেছিলো।
তা হতেই পারে স্যার। তখন যা অবস্থা। বাবুর ফাঁসি হলে তো চাকরিটাও গেল স্যার। বাবু লোকটা খারাপ ছিলেন না।
ফাঁসি নাও হতে পারে।
একটু উজ্জ্বল হয়ে রতন বলল, তবে কি বাবু ছাড়া পাবেন?
সেটা তোমার ওপরেও খানিকটা নির্ভর করছে।
কী বলতে হবে বলুন।
সেই রাতে তুমি গ্যারেজের কাছাকাছি কোনও গাড়ি বা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলে?
হ্যাঁ স্যার। সামনে নয় ঠিক, ওই পশ্চিম দিকে একটা অ্যাম্বাসাডার দাঁড় করানো ছিল। ডার্ক কালার।
আর কিছু?
না স্যার। গ্যারেজে এসেছে কিনা ভেবে ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, কী হে, গ্যারেজে এসেছ নাকি? লোকটা বলল, না, সওয়ারি আছে।
প্রাইভেট গাড়ি?
এ মার্কা গাড়ি স্যার, ওরা ভাড়া খাটে।
গাড়িটা কখন দেখলে?
ডিউটিতে আসার সময়। তারপর যখন বাবুর জন্য কোক নিয়ে এলাম তখন গাড়িটা চলে গেছে।
বাঃ, ভেরি গুড।
আর কিছু বলতে হবে স্যার?
তুমি কি জানো তোমার বাবুকে বারাসতে গ্যারেজ খুলতে কে সাহায্য করেছে?
সেটা ভাল জানি না। তবে শুনেছি বাবুর এক বন্ধু।
তার নাম জানো?
সুবীর টুবির হবে। অত মেমরি নেই স্যার।
সুজিত হতে পারে কি?
রাখাল জানে। ও পুরনো লোক।
রিঙ্কুকে কখনও মাতাল অবস্থায় দেখেছ?
না তো স্যার।
কখনও দেখোনি? ভাল করে ভেবে বলো।
না স্যার। রিঙ্কুর বন্ধুরা হয়তো খেত।
তারা কারা?
অনেক ছিল। ইদানীং
বলেই থেমে গেল। রতন।
থামলে কেন?
বলতে ভয় পচ্ছি স্যার। কথা ফাস হলে আমার জান চলে যাবে।
ফাস হবে না। বলে।
ইদানীং রিঙ্কু হাবু জগুদের সঙ্গে ঘুরত। ওরা খুব খচ্চর।
ওদের সঙ্গে মিশত কেন?
বলতে পারব না স্যার। তবে রিঙ্কু একদিন গ্যারেজে গাড়ির বনেটে বসে কুল খেতে খেতে বলেছিল, তোমাদের গ্যারেজে আর কেউ কখনও হামলা করবে না দেখো। আমি হাবু আর জগুকে হাত করেছি।
তুমি কী বললে?
আমি বললাম, খবরদার ওদের খপ্পরে যেয়ো না! তোমাকে শেষ করে দেবে।
রিঙ্কু কী বলল?
হাসল, পাত্তা দিল না। রিঙ্কু স্যার, কারও কথা শুনত না। বাবুর সঙ্গে বিয়েটা হলে বেঁচে যেত।
বিয়ে! বিয়ের কথা উঠেছিল নাকি?
না স্যার। আমার মনে হত, দু’জনকে যেন মানায়।
কেন মনে হত?
কী জানি কেন মনে হত।
রিঙ্কু কি ভজনবাবুকে ভালবাসত বলে তোমার মনে হয়?
হ্যাঁ স্যার, খুব মনে হয়। রিঙ্কু মাঝে মাঝে বাবুর জন্য খাবার নিয়ে আসত, বই আনত, আর বাবুর কাছে এলেই খুব হাসিখুশি থাকত।
আর ভজনবাবু?
বাবু তো স্যার, সবসময়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সবসময়েই নানা চিন্তা। বাবু রিঙ্কুকে মাঝে মাঝে বকুনিও দিত।
কীরকম?
বলত, আড্ডা মেরে সময় নষ্ট করছ, কেন, পড়াশুনো করোগে যাও। কিংবা বলত, এত উড়নচণ্ডী হলে জীবনে কষ্ট পাবে। এইসব আর কী।
ভজনবাবুর কাছে আর কোনও মেয়ে আসত কি?
গাড়ি সারাতে অনেকে আসত।
তারা ছাড়া?
না। স্যার, বাবুর মেয়েছেলের দোষ তেমন ছিল না।
তোমার বাবুকি ঘন ঘন ট্যুরে যেত?
মাঝে মাঝে যেত স্যার।
ঠিক আছে।
কত বছর বয়সে আপনার বিয়ে হয় শ্যামলীদেবী?
কেন বলুন তো! এসবও কি তদন্তে দরকার হচ্ছে নাকি?
কে জানে কখন কোনটার দরকার পড়ে। বলতে না চাইলে অবশ্য—
আমার বিয়ে হয়। ষোলো বছর বয়সে।
এত কম বয়সে? দেখতে সুন্দর ছিলাম বলে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি খুব পছন্দ করে ফেলেছিলেন। পাছে হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়ে গেল। আর ওইটেই আমার জীবনের সর্বনাশের মূল।
সর্বনাশ কেন?
ষোলোতে বিয়ে, সতেরোয় মেয়ের মা, এই সুন্দর বয়সটা টেরই পেলাম না। কী বিচ্ছিরি ব্যাপার বলুন তো! সাধে কি এদের ওপর এত রাগ আমার!
সুজিতবাবুর সঙ্গে আপনার চেনা কত দিনের?
প্ৰায় জন্ম থেকে। ও আমার চেয়ে এক বছরের বড়। আমরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম।
আপনি কবে ওর প্ৰেমে পড়েন?
এসব জেনে কী হবে আপনার?
প্লীজ
আপনার কথাবার্তা পুলিশের মতো নয়, আর আপনি বেশ বুদ্ধিমান বলে মনে হয়। সেজন্য বোধহয় আপনি একজন বিপজ্জনক লোক। তবু আমি আপনাকে খুব একটা অপছন্দ করছি না। তাই বলছি, আমাদের শৈশব প্ৰেম।
আপনি সুজিতকে কখনও প্রেমের কথা জানিয়েছেন?
জানানোর কী? আমরা দু’জনে দু’জনকে ভালবেসেই বড় হয়েছি।
বিয়ের সময় কী রি-অ্যাকশন হল সুজিতবাবুর?
কী আর হবে? ও তো তখন সতেরো বছরের বাচ্চা ছেলে। সবে কলেজে ঢুকেছে। ওর পক্ষে কি আমাকে বিয়ে করা সম্ভব ছিল?
আপনি?
আমি! আমি কেঁদে বিছানা ভাসিয়েছি। কিন্তু রুখে দাড়ানোর মতো মন তখনও তৈরি হয়নি।