তা হলে আর ভাবনা কী? কেস তো সোজা।
তা ঠিক, কিন্তু লোকটার কনফেশন বের করা গেল না।
তার কি কোনও প্রয়োজন আছে?
শবর একটু আনমনা চোখে ঘোষালের দিকে চেয়ে বলল, আচ্ছা, মানুষ কতটা পেনি সহ্য করতে পারে বলুন তো! আপনি তো এ বিষয়ে স্টাডি করেছেন।
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
কারণ আছে।
বিভিন্ন প্ৰজাতির মানুষের বিভিন্ন সহ্যশক্তি। চিনাদের একটু বেশি সহ্যশক্তি আছে। ট্রাইবালদের মধ্যেও ফিজিক্যাল পেন সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি। কেন বলুন তো!
এই মার্ডার কেসের সাসপেক্ট ভজন আচার্য একজন ব্ৰাহ্মণ সন্তান। ব্ৰাহ্মণরা নাকি খুব বেশি ব্যথা সইতে পারে না! মহাভারতে কী একটা গল্প আছে না?
হ্যাঁ, সেই বজকীটের দংশনের গল্প তো! ব্ৰাহ্মণরা বোধহয় পেনি সহ্য করার খুব বেশি সক্ষমতা রাখে না।
এ লোকটা তা হলে একসেপশন।
তার মানে?
দিস ম্যান ওয়াজ ব্রুটালি মলড বাই দি পাবলিক দ্যাট ডে। কিন্তু হি কেপ্ট হিজ কুল কম্পোজার। ইনজুরি ছিল মারাত্মক, তবু কোনওরকম এক্সপ্রেশন ছিল না। হাবু বলে একটা গুল্ডা আছে ওখানে। সে আর লোকাল মস্তানেরাও ওকে বার দুই মেরেছে। একবার প্ৰচণ্ডভাবে, রড পাঞ্চ সবই ব্যবহার করা হয়। হাবু আমাকে বলেছে, ভজন অতি মার খেয়েও গ্যারাজের মুখে দাঁড়িয়ে তাদের আটকেছে। যেদিন ডেডবডি পাওয়া গেল সেদিনও হাটুরে মার খায় লোকটা। হাসপাতালে দিতে হয়েছিল।
হিরো নাকি?
না, হিরো বলা যায় না। তবে অদ্ভুত।
আর পুলিশের থার্ড ডিগ্রি?
হ্যাঁ, সেই কথাতেই আসছিলাম। খুনের আগের রাতে ওর গ্যারেজের ঘরে একটা মেয়ে ছিল। স্ট্রং সাসপিশন, মেয়েটা রিঙ্কু, কিন্তু ভজন আচাৰ্ষিকে দিয়ে সেটা বলানো যায়নি। গত কিছুদিনের মধ্যে লোকটাকে বার কয়েক ইনহিউম্যান টর্চার সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু লোকটার যেন ফিজিক্যাল সেন্স বলে কিছু নেই। এরকম কি হতে পারে?
কারও কারও সহ্যের ক্ষমতা খুব বেশি থাকতে পারে। কিন্তু তা দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইছেন?
বুঝতে পারছি না।
যতদূর শুনেছিলাম, আপনাদের হাতে প্ৰমাণ সব এসে গেছে।
হ্যাঁ। লোকটা রেহাই পাবে না। আপনি বোধহয় জানেন না, লোকটা আবার স্যাডিস্ট। অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়।
তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং।
ওর স্ত্রী বলেন, লোকটার সেক্স খুব উগ্র এবং ভায়োলেন্ট, শি লেফট হিম ফর দ্যাট।
মাই গড!
রিঙ্কুকে খুন করার পিছনে এই স্যাডিজম ছাড়া আর কোনও মোটিভ পাচ্ছি না।
কেন, রেপ!
হ্যাঁ, রেপ। কিন্তু লোকটার অত সেক্স সত্ত্বেও সে প্রস কোয়ার্টারে যেত না কেন বলুন তো!
মে বি হি হ্যাড স্টেডি গার্ল ফ্রেন্ড। হাফ গোরস্তও তো আছে। তাদের তো প্রস কোয়াটারে পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া রেড লাইট এরিয়া তো বিশাল এবং সংখ্যাও কম নয়। সব কি খুঁজে দেখা সম্ভব?
তা ঠিক, সম্ভাব্য জায়গাগুলিতেই খোঁজ করা হয়েছে।
আপনি এত ব্ৰড অ্যাঙ্গেলে ভাবছেন কেন?
শবর মাথা নেড়ে বলল, ভাববার কোনও মানে হয় না।
এবার ঘোষালও একটু হাসল, মিস্টার দাশগুপ্ত, আমি আপনাকে চিনি। আপনার কোথাও একটা খিঁচ থেকে যাচ্ছে।
না, খিঁচ নয়। একটা কথা বলবেন?
কী কথা?
ভজন রেপ করে রিঙ্কুকে মার্ডার করল। কিন্তু তারপর সে স্পটে রয়ে গেল কেন? ও তো রাতেই কলকাতায় চলে আসতে পারত।
ইজি। কলকাতায় পালিয়ে এলে ওর ওপর সন্দেহ আরও বাড়ত। হয়তো ভেবেছিল, ভালমানুষটি সেজে থাকলে লোকে সন্দেহ করবে না।
হ্যাঁ, সেটা হতে পারে। সেটাই সম্ভব।
আপনার কোনও জায়গায় গ্যাপ আছে বলে মনে হচ্ছে কি?
শবর একটু চিন্তিতভাবে বলল, না, ঠিক তা নয়। গ্যাপ কিছু নেই। কিন্তু কেসটা বড্ড সোজা আর সরল।
তা তো হতেই পারে। আমাদের দেশের ক্রিমিন্যালরা তো আর মাথা বেশি খাটায় না। তাদের বেশির ভাগ কাজই মোটা দাগের। আপনি অত ভাবছেন কেন?
শবর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ভাবছি। একটা কথা।
কী বলুন তো!
ভজন আচাৰ্ষি রোজ সকালে পাড়ার কুকুরদের ডেকে পাউরুটি খাওয়াত। কলকাতাতেও, বারাসতেও।
সো হোয়াট? হি লাভড ডগাস। এ তো হতেই পারে।
কলকাতায় একবার একটা কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে ঠ্যাং ভাঙে। তাকে তুলে নিয়ে ট্যাক্সি করে ভেটারনারি হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ভাল করে এনেছিলেন ভজনবাবু। উনি এসপিসিএ-র মেম্বার এবং অ্যানিমাল লাভার।
ঘোষাল একটু থমকাল, তারপর বলল, তা হলে তো ভাবতে হচ্ছে। অ্যানিমাল লাভাররা হোমিসাইড করতে পারবে না তা নয়। সপ্লিট পারসোনালিটি হতে পারে। তবে ইটস এ পয়েন্ট টু পান্ডার। কেসটা ডিটেলসে বলবেন?
শবর বলল।
রিঙ্কুর ছবিটা ভাল করে দেখে ঘোষাল বলল, হাউ ওল্ড ওয়াজ সি? সিক্সটিন?
হ্যাঁ।
ও কি ভজনবাবুকে বিয়ে করতে চেয়েছিল?
হ্যাঁ।
তা হলে একটু ভাবতে হচ্ছে। পুলিশ কি এই অ্যাঙ্গেলটা দেখেনি?
লোকাল পুলিশ এত দেখতে চাইছে না। তাদের কাছে এটা একটা ওপেন অ্যান্ড শাট কেস। ভজন আচার্যি কনভিকটেড হলে তারা বাহবা পাবে। একটা সলভড মার্ডার কেসকে কে কাঁচিয়ে দিতে চায় বলুন।
ঘোষাল একটু হেসে বলল, তা তো বটেই। আপনি কী করতে চান?
বুঝতে পারছি না।
রিঙ্কুর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছেন?
হ্যাঁ।
স্টমাকে কিছু পাওয়া গেছে?
কী পাওয়া যাবে?
ধরুন অ্যালকোহল।
হ্যাঁ।
বয়ফ্রেন্ডদের ক্রস করেছেন?
দু’জনকে। দু’জনেরই ফুলপ্রুফ অ্যালিবাই আছে। কেউই সেই রাতে বারাসাতে ছিল না। একজন শিলিগুড়ি গিয়েছিল দু’দিন আগে। অন্য জন আগের দিন মামাবাড়ি কোন্নগর।