সেটা প্রমাণসাপেক্ষ।
আচ্ছা, আচ্ছা, লেট হিম কাম।
সোনালি একটা শ্বাস ফেলে বলল, আমি বরং চলে যাই। আমাকে দেখলে হয়তো খুশি হবে না।
হু নোজ? একটু থেকেই যান।
হয়তো ভাববে আমি রি-এন্ট্রির চেষ্টা করছি।
গোপীদা কি মিনমাইন্ডেড সোনালিদি?
লোকটাকে আমি ভাল চিনি না।
কে কাকে চেনে? চিনতে সময় লাগে।
সোনালি নিরস্ত হল। তারপর কে জানে কেন, রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকল। হয়তো গোপীনাথ আসার মুহূর্তে সামনে থাকতে চায় না।
বাইরে মোটামুটি অন্ধকার হয়ে আসছে। গোপীনাথ একটু দেরি করছে আসতে। কৌতূহলী সুব্রত জানালার কাছে গিয়ে নীচে তাকাল। হ্যাঁ, পুলিশ এসেছে। কয়েকজন পুলিশ এবং বেশ কিছু কৌতূহলী লোক।
ডোরবেল বাজল। সুব্রত গিয়ে দরজা খুলতেই গোপীনাথের হাসিমুখ দেখা গেল।
কী রে?
আপনার জন্য আমরা ভেবে সারা হচ্ছি আর আপনি দিব্যি হাসিহাসি মুখ করে ঘরে ঢুকছেন?
তবে কি কাদব রে? তবে আমার বোধহয় শোকার্ত মুখ নিয়েই থাকা উচিত। কিন্তু কী হচ্ছে জানিস?
কী হচ্ছে?
আই অ্যাম এনজয়িং দা লাইফ থরোলি। যত ঘটনা ঘটছে ততই ভাল লাগছে। বুঝলি রে পাগলা মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমি এত ভাল কোনওদিন থাকিনি।
বটে!
একজ্যাক্টলি। ভাবছি পাগল হয়ে গেলাম নাকি!
সুব্রত মাথা নেড়ে বলল, পাগলামি হলে টের পেতাম।
এখন কী করলাম জানিস?
কী করলেন?
নীচে গিয়ে পাঁচজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দিব্যি ডেডবডিটা দেখলাম। পুলিশ অফিসারের সঙ্গে একটু ঠাট্টা-ইয়ারকিও করলাম। একটুও ঘাবড়ে যাইনি। অথচ লোকটা একটু আগে আমার হাতেই
ফের গোপীদা?
যাকগে। এনি ওয়ে আই অ্যাম নাউ এ ভেরি কনফিডেন্ট ম্যান। মনে হচ্ছে আমার আরও এক জোড়া চোখ, আরও এক জোড়া কান এবং মগজে আরও কিছু ঘিলু কেউ সাপ্লাই দিয়েছে। দাঁড়া, আগে পোশাকটা পালটাই।
গোপীনাথ শিস দিতে দিতে শোয়ার ঘরে গিয়ে ঢুকল এবং কিছুক্ষণ পরে পরিষ্কার একটা সাদা লুঙ্গি আর গেঞ্জি চড়িয়ে বেরিয়ে এল। বলল, মুশকিল কী জানিস, মাঝে মাঝে বড্ড খিদে পায়।
খিদে।
হ্যাঁ। তোর ক্যাটারাররা দু’বেলা সেই মিল সার্ভ করে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জলখাবার তো দেয় না। ওটা আমাকে বানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু সবসময়ে সময় হয় না, খেয়ালও থাকে না। তখন খিদে চেপে জল খেয়ে সময়টা কাটিয়ে দিতে হয়। হ্যাঁ, তা তোর সেই কলিগটি কোথায়? বিদেয় করে দিয়েছিস?
হয়তো বিদেয় হতে চাইবে না।
বটে। কিন্তু তাকে তো আমার দরকার নেই।
কে জানে দরকার আছে কি না। আগে আলাপ তো হোক।
রান্নাঘর থেকে সোনালি বেরিয়ে এল। হাতে একটা ট্রে। তাতে কফির কাপ, টোস্ট ওমলেট এবং কাটা ফল বিভিন্ন প্লেটে সাজানো। কিছু কাজুবাদামও দেখা যাচ্ছিল আলাদা পিরিচে। গোপীনাথের সামনের টেবিলে রেখে যখন দাঁড়াল সামনে, তখন গোপীনাথ যেন ভূত দেখছে। মুখে কথা নেই।
কথা কিছুক্ষণ হারিয়েই গেল যেন সকলের মুখ থেকে।
৩০.
বেশ কিছুক্ষণ স্তম্ভিত থেকে গোপীনাথ খুব স্তিমিত গলায় বলল, তুমি! সোনালি মুখখানা যেন দাতে দাঁত চেপে কঠোর করে বলল, হ্যাঁ আসতে হল।
আমি তো সুব্রতকে বারণই করেছিলাম তোমাকে ডিস্টার্ব করতে। ও কথা শুনল না।
ও আমাকে এনেছে কে বলল?
সুব্রত আনেনি?
আমার ইচ্ছে না হলে কি আনতে পারত।
গোপীনাথ বোধহয় লজ্জা ও সংকোচে মাথা নিচু করে বলল, তুমি নিজের ইচ্ছেয় আমার সঙ্গে দেখা করবে ভাবিনি। আমার বড় অসময়ে এলে।
কীসের অসময়? তুমি কী করেছ?
গোপীনাথ অসহায়ভাবে মাথা নেড়ে বলল, কোনও দোষ করেছি বলে তো মনে হয় না। কিন্তু ঘটনার একটা ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে গেছি। আমার কাছাকাছি কেউ থাকুক আমি চাই না। হি অর শি উইল বি ইন মরটাল ডেনজার।
সে তো খানিকটা আঁচ পাচ্ছিই। এরকম সাংঘাতিক অবস্থায় তুমি থাকছ কী করে?
একটু ম্লান হেসে গোপীনাথ বলল, থাকছি আর সাধে? থাকতে হচ্ছে। যাব কোথায়?
অন্তত কিছুদিনের জন্য তো একটু লুকিয়ে থাকা যায়।
মাথা নেড়ে গোপীনাথ বলে, কোথায় লুকোব? যেখানেই যাব সেখানেই ঘটনা ঘটবে। যাদের কাছে যাব তারা বিপদে পড়বে। আমি এখন অচ্ছুৎ। আমার কাছে তোমাদের আসার দরকার নেই। দেখছ তো কী কাণ্ড হয়ে গেল আজ। সাব মেশিনগান দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল।
সোনালি একটু রেগে গিয়ে বলল, একটা কারণ তো থাকবে।
কারণ তো আছেই। আদ্রেঁর রিসার্চ নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া চলছে। সলিড ফুয়েল নিয়ে রিসার্চ। জিনিসটা যদি তৈরি করা যায় তা হলে খুব লাভজনক। তাই কম্পিটিটররা নেমে পড়েছে।
আদ্রেঁর দায় তোমার ঘাড়ে চাপছে কেন?
অনেকের ধারণা, কাজটা হয়তো আমি শেষ করতে পারি। সোনালি, তোমার পাসপোর্টটা কি ভ্যালিড আছে?
কেন থাকবে না? আছে।
ওঃ! বলে গোপীনাথ একটা কাতর শব্দ করল।
কী হল?
গোপীনাথ ফের ম্লান হেসে বলল, আমার তো কোনওকালেই কাণ্ডজ্ঞান বলে কিছু ছিল না। তোমার সঙ্গে যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে সেটা ভুলে গিয়ে এখনই একটা অন্যায্য আবদার করতে যাচ্ছিলাম।
সোনালি ভ্রু কুঁচকে চাপা গলায় বলল, কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
হ্যাঁ হ্যাঁ খাচ্ছি। আয় রে সুব্রত।
সুব্রত কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, আমারও পাসপোর্ট আছে। আমি একবার হংকং গিয়েছিলাম। কোনও কাজ থাকলে বলতে পারেন।
তুই রোম শহরটা চিনিস না, সোনালি চেনে।
রোমে কোনও কাজ আছে?
হ্যাঁ। কিন্তু বিপজ্জনক কাজ।