মনোজ একটু চুপ করে থেকে বলল, খুব বোরিং।
আপনি আজ রিল্যাক্স করুন স্যার।
আচমকা মনোজ জিজ্ঞেস করল, পুলিশের সঙ্গে তোমার জানাশুনো কেমন সুব্রত? নো এনি বিগ গাই?
না স্যার। আমার চেয়ে আপনি বেশি চেনেন। কিন্তু কেন?
মনোজ মাথা নেড়ে বলে, সেভাবে চিনি না। জাস্ট সোশ্যাল মেলামেশা একটু-আধটু। কারণটা হচ্ছে রোজমারিকে কেউ একজন সেদিন লাল গোলাপ পাঠিয়ে একটু রসিকতা করেছে। লাঞ্চ টেবিলেও লাল গোলাপ ছিল, যদিও ইনস্ট্রাকশন ছিল অন্যরকম। আর আই পোলক নামে একজন লোক নাকি কাণ্ডটা ঘটিয়েছে।
শুনেছি স্যার।
আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। কিন্তু রোজমারির টেনশন হচ্ছে। আমি লোকাল থানায় একটা রিপোর্ট করেছিলাম। ওরা ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ভাবছি একটা পুলিশ ইনভেস্টিগেশন হলে কেমন হয়।
সুব্রত সামান্য গম্ভীর হয়ে বলল, আপনি কথাটা বলার আগেই আমি নিজে সামান্য এনকোয়ারি করেছি। ফুলওলার বক্তব্য হল, লোকটা ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে টেলিফোনে এবং ইংরেজিতে। পেমেন্টের টাকাটা খামে পুরে আগের দিন ওদের লেটার বক্সে রেখে যায়।
তা হলে তো চিন্তার কথা সুব্রত।
সুব্রত মাথা নেড়ে বলে, চিন্তার কিছু নেই স্যার। বোধহয় ওঁর কোনও বন্ধু বা বান্ধবীই কাজটা করেছে। এখানে তো ওঁর অনেক বন্ধু।
মনোজ একটু অসহায় গলায় বলে, তা হলে তো ভালই। রোজি সাহসী মহিলা, সহজে ঘাবড়ায় না। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে একটু নার্ভাস।
পুলিশ যাতে ব্যাপারটা একটু এনকোয়ারি করে তা আমি দেখব স্যার।
দেখো। এবার সোনালিকে ডাকা যাক। লেট আস স্টার্ট আওয়ার মর্নিং সেশন।
সোনালি এল। রোজকার মতোই গম্ভীর মুখ, হাতে ফাইল। প্রথমে কয়েকটা চিঠিপত্রে সই করিয়ে নিল। তারপর বসল।
মনোজ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সোনালিকে বলল, সেই সুধাকর দত্ত লোকটার কী খবর মিস সোম?
কোনও খবর পাইনি তো?
লোকটা কি এখনও এদেশে আছে?
তাও জানি না।
লোকটা একটু অদ্ভুত টাইপের না?
সোনালি মৃদু স্বরে বলল, হ্যাঁ।
কী মনে হল আপনার সেদিন? আপনি তো ওকে কারখানা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন?
লোকটার সঙ্গে কিছু গ্যাজেটস ছিল। ওয়াকি টকি ধরনের।
আর কিছু?
একটু বেশি জানতে চাইছিল। শচি ইনকরপোরেটেড সম্পর্কে কৌতূহলটাই বেশি।
শচি? ওর আসল নাম সাক্কি৷ কী জানতে চায়?
আমরা সাক্কির সঙ্গে ব্যাবসা করি কি না।
সাক্কি আমাদের স্টেডি ক্লায়েন্ট।
সেটা আমি ওঁকে বলিনি। লোকটাকে আমার ভাল লাগেনি বলেই বলিনি।
বললেও ক্ষতি ছিল না। সাক্কি এক্সপ্লোসিভ নিয়ে কাজ করত। ইদানীং সলিড ফুয়েল নিয়ে করছে। গোপন করার কিছু নেই। কিন্তু লোকটা ইন্টারেস্টেড কেন তা বোঝা যাচ্ছে না। সুব্রত, কিছু আন্দাজ করতে পারো?
না স্যার।
আমিও পারছি না। ইন ফ্যাক্ট, আমরা যে অ্যালয়টা তৈরি করি তা বিজ্ঞানের অনেক সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে। শুনেছি, এই এলিমেন্টটা নানা কাজে লাগে। কতরকম কাজে লাগে তা আমিও জানি না।
সুব্রত একটু দ্বিধা করে হঠাৎ বলল, আদ্রেঁ ছিলেন সাক্কির ফুয়েল এক্সপার্ট।
মনোজ মাথা নেড়ে বলল, ওদের কে যে কী তা আমি জানিনা। রোজি জানে হয়তো। তবে হাই পাওয়ার ডেলিগেশন। আদ্রেঁর মৃত্যুটা খুব আকস্মিক। ভেরি ডিস্টার্বিং। ডেলিগেটদের লিডার রীতিমতো ক্ষুব্ধ কিন্তু আমাদের তো দোষ নেই। হার্ট অ্যাটাকের জন্য তো আমরা দায়ী হতে পারি না।
সুব্রত মৃদুস্বরে বলল, ওদের সন্দেহ, আদ্রেঁ পয়জনিং-এ মারা গেছে।
মনোজ অবাক হয়ে বলে পয়জনিং! কিন্তু সেরকম হলে ডাক্তাররা ডেথ সার্টিফিকেট দিত না।
পয়জনিং নানারকমের হয় স্যার। অনেক সময়ে ধরা যায় না। তাই ওঁরা ডেডবডি নিয়ে গেছেন দেশে গিয়ে অটোপসি করাবেন।
অটোপসি! মাই গড!
সুব্রত অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ওদের কথাবার্তা শুনে তাই মনে হল।
কিন্তু পয়জনিংই বা হবে কেন? কী কারণে?
বলা মুশকিল স্যার।
মনোজ খানিকক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইল। তারপর বলল, তুমি আমার দুশ্চিন্তাটা বাড়িয়ে দিলে সুব্রত।
আমাদের দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। ওদের ব্যাপার ওরা বুঝুক। আমাদের কী?
ফুড পয়জনিং মনে করছে কি?
না স্যার। ওদের সন্দেহ এটা খুন।
সর্বনাশ, এ তো ভয়ংকর কথা!
আপনি রিল্যাক্স করুন স্যার। আমার মনে হয় ওঁরা একটু বাড়াবাড়ি করছেন। এটা আসলে হয়তো নরম্যাল ডেথ।
মনোজ সোনালির দিকে চেয়ে বলল, কফি খাবেন?
না।
কাইন্ডলি আমার আর সুব্রতর জন্য দুটো কফির কথা বলে দিন।
সোনালি উঠে গিয়ে বেয়ারাকে কফির কথা বলে এল।
মনোজ খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে ঘটনাবলিকে সাজানোর চেষ্টা করল মনে মনে। পারল না। মানসিক শৃঙ্খলা বলতে তার এখন কিছু নেই।
কফি এল। দু’জনে নিঃশব্দে কফি শেষ করার পর মনোজ বলল, তা হলে আজ আমার কিছু করার নেই?
সুব্রত বলল, না স্যার।
আমি তা হলে ল্যাবরেটরিতে গিয়ে কিছু কাজ করি। অনেকদিন রিসার্চ ওয়ার্ক কিছু করা হয়নি।
সুব্রত গলা খাঁকারি দিয়ে খুব সতর্ক গলায় বলল, স্যার, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
কী কথা সুব্রত?
এখানে যে অ্যালয় তৈরি হয় সেটা কি খুব রেয়ার অ্যান্ড এক্সক্লসিভ?
মনোজের ভ্রু একটু কুঁচকে গেল। তারপর একটু ভেবে সে বলল, বিজ্ঞানে নিত্য নতুন জিনিস তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে বিস্তর বাই প্রোডাক্টও আছে। অনেক সময়ে দেখা যায়, কোনও একটা বাই প্রোডাক্ট মূল জিনিসটার চেয়েও ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে উঠেছে। আমরা যে অ্যালয়টা তৈরি করি তার প্রসেসটা কমপ্লিকেটেড। একজন জার্মান বৈজ্ঞানিক এটা প্রথম তৈরি করেন। তখনও এটার ইউটিলিটি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক সফিস্টিকেটেড ইন্ডাস্ট্রিতে এটার ডিম্যান্ড হয়েছে। এক্সকুসিভ বলা যাবে না, কারণ পৃথিবীতে এই অ্যালয় আরও কোথাও কোথাও তৈরি হয়। তবে বেশি নেই, একথা ঠিক। ইস্টার্ন জোনে আমরাই শুধু তৈরি করছি। কিন্তু একথা কেন জিজ্ঞেস করলে?