বিশ্বাস উত্তেজিত হয়ে বলে-ঝুলবে কেন? আজকাল কেউ ঝোলে না। ধরা পড়লে খাওয়াবে কিছু।
মনোরম শ্বাস ছেড়ে বলে–খাওয়াবে আর খাওয়াবে। কত খাওয়াবে মশাই? এত খাওয়ালে নিজে খাবে কী? তার ওপর ফলস রসিদ ধরা পড়লে ক্রিমিনাল কেস হয়ে যায়।
বিশ্বাস ঝুঁকে বলল–আপনি আমার ইয়ে বোঝেন। আমি আরও তিনটে কোম্পানি চালাই ব্যানার্জি। সেগুলো অনেক বেশি রিস্কি। বলে উত্তেজিত বিশ্বাস ধবধবে সাদা রুমালে ঘেমো কপালটা মুছল। তারপর হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে বলল–আপনার ওই একটা বড় বদ স্বভাব। পেসিমিস্টিক অ্যাটিচুড। ভেরি ব্যাড।
মনোরম নিরুৎসাহের হাসি হাসে।
বিশ্বাস বলল–একটা কথা মনে রাখবেন। না সুন্দরী বউ যার, হয় না যার শালা, তার ঘরে অলক্ষ্মী অচলা।
-মানে?
-মানে হচ্ছে ‘না’ কথাটা যার সুন্দরী বউয়ের মতো প্রিয়, ‘হয় না’ কথাটাকে যে নিজের শালার মতো খাতির-যত্ন করে, সে কখনও সাকসেসফুল হতে পারে না।
মনোরম বালকের মতো হাসে। এমন সে অনেকদিন হাসেনি।
বিশ্বাস স্মিতমুখে বলে–এক মহাপুরুষের কথা। আমি অবশ্য বাজে ব্যাপারে প্রয়োগ করলাম।
-ঠিক আছে। মনোরম বলল–আমি দেখব।
–টুয়েন্টি ফাইভ?
–টুয়েন্টি ফাইভ।
বিশ্বাস আত্মতৃপ্তিতে হাসল। বলল-এটা আমার সাইড বিজনেস। না টিকলেও ক্ষতি নেই। বন্ধুবান্ধবদের বলছি, যদি কাউকে কিছু টাকা পাইয়ে দিতে পারি। আপনার অবস্থা তো ভাল যাচ্ছে না ব্যানার্জি।
মনোরম মাথা নেড়ে বলল–না।
বিশ্বাস দুঃখিত গলায় বললস্যাট উওম্যান?
মনোরম শ্বাস ছেড়ে বলে–দ্যাট উওম্যান।
বিশ্বাস গম্ভীর চিন্তিত মুখে বলে–ব্যানার্জি, বউ বিশ্বাসী না হলে ভারী মুশকিল। আমাদের মতো বয়সে পুরুষ মানুষের বউ ছাড়া আর বিশ্বস্ত কেউ তেমন থাকে না। আমার সব কিছু বউয়ের নামে। বাড়ি, গাড়ি এভরিথিং। বউটা দজ্জালও বটে, কিন্তু ফেইথফুল।
মনোরম টাকরা দিয়ে নড়ন্ত জিভটাকে চেপে ধরে থাকে। রক্তের ঝাপটা তার মুখে লাগে। কান দুটো গরম হয়ে ওঠে।
বিশ্বাস সেটা খেয়াল করল না। বলল-দুপুরে বিজনেস পিক আওয়ার্স বলে বিয়ার বেশি খাই না। তারপর সন্ধে হলে স্কচ থেকে শুরু করে দেশি কত কী গিলব তার ঠিক নেই। রাত দশটায় যখন ফিরব বউ ফারনেস হয়ে আছে। কলিং বেল টিপে আধতলা সিঁড়ি নেমে রেলিংয়ের পাশে লুকিয়ে বসে থাকি। বউ দরজা হাট করে খুলে দেয়, তারপর উঁকিঝুঁকি না দিয়ে ভিতরে অপেক্ষা করে। আমি তখন আবার উঠে আসি। ভিতরে ঢুকি না। বাইরে থেকে এক পাটি জুতো পা থেকে খুলে ভিতরে ছুঁড়ে দিয়ে অপেক্ষা করি। যদি জুতোটা খুব জোরে ঘর থেকে ব্যাক করে আসে তবে বুঝি বউ আজ আপসে আসবে না, জোর খিচান হবে। যদি জুতো ব্যাক না করে তবে বুঝি বউ খুব খিচান করবে না, বউ বড় জোর বাপ-মা তুলে দু-একটা গালাগাল দেবে।
মনোরম এক নাগাড়ে হাসছে। গাল ব্যথা হয়ে গেল। বলল–থামুন মশাই, বিষম খাব।
ব্যাপারটা কিন্তু একজ্যাক্টলি এরকম। বাড়িয়ে বলছিনা। যেদিন খিচান হয় সেদিন বউ মারধোরও করে। চুল ধরে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে যায়, তারপর দরজা বন্ধ করে…
বাথরুমে কেন?
–বাঃ, ছেলেমেয়েরা রয়েছে না! বলে বিশ্বাস সুখী গৃহস্থের মতো হাসে। বিশ্বাসের চেহারাটা যদিও মা দুর্গার পায়ের তলাকার অসুরটার মতোইকালো, প্রকাণ্ড রোমশ এবং বিপজ্জনক, তবু এখন তার মুখখানা একটা গার্হস্থ্য সুখের লাবণ্যে ভরে গেল। বলল–কিন্তু তবু আমার বউ ফেইথফুল। লাইক এ বিচ। নানারকম মেয়েলি রোগে ভুগে শরীরটা শেষ করেছে। আমি আবার একটু বেশি সেক্সি, তাই আমাকে ঠিক এন্টারটেন করতে পারে না, অ্যান্ড আই গো টু আদার গার্লস।
বউ জানে?
বিশ্বাস মৃদুস্বরে বলে–জানে মানে আন্দাজ করে। তবে চুপচাপ থাকে। ভেরি কনসিডারেট। এটা তো ঠিক যে সে শরীরটা দিতে পারে না। তাই শরীর আমি বাইরে থেকে কিনি। কিন্তু তা ছাড়া আমিও ফেইথফুল।
বিশ্বাস মৃদুস্বরে বললেও ওর ফিসফাস কথা দশ হাত দূর থেকে শোনা যায়। মনোরম আশপাশের টেবিলে একটু চেয়ে দেখে নিল। তারপর বলল–আপনি সুখী?
-খুব। আপনার কেসটা কী?
বনত না।
–কেন?
বুঝতে পারতাম না। তবে আমাদের দুজনেরই ছিল পরস্পরের প্রতি এক রকমের রিপালশান। সেটা বেঙেবেড়ে একসময়ে কানেকশন কেটে গেল।
-স্যাড।
মনোরম মৃদু একটু হাসল। বলল–আরও স্যাড যে, আমিও অন্য সকলের মতো বউয়ের নামে টাকা রাখতাম, জমি কিনেছিলাম, লকারেও কিছু ছিল। সেগুলো হাতছাড়া হয়ে গেল।
-কিছু রিয়ালাইজ করতে পারেননি?
–না। আমি প্রায় ব্যাঙ্করাপ্ট। আমার সম্বন্ধী দুদে অ্যাডভোকেট। ডিভোর্সের সময়ে মাসোহারা ও বন্দোবস্ত করে নিয়েছে। বিশ্বাস, আমার একটা ওপেনিং দরকার। যে কোনও একটা কাজ। আমি আবার দাঁড়াতে চাই।
বিশ্বাস গম্ভীর এবং সমবেদনার মুখ করে বলল–দেখব ব্যানার্জি, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব।
-দেখবেন।
বিয়ার শেষ করে দুজনেই উঠেছিল। বাইরে তখন বৃষ্টি থেমে গেছে। ভেজা পার্ক স্ট্রিটটাকে কুচকুচে কালো দেখাচ্ছিল। জলে ছায়া ফেলে নিথর দাঁড়িয়ে ছিল বিশ্বাসের গাড়িখানা। পুরনো মরিস। তার সাদা রংটা থেকে মেঘভাঙা বোদ পিছলে আসছে।
বিশ্বাসের গাড়িতে একটা লিফট পেতে পারত মনোরম। কিন্তু রেস্তরাঁর দরজায় বিশ্বাস তার একজন চেনা লোক পেয়ে গেল হঠাৎ।
অবিকল টেলিফোনে কথা বলার মতো বিশ্বাস চেঁচিয়ে বলল–হ্যালো! অরোরা, ইজনট ইট? বিসোয়াস হিয়ার।