লজ্জায় মাথা নামিয়ে তিথি বলে, করতাম।
অমিত কী বুঝল কে জানে, তবে হালছাড়া ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলে, যাকগে, শোনো। তোমাদের প্রবলেমটা নিয়ে আমি অনেক চিন্তাভাবনা করেছি। দেখলাম, তোমাদের পক্ষে দত্ত রিলায়েন্স চালানো অসম্ভব। তোমাদের টেকনিক্যাল নো-হাউ নেই। যদি রাজি থাকো তাহলে আমরা এ কোম্পানিটা কিনে নিতে পারি।
কিনে নেবেন?
উইথ অল অ্যাসেটস অ্যাণ্ড লায়াবিলিটিজ। এটার বদলে তোমাদের বাড়ির লোনটা ছেড়ে দেওয়া হবে।
অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে তিথি বলে, কী বলছেন!
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অমিত বলে, এর জন্য বাবা কাকা জ্যাঠার সঙ্গে তুমুল হয়ে গেছে আমার। তবে শেষ অবধি দে এগ্রিড।
আমাদের বাড়ি ছাড়তে হবে না তাহলে?
অমিত হাসল, না। তবে তুমিও আর দত্ত রিলায়েন্সের মালিক থাকবে না। ঠিক আছে?
তিথি মাথা নেড়ে বলল, ঠিক নেই। আপনি দয়া করছেন।
বেশ পাকা হয়েছ তো। দয়া নয়, দত্ত রিলায়েন্স খুব সিংকিং কনসার্ন নয়। কম্পিউটারের তথ্য বলছে, কিছু অ্যাসেট এখানে-সেখানে আছে। কুড়িয়ে-বাড়িয়ে একটা কনসিডারেল অ্যামাউন্ট দাঁড়াতেও পারে। এগুলো রিয়ালাইজ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের পাওয়ারফুল অর্গানাইজেশন কতৃত্ব হাতে নিলে সেটা অনায়াসে পারবে। কাজেই দয়া বলে ভাববার কিছু নেই। ইটস এ সিম্পল বার্টার।
আমি একটা নব্বই হাজার টাকার চেক পেয়েছি। কী করব?
আমরা কোম্পানি পারচেজ করার আগে তুমি যা পাবে তা তোমার। আমরা পুরোনো পেমেন্ট দাবি করব না। সেরকম নিয়ম নেই।
আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না। মিথ্যুক। এটাও দয়া।
মোটেই নয়। অমিত গম্ভীর হয়ে বলে, ইন ফ্যাক্ট আরও দু-একটা মোটা পেমেন্ট তুমি কয়েকদিনের মধ্যেই পেয়ে যাবে। ব্যাংকে জমা করে দিও। আজ চলি, অনেক কাজ আছে।
অমিত উঠে পড়ল। দরজা খুলল।
তিথি তার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বলল, আই ডোন্ট ওয়ান্ট ইওর মানি।
বিরক্ত অমিত বলে, তাহলে কী চাও?
দাঁতে দাঁত পিষে চোদ্দো বছরের কিশোরী তিথি তীব্র চাপা স্বরে বলল, আই, ওয়ান্ট ইউ! ইউ! ইউ!
হোয়াট! বলে প্রকান্ড হাঁ করে চেয়ে রইল অমিত।
দরজাটা সজোরে তার মুখের ওপর বন্ধ করে দিল তিথি। তারপর হাসতে লাগল খিলখিল করে একা ঘরে। পর মুহূর্তেই চোখে জল এল।
পাগল! পাগল! সে কী পাগল!
.
১১.
বাড়ির টেলিফোন ঠিক হয়ে গেছে দু-দিন হল। একটু রাতের দিকে তিথি ফোনটা করল কয়েকদিন পর।
আমি তিথি।
মাই গড! চোদ্দো বছরের মেয়ে!
প্রায় পনেরো। আমি একটা কথা জানতে চাই।
কী কথা?
উইল ইউ বি ওয়েটিং ফর মি?
আরে পাগল। আমার বয়স কত জান?
উইল ইউ বি ওয়েটিং?
তোমার এটা হল বেড়ে ওঠার বয়স। হাসো, ফুর্তি করো, লেখাপড়া, নাচগান, খেলাধুলো এই সব নিয়ে থাকো। দেখবে ওসব ভাবাবেগ কেটে যাবে।
উইল ইউ বি ওয়েটিং ফর মি?
শোনো তিথি, তোমার সামনে, বিচিত্র জীবন পড়ে আছে। লাইফ ইজ ভেরি ইন্টারেস্টিং! এখনও তো শাড়িও ধরোনি তুমি। কত কী হওয়ার আছে, জানার আছে, পাওয়ার আছে জীবনে।
উইল ইউ বি ওয়েটিং?
ইয়ে মানে, উঃ, তোমাকে নিয়ে একদম পারা যায় না। খুব দুষ্টু মেয়ে তো!
উইল ইউ বি ওয়েটিং?
আচ্ছা, সেটা দেখা যাবে। এখন লেখাপড়ায় মন দাও। নাচ শেখো না কেন? তুমি ভালো দৌড়োও না? খুব ভালো। দৌড়োও, নাচো, গাও।
উইল ইউ বি ওয়েটিং?
আচ্ছা মুশকিল। এটুকু বয়সে এখনই কেন–?
উইল ইউ বি ওয়েটিং?
আচ্ছা, আচ্ছা বাবা, আচ্ছা।
ওভাবে নয়। আরও ভালো ভাবে। আবার জিজ্ঞেস করছি, উইল ইউ বি ওয়েটিং?
অমিত একটু চুপ করে থাকে। তারপর সামান্য নরম গলায় বলে, আই উইল বি ওয়েটিং।