চোখ পাকিয়ে পরমা বলে, হাসবে কেন?
তোমার চ্যালেঞ্জ-এর কথা শুনে। মেয়েটা কে জানো?
কে? সেটাই তো জানতে চাইছি।
মিস ক্যালকাটা ছিল, এখন মিস ইন্ডিয়া। হয়তো মিস ইউনিভার্স হয়ে যাবে।
ইল্লি। অত সোজা নয়। এবারের মিস ক্যালকাটা রুমা চ্যাটার্জি আমার বান্ধবীর বোন।
তুমি একজন সাংবাদিককে সংবাদ দিচ্ছ?
পরমা হেসে ফেলে বলে, আচ্ছা হার মানলাম। রুমা গতবার হয়েছিল।
এ এবার হয়েছে।
সত্যি?
সত্যি।
নাম কী?
টুপু।
যাঃ, টুপু একটা নাম নাকি? ডাকনাম হতে পারে। পোশাকি নাম কী?
তোমার বয়স কত হল পরমা?
আহা, বয়সের কথা ওঠে কীসে?
ওঠে হে ওঠে, ইউ আর নট কিপিং উইথ দা টাইম। তোমার আমলে পোশাকি নাম আর ডাকনাম আলাদা ছিল। আজকাল ও সিস্টেম নেই। এখন ছেলেমেয়েদের একটাই নাম থাকে। পন্টু, ঝন্টু, পুসি, টুপু, রুণু, নিনা…
থাক থাক, নামের লিস্টি শুনতে চাই না। মেয়েটার সঙ্গে আপনার রিলেশন কী?
পৃথিবীর তাবৎ সুন্দরীর সঙ্গে আমার একটা রিলেশন। দাতা এবং গ্রহীতার।
তার মানে?
অর্থাৎ তার সৌন্দর্য বিতরণ করে এবং আমি তা আকণ্ঠ পান করি।
আর কিছু না?
ধৃতি মাথা নেড়ে করুণ মুখ করে বলে, তোমার চেহারাখানা একেবারে ফেলনা নয় বটে, কেউ কেউ সুন্দরী বলে তোমাকে ভুলও করে মানছি, কিন্তু আজ অবধি বোধহয় ভুল করেও তোমাকে কেউ বুদ্ধিমতী বলেনি!
পরমা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, এ মা, কী সব অপমান করছে রে মুখের ওপর!
ভাই বন্ধুপত্নী, দুঃখ কোরো না, সুন্দরীদের বুদ্ধিমতী না হলেও চলে। কিন্তু এটা তোমার বোঝ উচিত ছিল যে, একজন যৎসামান্য বেতনের সাব-এডিটরের সঙ্গে মিস ক্যালকাটার দেবী ও ভক্ত ছাড়া আর কোনও রিলেশন হতে পারে না!
খুব পারে। নইলে ফোটোটা আপনার কাছে এল কী করে?
সে অনেক কথা। আগে তোমার ওই বাহনটিকে এক কাপ জমাটি কফি বানাতে বল।
বলছি। আগে একটু শুনি।
আগে নয়, পরে। যাও।
উঃ! বলে পরমা গেল।
পরমুহূর্তেই ফিরে এসে বলল, কফি আসছে, বলুন।
মেয়েটাকে তোমার কেমন লাগছে?
মন্দ কী?
না না, ওরকম ভাসা-ভাসা করে নয়। বেশ ফিল করে বলো। ছবিটার দিকে তাকাও, অনুভব করো, তারপর বলল।
নাকটা কি একটু চাপা?
তাই মনে হচ্ছে?
ফোটোতে বোঝা যায় না অবশ্য। ঠোঁটদুটো কিন্তু বাপু, বেশ পুরু।
আগে কহো আর।
আর মোটামুটি চলে।
হেসে ফেলে বলে, বাস্তবিক মেয়েরা পারেও।
তার মানে?
এত সুন্দর একটা মেয়ের এতগুলো খুঁত বের করতে কোনও পুরুষ পারত না।
পরমা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, ইঃ পুরুষ! পুরুষদের আবার চোখ আছে নাকি? মেয়ে দেখলেই হ্যাংলার মতো হামলে পড়ে।
সব পুরুষই হ্যাংলা নয় হে বন্ধুপত্নী। এত পুরুষের মাথা খেয়েছ তবু পুরুষদের এখনও ঠিকমতো চেনোনি।
চেনার দরকার নেই। এবার বলুন তো ফোটোটা সত্যিই কার?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধৃতি বলে, আগে আমার কথা একটু-আধটু বিশ্বাস করতে, আজকাল বিশ্বাস করাটা একদম ছেড়ে দিয়েছ।
আপনাকে বিশ্বাস! ও বাবা, তার চেয়ে কেউটে সাপ বেশি বিশ্বাসী। যা পাজি হয়েছেন আজকাল।
তা বলে সাপখোপের সঙ্গে তুলনা দেবে?
দেবই তো। সব সময় আমাকে টিজ করেন কেন?
মুখ দেখে তো মনে হয় টিজিংটা তোমার কিছু খারাপ লাগে না।
লাগে না ঠিকই, তা বলে সবসময়ে নিশ্চয়ই পছন্দ করি না। যেমন এখন করছি না। একটা সিরিয়াস প্রশ্ন কেবলই ইয়ারকি মেরে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বলে পরমা কপট গাম্ভীর্যের সঙ্গে একটা কটাক্ষ করল।
ধৃতি নিজের বুকে দুহাত চেপে ধরে বলল, মর গয়া। ওরকম করে কটাক্ষ কোরো না মাইরি। আমার এখনও বিয়ে হয়নি, মেয়েদের কটাক্ষ সামাল দেওয়ার মতো ইমিউনিটি নেই আমার।
খুব আছে। কটাক্ষ কিছু কম পড়ছে বলে মনে তো হয় না। আগে মেয়েদের ছবি ঘরে আসত না, আজকাল আসছে।
আরে ভাই, মেয়েটার ফোটো নয়। মিস ক্যালকাটা অ্যান্ড মিস ইন্ডিয়া। এর ওপর একটা ফিচার হচ্ছে আমাদের কাগজে। আমাকেই এর ইন্টারভিউ নিতে হবে। তাই…
পরমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, এ যদি মিস ইন্ডিয়া হয়ে থাকে তবে তো খেদি-পেঁচিদের যুগ এল।
কফি এসে যেতে দুজনেই একটু ক্ষান্ত দিল কিছুক্ষণ। কিন্তু পরমা চেয়ারে বসে ঠ্যাং দোলাতে দোলাতে খুব দুষ্ট চোখে লক্ষ করছিল ধৃতিকে। ধৃতি বলল, তুমি কফি খেলে না?
আমি তো আপনার আর আপনার বন্ধুর মতো নেশাখোর নই।
উদাস ধৃতি বলল, খেলে পারতে। কফিতে বুদ্ধি খোলে। বিরহের জ্বালাও কমে যায়।
আপনার মাথা। যাই বাবা, ঘরদোর সেরে আবার ফিরে যেতে হবে।
পরমা উঠল এবং দরজার কাছ বরাবর গিয়ে হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে বলল, আচ্ছা, একটা কথা বলব?
বলে ফেলো।
এই যে আমার স্বামী দিল্লি গেছে বলে আমাকে ফ্ল্যাট ছেড়ে বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতে হচ্ছে, এটার কোনও অর্থ হয়?
ধৃতি একটু অবাক হয়ে বলে, এর মানে?
পরমা বেশ তেজের গলায় বলে, থাক আর ন্যাকামি করতে হবে না। সব বুঝেও অমন না বোঝার ভান করেন কেন বলুন তো! আমি বলছি, রজত এখানে নেই বলে আমার এই ফ্ল্যাটে থাকা চলছে না কেন?
ধৃতি অকপট চোখে পরমার দিকে চেয়ে বোকা সেজে বলে, আমি আছি বলে।
আপনি থাকলেই বা কী? আমরা দুজনেই থাকতে পারতাম। দিব্যি আড্ডা দিতাম, রান্না করতাম, বেড়াতাম।
ও বাবা, তুমি যে ভারী সাহসিনী হয়ে উঠেছ।
না না, ইয়ারকি নয়। আজকাল খুব নারীমুক্তি আন্দোলন-টন হচ্ছে শুনি, কিন্তু মেয়েদের এত শুচিবায়ু থাকলে সেটা হবে কী করে? পুরুষ মানেই ভক্ষক আর মেয়ে মানেই ভক্ষ্য বস্তু, এরকম ধারণাটা পালটানো যায় না?