ধৃতি উঠতে যাচ্ছিল। কালীবাবু হাত তুলে থামিয়ে ফের বললেন, সিনেমায় নামাটা তেমন কোনও ব্যাপার নয়। ভেবো না যে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই আমি তাকে সিনেমায় নামাবার জন্য পাগল হই।
বুঝলাম।
কালীবাবু, একটু হেসে বলেন, আসলে জয়ন্তই আমাকে ব্যাপারটা বলছিল গতকাল। তখন থেকেই ভাবছিলাম তোমাকে ডেকে একটু ওয়ার্নিং দিই।
ওয়ার্নিং কেন?
তুমি কাঁচা বয়সের ছেলে, কোথায় কোন ঘুচক্করে পড়ে যাবে। মেয়েছেলে জাতটা যখন ভাল থাকে ভাল, যখন খারাপ হয় তখন হাড়বজাত।
তাই বলুন। জানতেন।
জানতাম। আর এও বলি যে টুপুর মা ফের তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
তা করবে।
তুমি একটু রসের কথা-কথা বোলো। সিমপ্যাথি দেখাবে খুব। যদি দেখা করতে চায় তো রাজি হয়ে যেয়ো।
আচ্ছ।
ধৃতি উঠল।
৪. জয় গেল দিল্লি
০৪.
বুধবার জয় গেল দিল্লি। স্বভাবতই একা বাড়িতে ধৃতি আর পরমার থাকা সম্ভব নয়। ধৃতির যাওয়ার জায়গা নেই তেমন। পরমার আছে। তাই পরমা গেল বাপের বাড়ি। সেই সঙ্গে ছুঁড়ি ঝিটাকেও নিয়ে গেল। গোটা ফ্ল্যাটে ধৃতি একা।
অবশ্য ধৃতি আর কতটুকুই বা ফ্ল্যাটে থাকে! তার আছে অফিস, আড্ডা, ফিচার লেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে ঘুরে বেড়ানো। রাতে নাইট ডিউটি নেই বলে শুধু সেই সময়টুকু সে ফ্ল্যাটে থাকে।
রাত নটা নাগাদ ধৃতি অফিসে একটা বড় পলিটিক্যাল কপি লেখা শেষ করল। খুব পরিশ্রম গেছে। এইবার ছুটি। চলে যাওয়ার আগে সে এর ওর তার সঙ্গে কিছু খুনসুটি করে রোজই। আজ বুড়ো ডেপুটি নিউজ এডিটার মদনবাবুর সঙ্গে ইয়ার্কি করছিল।
ঠিক এইসময়ে চিফ সাব-এডিটার ডেকে বললেন, তোমার ফোন হে!
ধৃতি হ্যালো শুনেই কেঁপে ওঠে একটু। টুপুর মা।
বলুন। ধৃতি বলে।
চিঠি তো পেয়েছেন!
পেয়েছি।
ছবিটা দেখলেন?
হু।
কেমন?
টুপু খুবই সুন্দরী।
আপনাকে তো বলেইছিলাম যে টুপুকে সবাই মিস এলাহাবাদ বলত। আমার টুপু ছিল সাংঘাতিক সুন্দরী।
হু।
খবরটা কবে ছাপা হবে?
ধৃতি একটু ইতস্তত করে বলে, দেখুন এসব খবর ছাপার এক্তিয়ার তো আমাদের নেই।
আপনি ইচ্ছে করলেই পারেন।
পারি না। দোহাই! প্লিজ! আমার টুপুআপনাদের কাছে কিছুই না জানি। কিন্তু ওর খবরটা ছাপা হলে আমি বড় শান্তি পাব। মায়ের ব্যথা তো বোঝেন না আপনারা!
শুনুন। প্রথম কথা, টুপু যদি নামকরা কেউ হত তবে খবরটা ছাপা সহজ হয়ে যেত। যদি খুনের কেস আদালতে উঠত তাও অসুবিধে হত না। কিন্তু শুধু আসাম্পশনের ওপর তো আমরা কিছু করতে পারি না।
দুচার লাইনও নয়?
না। তবে আপনি ইচ্ছে করলে বিজ্ঞাপন দিয়ে খবরটা ছাপতে পারেন। কিন্তু তাতে খুনের উল্লেখ থাকলে চলবে না।
কিন্তু আমি যে সবাইকে টুপর খুনের খবরটাই জানাতে চাই।
তাহলে আপনি পুলিশের গ্রুতে প্রসিড করুন। যদি মামলা হয় তাহলে আমি খবরটা ছেপে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। আর নইলে খুনের যথেষ্ট এভিডেনস চাই। এলাহাবাদের লোকাল কাগজে কি খবরটা বেরিয়েছিল?
না।
তবে আমাদের কিছু করার নেই। আপনি পুলিশকে কিছু জানাননি?
জানিয়েছি, কিন্তু তারা কোনও গা করছে না।
কেন?
তারা এটাকে খুন বলে মনে করছে না যে তারা লাশ চায়।
লাশ! কেন, লাশ পাওয়া যায়নি?
না। কী করে যাবে? টুপুকে যে একটা পাহাড়ি নদীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
কোথায়?
টুপুর মা একটু চুপ করে থামে। তারপর দ্বিধাগ্রস্ত স্বরে বলেন, কোথায় তা আমি ঠিক জানি না।
তাহলে খুন বলে ধরে নিচ্ছেন কেন? সাক্ষী আছে?
না।
তবে কী করে জানলেন?
ওরা কলকাতায় বেড়াতে গিয়েছিল। সেখান থেকে যায় আরও অনেক জায়গায়। সবশেষে ঘটনাটা ঘটে মাইথনে।
মাইথনে?
খুব নির্জন জায়গা। ওরা ফরেস্ট বাংলোতে থাকত।
কারা? টুপু আর কে?
ওঃ, সে ঠিক জানি না।
না জানলে কী করে হবে? টুপু কার সঙ্গে গিয়েছিল তা আপনার খোঁজ নেওয়া উচিত।
কী করে নেব? আমি অনাথা বিধবা। টুপুর তো বাবা নেই, ভাইবোন নেই। টুপু একটিমাত্র। তবে আমাদের টাকা আছে। অনেক টাকা। খবরটা ছাপানোর জন্য যদি টাকা খরচ করতে হয় তো আমি পিছুপা হব না। বুঝলেন? টুপুই যখন নেই তখন এত টাকা আমার কোন কাজে লাগবে? আমি আপনাকে খবরটা ছাপানোর জন্য হাজার টাকা দিতে পারি। রাজি?
না। ধৃতি গম্ভীর হয়ে বলে, টাকা থাকলে আপনি বরং তা সৎ কাজেই ব্যয় করুন, খবরটা ছাপা গেলে আমি এমনিতেই ছাপতাম।
কিছুতেই ছাপা যাবে না?
ধৃতি হঠাৎ প্রশ্ন করে, আপনি কোথা থেকে কথা বলছেন?
টুপুর মা খানিক নিস্তব্ধ থেকে বললেন, কেন বলুন তো?
এলাহাবাদ থেকে কি?
আবার খানিক চুপচাপ থাকার পর টুপুর মা বলেন, না।
তবে কি কলকাতা থেকে?
হ্যাঁ। আমি কাল কলকাতায় এসেছি।
ধৃতি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আপনার চিঠিটাও কিন্তু কলকাতা থেকে ডাকে দেওয়া হয়েছিল। যদিও চিঠিতে ডেটলাইন ছিল এলাহাবাদের।
টুপুর মা লজ্জার স্বরে বলেন, সে একটা কাণ্ড। আমার একজন চেনা লোককে চিঠিটা ডাকে দিতে দিই। সে সেইদিনই কলকাতা যাচ্ছিল। তাই একেবারে কলকাতায় গিয়ে তাকে দিয়েছে। কিছু মনে করেছিলেন বোধহয়।
না, মনে কী করব? এরকম হতেই পারে।
আপনি হয়তো কিছু সন্দেহ করেছিলেন?
বিব্রত ধৃতি বলে, না না।
আমি কলকাতায় এসেছিলাম টুপুর ব্যাপারেই। টুপুকলকাতায় কোথায় ছিল তা আমি জানি না। কিন্তু সম্ভব-অসম্ভব স্ব জায়গায় খোঁজ নিচ্ছি। কেউ কিছু বলতে পারছে না।