বিষ্ণুপদ ফিসফিস করে বলে, বড় ইচ্ছে করে মা।
যখন ছোটটি ছিলি, যখন শুধু মায়ের ন ছিলি, তখন মায়ের বুকেই জায়গা হয়ে যেত। এখন তো কত কী হয়েছিস বাছা। বউয়ের স্বামী, ছেলেপুলের বাবা, জামাইয়ের শ্বশুর। কেমনধারা সব হয়ে যায় বল তো!
বিষ্ণুপদ টর্চ জ্বেলে জেলে ঘরখানা দেখে। কুসুমপুরে তার পাকা ঘরবাড়ি, খেতখামার, টাকা পয়সা। টর্চের আলোয় সে তার সব ঐশ্বর্যের অর্থহীনতা দেখতে পায় যে, একটা কুকুর দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে গেল। এদিকটায় বেড়া নেই, দরজার ঝাঁপ নেই। বিষ্ণুপদ টর্চটা নিবিয়ে আর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
মা, তুমি শুয়ে পড়ো! আমি কাছটিতে বসে থাকি।
ঘুম কি আসে বাবা! কতবার ঘুম ভেঙে উঠে উঠে দেখি। ওই লেবুঝোপের দিকটায় নিশুতরাতে তোর বাবা আসে, জ্যাঠা আসে, আরও কারা সব আসে যেনা ও বিষ্ণু, একটু মা বলে ডাক তো!
মা! মাগো! এবার শুয়ে একটু ঘুমোও।
তুই কী করবি? কিছু খাসনি তো! খিদে পায়নি?
না মা। বাস থেকে নেমে হোটেলে খেয়ে নিয়েছি নাটাগড়ে।
তুমি এবার ঘুমোও।
পালাবি না তো ঘুমোলে? ও বিষ্টু!
পালাব না।
আজ বড় ঘুম জড়িয়ে আসে কেন চোখে? বুড়ি ভাল করে বালিশে মাথা না রাখতেই রাজ্যের ঘুম নেমে আসে চোখে। শরীরটা মুড়ে একটুখানি হয়ে বুড়ি আজ ঘুমোয়। বুকটা ঠাণ্ডা লাগে বড়। বিষ্ণু এসে গেছে। বুড়ির তবে মুখাগ্নি হবে, শ্রাদ্ধ হবে। যমরাজের কাছে গিয়ে আর হেনস্থা হতে হবে না।
বিষ্ণুপদ টর্চ জ্বেলে দেখতে পেল, তার মায়ের মুখে ব্যথা বেদনার অনেক আঁকিবুকি, গভীর সব রেখা। তবু ঠোঁটে একখানা কী সুন্দর ফোকলা হাসি ফুটে আছে।