হারুন : হিমাকতের শাস্তি দেব বলে।
মেহেরজান : সে শাস্তি ত অনেক পেয়েছে। আজ এখনই ওকে কতল করুন। হুকুম দিন, মরকে।
হারুন : তোমার পরামর্শে হবে না, মেহেরজান। আজো ও কথা বলুক, ওর সব অপরাধ আমি মাফ করে দেব।
মেহেরজান : তাতারী, কথা বল, জবাব দাও। খোদ্ আমিরুল মুমেনীন ওয়াদা করেছেন। কথা বল। তোমার সমস্ত শরীর জখমে-খুনে জারেজার। এই জর্জর দেহের যন্ত্রণা আর কেন সহা করবে? কথা বল।
(তাতারী নিরুত্তর)
হারুন : হাহ্ হা। জবাব আদায় কর, মেহেরজান।
মেহেরজান : তাতারী, খোদার ওয়াস্তে–একবার কথা বলা। বল… [হারুনর রশীদ হাসিতে লাগিলেন। হাসি থামিলে] জাঁহাপনা, ওকে কতল করুন। ওর এই কষ্ট আর সহ্য করা যায় না। হুকুম দিন মশ্রুরকে।
হারুন : না, মেহেরজান। কতল আমি ওকে করব না। জীবনকে যে পাশার ঘুটি বানাতে পারে এত সহজে, তাকে হত্যা করব না। তিলে তিলে দগ্ধে দগ্ধে—
মেহেরজান : না, জাঁহাপনা, এত নিষ্ঠুর হবেন না। দয়া করুন।–
[নতজানু]
আমি আপনার কাছে দয়া ভিক্ষা চাইছি, ওকে কতল করুন।
হারুন : না, না–তা হবে না।
মেহেরজান : হবে না?
হারুন : না।
মেহেরজান : (উদ্ভ্রান্ত) হবে না… তোতারীর দিকে অগ্রসর কথা বল, তাতারী। তুমি এমন নির্বোধ কেন? স্বপ্নভাঙার পর স্বপ্নে-দেখা ধন-দৌলত হারানোর শোকে কেউ কোনদিন কাঁদে নাকি–এক নির্বোধ ছাড়া। নিজেকে কেন এইভাবে চুরমার করে ফেলছ? কথা বল। আমিরুল মুমেনীন ওয়াদা করেছেন… কথা বলো … আমি তোমার দিকে চেয়ে রইলাম, কান পেতে রইলাম…
[তাতারী নিরুত্তর। খলিফা হাসিয়া উঠিলেন। হাসি থামার পর, মেহেরজান ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়, একদম তাতারীর কাছে বালুভূমির উপর] কথা বলো, আমি অনুরোধ করছি। কথা বলো….
তুমি যা বলতে, তুমি কি এত যন্ত্রণা বুকে আজও তাই মনে রেখেছ। তুমি বলতে, “মেহেরজান, গোলামের মহব্বৎ আর এক আলাদা চিজ। তা। আমির-ওমরার মহব্বৎনয়। তারা দৌলতের কদর বোঝে। আর দৌলতের বড় গুণ হল বিনিময় আর হাতফেরী হওয়া। হস্তান্তর ছাড়া তার গুণ প্রকাশ পায় না। আমির-ওমরার মহব্বৎ এই হাতফেরীর মহব্বৎ। গোলামের প্রেম ধ্রুবতারার মত স্থির–আকাশের একটি প্রান্তে একাকী মৌন–অবিচল–রোরুদ্যমান) তুমি তেমনই অবিচল আছ। কিন্তু আমি… আমি ত বিনিময়ের ভাটিতে সিদ্ধ হয়ে গেলাম। আর বান্দী থলািম না। কোড়াঘাতের এত ব্যথা বয়েছ, এস মুছিয়ে দিই মুছিয়ে নিই–
[মেহেরজান হস্ত প্রসার মাত্র]
হারুন : শান্ত্রী শান্ত্রী—
[দুই প্রহরীর প্রবেশ]
শান্ত্রী, যা এই বিবি সাহেবকে বাইরে নিয়ে যা।
মেহেরজান : [আর্তস্বর] না, না।
হারুন : সরম করিস নে, প্রহরী। দুইজনে দুই হাত ধর।
[তথাকরণ, টানিতে টানিতে অগ্রসর]
মেহেরজান : [পশ্চাতে মুখ] তোমার যন্ত্রণা মুছে নিতে পারলাম না, তোমার নির্মল দেহ স্পর্শের যোগ্যতা আমার নেই … নাই বা স্পর্শ করলাম এই কলঙ্কিত হাতে [চিৎকার] তাতারী– তাতারী–
[কারাগার হইতে অপসৃয়মান মুখ, শেষবার মেহেরজান ডাকে : তাতারী]
তাতারী : (সেই দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ) মেহেরজান, মেহেরজান (তারপরই) শোন, হারুন রশীদ—
হারুন : বেতমীজ, জাঁহাপনা বল।
মশ্রুর : বেয়াদব। বল্ আমিরুল মুমেনীন।
তাতারী : শোন, হারুনর রশীদ–
হারুন : কোড়াদার মশ্রুর, মশ্রুর, কোড়া চালাও। বেয়াদব, বেয়াদব–
[কোড়া চালাইতে থাকে সেই অবস্থায়]
তাতারী : শোন, হারুনর রশীদ। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব–! কিন্তু—কিন্তু–ক্রীতদাসের হাসি—না–না–না–
[পতন ও মৃত্যু, বেগে আবু নওয়াসের প্রবেশ]
নওয়াস : আমিরুল মুমেনীন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।
[এই খানে পাণ্ডুলিপি ছিন্ন]
অসমাপ্ত